জুলাইয়েও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : এ বছরও পিইসি পরীক্ষা বাতিলের চিন্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩২ এএম, ২১ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৬ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে করোনা সংক্রমণের হার না কমলে ছুটি ফের বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সরকারি বিধিনিষেধ ও ঈদুল আজহার সঙ্গে মিলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও এক মাস বাড়তে পারে। সে হিসেবে আগামী জুলাইয়েও খুলেছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আজ রবিবার সকালে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মাঝে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। ৩০ জুনের পর ছুটি কতদিন বাড়তে পারে- জানতে চাইলে সচিব জানান, চলতি সপ্তাহ করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকারি বিধিনিষেধ আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২২ বা ২৩ জুলাই ঈদুল আজহা। ৩০ জুনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি পুরো জুলাই মাস দেয়া হতে পারে। সে হিসেবে জুলাই মাসেও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে সেটা জানি। কবে খুলবে তার নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এ মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ এর আগেও দুবার তারিখ ঘোষণার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায়নি। তাছাড়া এই মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। তাই আপাতত কোনো কিছুই বলা সম্ভব না।
জানা গেছে, দেশে চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৩০ জুনের পর স্কুল-কলেজ খোলা হবে নাকি চলমান ছুটি আরও বাড়বে সে বিষয়ে ২৫ জুনের পর সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা প্রতিদিন করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। বর্তমানে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। এই অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলার ঝুঁকি নিতে চায় না মন্ত্রণালয়। গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা দেশের স্কুল-কলেজ ৩০ মার্চ খুলে দেয়া হবে। আর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। কিন্তু এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার সেই ঘোষণা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা কমার পর গত ২৬ মে ফের শিক্ষামন্ত্রী জানান, পর্যায়ক্রমে ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তার এ ঘোষণার পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ায় কয়েকটি জেলায় লকডাউন দেয়া হয়। এরমধ্যে সারাদেশে বাড়তে থাকে সংক্রমণের হার। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর নোটিশ দিয়ে বলেন, এ সময়ে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ী ও কওমি মাদরাসা বন্ধ থাকবে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখি সংক্রমণের কারণে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষাও বাতিলের চিন্তা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একই কারণে গত বছরও এ পরীক্ষা নেয়া হয়নি। পিইসি পরীক্ষায় প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে থাকে।
জানা গেছে, পরীক্ষা বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। আর স্কুল খোলা সম্ভব হলে বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ক্লাসরুমেই পড়ানো হবে। এভাবে তাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করা হবে। মূলত অটোপাস না দেয়ার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও পিইসি-সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে গত বছরের মতো অটোপাস দিতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দিতে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। তাতে অনুমোদন দেয়া হলে গত বছরের মতো পঞ্চম শ্রেণির সকল পরীক্ষার্থীকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে তুলে সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও নানা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ালোখা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাসার কাজ হিসেবে ওয়ার্কসিট পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। সপ্তাহ শেষে সেগুলো জমা নিয়ে মূল্যায়ন করছেন। আমাদের হাতে এখনো অনেক সময় রয়েছে। আশা করি দ্রুত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, দ্রুত আমরা বিদ্যালয় খুলে পাঠদান শুরু করতে পারবো। বিদ্যালয় খুলতে আমরা প্রস্তুতি শেষ করে অপেক্ষা করছি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পিইসি বাতিল হলে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষাও নেয়া হবে না। তবে প্রাথমিকস্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ায় সিদ্ধান্তটি এখনো নিতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একজন কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে দু/একদিনের মধ্যে ওই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। যদি তারা সিদ্ধান্ত জানায় তাহলে এই পরীক্ষাও হবে না।