জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ এএম, ২৮ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ১৫ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ কর্মসূচির কথা জানান।
তিনি বলেন, আগামী ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী। ৩০ মে বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত শোকের একটি দিন। এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান দেশি-বিদেশি চক্রান্তে নিহত হয়েছিলেন। যিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের নানা ক্রান্তিলগ্নে নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বীর দর্পে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নজির স্থাপন করেছেন, তাঁকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে। জাতি যখন নেতৃত্বহীন এবং দিশেহারা অবস্থায় পতিত হয়েছে, তিনি তখনই আবির্ভূত হয়েছেন ত্রাতার ভূমিকায়। দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান এই ক্ষণজন্মা পুরুষকে তাই জাতি এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সেনা সদস্যদের নিয়ে ‘উই রিভোল্ট’ বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি পরের দিন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন। তিনিই আবার ৭৫’র ৭ নভেম্বর অমানিশার অন্ধকার থেকে অস্থির, বিশৃঙ্খল, হতাশাগ্রস্ত ও ষড়যন্ত্রের কবলে নিপতিত জাতিকে রক্ষা করেছিলেন। জাতি পরম নির্ভরতায় দেশের সমস্ত দায়ভার এই ত্রাণকর্তার ওপর অর্পণ করেছিল।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, রাষ্ট্র, জনপদে সকল মানুষের পক্ষেই স্মরণীয় বা বরণীয় হওয়া সম্ভব হয় না। যাঁরা হন তাঁদের সংখ্যা যেমন নিতান্তই কম, তেমনই তাঁরা হয়ে থাকেন বিরল যোগ্যতার অধিকারী। দেশ ও সমাজের কল্যাণে এবং পরিবর্তনে তাঁদের চিন্তা, মনন এবং কর্মকান্ড বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয়, এমনকি আমাদের এ জনপদে স্বীয় বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত এমনই একজন বিরল ব্যক্তিত্ব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার যুদ্ধে সম্মুখ সমরে সশস্ত্র নেতৃত্ব দিয়ে যিনি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছেন, তিনি আবার এই দেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করার জন্য প্রাণপণ করেছেন, সফল হয়েছেন। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা তথা জাতিকে ইস্পাত কঠিন ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ করে সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং শিল্প-কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য, পররাষ্ট্র নীতিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন ধারার সংযোজন করে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার এই রাষ্ট্রনায়ক যুগোত্তীর্ণ-কালোত্তীর্ণ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল শহীদ জিয়ার হাতে গড়া সংগঠন। তাঁর আদর্শ তথা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ১৯ দফা কর্মসূচিকে ধারণ করে এই দল দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং অধিকার আদায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণেই শহীদ জিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি জনগণের আস্থা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে জনগণের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তই শহীদ জিয়ার রাজনীতিকে এবং তার প্রতিষ্ঠিত দলকে ধ্বংস করতে পারে নাই, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি :
২৯ মে : ২৯ মে শনিবার বিকেল ৩-৩০টায় সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর কর্মময় জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ। উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত থাকবেন সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
৩০ মে : ৩০ মে ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। ঐদিন সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন। বেলা ১২টার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবে।
ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অসহায়-দুঃস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
৩১ মে : ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক দল (জাসাস)-এর উদ্যোগে শহীদ জিয়ার জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
০১ জুন : জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা, সকাল ১১টা।
০২ জুন : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সময় : বেলা ২:৩০টা।
০৩ জুন : জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা, সময় : সকাল ১১টা
০৪ জুন : জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল, সময় : বাদ আসর গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়।
০৫ জুন : জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা।
০৬ জুন : জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা, সময় : সকাল ১০টা।
০৭ জুন : জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর উদ্যোগে আলোচনা সভা, সয়ম : সকাল ১০টা।
০৮ জুন : জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা।
০৯ জুন : জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার ওপর প্রকাশিত বই প্রদর্শনী।
০১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত : দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরীতে সংশ্লিষ্ট ইউনিট বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরাসরি অথবা ভার্চুয়ালী জেলা ও মহানগরের এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
এছাড়াও অনুরূপভাবে সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা ও পৌরসহ সকল ইউনিট কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ মে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এছাড়া স্ব স্ব ইউনিটসমূহ সুবিধামতো সময়ানুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে ৩০ মে দোয়া মাহফিল এবং দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী/বস্ত্র বিতরণ করবে।
বিএনপির অঙ্গসংগঠনসমূহ জেলা ও মহানগরী পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে। শহীদ জিয়ার ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে পৃথক পৃথক পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে এবং ৩০ মে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।