কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন ছাড়াই চলছে আইন বিভাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৪ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
আর আইন বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে বার কাউন্সিল থেকেও ছাড়পত্র নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের। যদিও এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়াই বেআইনিভাবে আইন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বিভাগ খোলার জন্য তদারক সংস্থা ইউজিসিতে লিখিত আবেদন জমা দিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। আবেদনের পর এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেয় ইউজিসি। ওই কমিটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো পরিদর্শন ও শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতসহ সার্বিক সক্ষমতা যাচাই করে।
কমিটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সুপারিশ করার পর নতুন বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ইউজিসি। বিভাগের সিলেবাসের অনুমোদনও ইউজিসি থেকে নিতে হয়। ইউজিসির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে কোনো প্রোগ্রাম বা বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বা বিজ্ঞাপন প্রকাশও বিধিসম্মত নয়। তবে ইউজিসির কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়েই আইন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়।
বেআইনিভাবে খোলা আইন বিভাগে গত কয়েক সেশনে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীও ভর্তি করা হয়েছে। এমনকি নিজেদের ওয়েবসাইটে আইন বিভাগের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করছে বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক বছর আগে আইন প্রোগ্রামের অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আইন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি। ইউজিসির অনুমোদনের আগে শিক্ষার্থী ভর্তি কোনোভাবেই আইনসম্মত হয়নি। কেননা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এর বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আইন বিভাগ খোলার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসির পাশাপাশি বার কাউন্সিল থেকে একটি ছাড়পত্রেরও প্রয়োজন হয়।
২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের এক নির্দেশনায় কয়েকটি শর্ত জারি করে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ চালু করতে বার কাউন্সিলের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগবে। এখন পর্যন্ত বার কাউন্সিলের ছাড়পত্রও পায়নি রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও অননুমোদিত বিভাগ পরিচালনার প্রমাণ মেলে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, হোমপেজেই অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে অননুমোদিত আইন বিভাগের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া রয়েছে। এছাড়া একাডেমিক ক্যাটাগরিতে লিগ্যাল স্টাডিজ অনুষদের আওতায় আইন বিভাগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের দাবি ইউজিসির অনুমোদন নিয়েই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য ড. মো. শাহজাহান আলী বলেন, ইউজিসির অনুমোদন নিয়েই আমরা আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। ইউজিসি আমাদের সিলেবাসও অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে বার কাউন্সিলের ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এজন্য গত কয়েকটি সেশনে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছি না। আগের শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস-পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েও দিয়েছে।
উপাচার্যের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় খোঁজ নিলেও ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রবীন্দ্র মৈত্রী নামের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কখনই আইন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি।
তারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সক্ষমতা যাচাই করে প্রোগ্রামের অনুমোদন দেয় ইউজিসি। অনুমোদন পাওয়ার আগে কোনো প্রোগ্রামের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ, ভর্তি কার্যক্রম ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এর দায়ভার ইউজিসি নেবে না।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুমোদিত প্রোগ্রামের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ একাডেমিক কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন জমা দেয়ার পর অনুমোদন পাওয়ার আগেই শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে ক্লাস শুরু করে দেয়। এরপর এসব শিক্ষার্থীকে বেকায়দায় পড়তে হয়। অননুমোদিত প্রোগ্রামে সনদও অবৈধ। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ধরনের প্রতারণা।
রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাদা চোখে দেখলে মনে হবে রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বিধিসম্মত নয়। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখারও অবকাশ রয়েছে।
আমরা আইন বিভাগসহ সাতটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করি। অন্য ছয়টি প্রোগ্রাম খুব দ্রুত হয়ে গেলেও আইন বিভাগ অনুমোদনের একদম শেষ পর্যায়ে বিপত্তি বাধে। এমনকি আমরা শিক্ষক নিয়োগ করে সেই তালিকা ইউজিসিতে পাঠাই। ইউজিসি থেকে আমাদের বলা হয়, আপনাদের সব ঠিক আছে। বার কাউন্সিলের ছাড়পত্র পেলে আপনাদের অনুমোদন দিয়ে দেয়া হবে। যদিও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, গত সাড়ে তিন বছরেও বার কাউন্সিল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। অথচ আমাদের তো শিক্ষকদের বেতন দিতে হচ্ছে। তবে আমরা ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করব না। এখন আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো ফিও নিচ্ছি না।