আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি এ অবিচার কেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৬ এএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৬ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মানুষের জন্য রাজনীতি, রাজনীতির জন্য মানুষ নয়। কিন্তু আজ এই রাজনীতির জন্যই ব্যাহত হচ্ছে মানবতা। এই মানবতার মূল কথা হলো একজন মানুষের প্রতি আর একজন মানুষের দয়া বা মহানুভবতা। সকলেরই এই মহানুভবতা পাওয়া উচিত, যাকে আমরা মানবতা বলি। বর্তমানে আমরা একটি রাজনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ, যে বেড়াজালে আমাদের জীবন অনিশ্চিত। যে মানুষটি সকালে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হচ্ছে সেই মানুষটি তার জীবন নিয়ে ফিরতে পারবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ আমাদের এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাটুকুও নেই। মানবতা আজ বিপর্যস্ত।
ঠিক তেমনি আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা বেগম খালেদা জিয়া, যিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বৈরশাসন নির্মূলে যার অবদান অনস্বীকার্য তাঁর জীবনও বিপর্যস্ত। আধুনিক বাংলাদেশ রূপান্তরে যাকে অন্যতম পুরোধা বলা হয় সেই মানুষটি আজ হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না শুধুমাত্র হিংসাত্মক রাজনীতির বলি হবার কারণে। আজ তাঁর মতো একজন সিনিয়র সিটিজেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা নিয়ে যদি এতো রাজনীতি হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপত্তা পাবে এই সরকারের কাছ থেকে সেটা এখন সবাই উপলব্ধি করতে পারছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইদানিং একটা ব্যাপার বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো সম্প্রীতির অভাব। যেমন উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়েও যদি চিন্তা করেন প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই সম্প্রীতি এখনও দেখা যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, বর্তমান সরকার প্রধান তার আশু রোগমুক্তির জন্য বার্তা প্রেরণ করেছেন। অথচ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সরকারের কোনো পর্যায় থেকে তাঁর জন্য কোনো কিছু বলা হয়নি- এটাকে কি অবজ্ঞা কিংবা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে ধরে নিবেন?
এই গাফিলতির কারণে যদি কোনো অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। সেই সাথে সরকারের উচিত বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সহায়তা করা এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব।
সরকার নিজেকে ডিজিটাল সরকার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার দাবি করে। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাপ্রাপ্তির জন্য যাওয়ার যে দরখাস্ত করা হয়ছে, সেই আবেদন গ্রহণ করে প্রাপ্তি স্বীকার করতেও সরকার ব্যাপক সময় নিচ্ছে। এ থেকে সন্দেহ হয় যে, এটি তাদের ইচ্ছাকৃত বিলম্ব এবং এভাবে কালক্ষেপণ করে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের হানি ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বেই বাংলাদেশের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে নির্বাচন হতে বিরত রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যা একটি মামলায় নিম্ন আদালতে ফরমায়েশী রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনের বছরে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়। জামিন পাওয়া বেগম খালেদা জিয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও বার বার তিনি জামিন বঞ্চিত হয়েছেন। সরকারের নির্দেশ থাকায় উচ্চ আদালত থেকেও তিনি জামিন পাননি। যদিও দুই বছর কারাভোগের পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে তাঁকে নিজ শর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র বাসভবনে থাকার সুযোগ দেয়া হয়। সেখানেও তিনি ছিলেন গৃহবন্দীর মতো। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তিনি চিকিৎসা নিতে পারেননি।
বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবাসের পর মার্চ, ২০২০ হতে সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায়ই তাঁর নিজ বাসভবনে বন্দি জীবন যাপন করছিলেন। বন্দি অবস্থার কারণে তিনি চাইলেও তাঁর পছন্দমতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছিলেন না।
বর্তমানে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও মেডিকেল বোর্ড তাঁকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সরকার বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন নাকচ করে দেয়ায় এবারও তিনি উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন।
উদার গণতন্ত্রের পরিবর্তে সর্বজনীন গণতন্ত্র, দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার নিয়ে খুব ভাসা ভাসা কিছু চিন্তা দেখা গেছে। কিন্তু পারম্পর্য রক্ষা করে বিক্ষিপ্ত চিন্তাকে চিন্তাধারারূপে বিকশিত করার প্রচেষ্টা নেই। প্রচারমাধ্যম চলমান ধারাকেই অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট।
সরকার দেশের মানুষের মুক্ত ও মত প্রকাশের যেভাবে বাধা তৈরি করছে এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় যেভাবে হয়রানি করার প্রবণতা নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে তা জনমতে ব্যাপকভাবে আক্রোশের জন্য দিয়েছে ইতিমধ্যে, যা সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না।
শুধু বিরোধী দল নয় এটা এখন সাধারণ মানুষেরও দাবি যে, বেগম খালেদা জিয়া এখনও সিসিইউতে আছেন। সরকারের এই মুহূর্তে উচিত হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া এবং অবিলম্বে ওনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দ্রুত পাঠানো।