ক্লাসে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পেটাব
ছাত্রীকে ইবি শিক্ষকের হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫০ পিএম, ৭ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:০৭ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিভাগটির শিক্ষার্থী লামিয়া হোসাইন বলেন, দুইদিন ডিপার্টমেন্টে না আসায় আমাকে ক্লাসে সবার সামনে তিনি ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে পেটাতে চেয়েছেন। পরে আমি আমার অবিভাবক নিয়ে গেলে সে এটি অস্বীকার করে কিন্তু ক্লাসের সবাই সাক্ষী।
তিনি আরো বলেন, আমি ২০১৯ সালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটা দিন আমাকে আতঙ্কে কাটাতে হয়েছে। কারন হাফিজ স্যার ক্লাসে এসে কি না কি বলবে, আমাকে অপমান করবে। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কটুক্তি করবেন। কি জামা পড়লাম, কি কথা বললাম, কোথায় গেলাম, কোথায় বাসা নিলাম এসব নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন। নতুন বাসা নেওয়ার সময় জুনিয়র আমাকে সাহায্য করেছে এটা নিয়েও তিনি কটুক্তি করেছেন।
লামিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি বান্ধবীদের সাথে দোকানে বসে চা খেলেও তিনি বলেন আমি নাকি লম্ফঝম্প করছি। কোন মেয়ে লিপিস্টিক দিয়ে আসছে, কোন মেয়ে জিন্সের প্যান্ট পরে আসছে এটা নিয়েও তার সমস্যা। সে একজন শিক্ষক হয়ে মেয়েদেরকে অশ্লীল গালি দেয়। তা সম্মুখে উচ্চারণ করার মতো না।
লামিয়া বলেন, আমার বন্ধুদেরকে রাতের বেলা ডেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বদনাম করা হয়। তারা প্রটেস্ট করার চেষ্টা করলে তাদেরকে কথা শুনানো হয়। আমি নিজ যোগ্যতায় এখানে চান্স পেয়েছি কারো বাপের টাকায় আসিনি। আমি হাফিজের পদত্যাগ চাই সে শিক্ষক হবার কোন যোগ্যতা রাখে না। সে শুধু পারে স্টুডেন্টদের পিছনে লাগতে।
এ নিয়ে আজ সোববার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলাভবন থেকে তার অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দেয়। এতে ক্যাম্পাস হতে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ গামী বাসগুলো প্রায় দেড় ঘন্টা আটকে থাকে। পরে তারা উপাচার্যের নিকট ওই শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানান।
বিভাগটির শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা, ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা, শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, পোশাক নিয়ে কটুক্তি করা, শিক্ষার্থীদের বাবা-মা এবং তাদের রক্তে সমস্যা বলে গালমন্দ করা, বন্ধু-বান্ধব ঘুরাঘুরি করলে তাদের নিয়ে কটুক্তি করতেন, ক্লাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করেন,শিক্ষার্থীদের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মারার হুমকি কিংবা নজরুল ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি, কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল মার্কস কমিয়ে দেওয়া, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করায় হাফিজ স্যার সরাসরি ইনবক্সে হুমকি দেয়, এটেনডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের পারসোনাল লাইফ নিয়ে ক্লাসের সামনে কিংবা সবার সামনে হেনস্থা করাসহ ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে সকলের সামনে জামা কাপড় নিয়ে কথা বলা, নর্তকী, বাজারের মেয়ে ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করারও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এতদিন অভিযোগ শোনার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানের পর তোমাদের অভিযোগ শোনার জায়গা তৈরী হয়েছে। তোমরা লিখিত অভিযোগ দাও। আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে তোমাদের দাবি আদায়ে অন্যের অসুবিধা যেন না হয়। এজন্য গাড়ি আটকিয়ে আন্দোলন না করার অনুরোধ করছি।
দিনকাল/এসএস