সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৩ এএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৫ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মানুষের জন্য রাজনীতি, রাজনীতির জন্য মানুষ নয়। কিন্তু আজ এই রাজনীতির জন্যই ব্যাহত হচ্ছে মানবতা। এই মানবতার মূল কথা হলো একজন মানুষের প্রতি আর একজন মানুষের দয়া বা মহানুভবতা। সকলেরই এই মহানুভবতা পাওয়া উচিত, যাকে আমরা মানবতা বলছি। বর্তমানে আমরা একটি রাজনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ, যে বেড়াজালে আমাদের জীবন অনিশ্চিত। যে মানুষটি সকালে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হচ্ছে সেই মানুষটি তার জীবন নিয়ে ফিরতে পারবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ আমাদের এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই। মানবতা বিপর্যস্ত।
ঠিক তেমনি আজ বাংলাদেশের মানুষের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা বেগম খালেদা জিয়া, যিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বৈরশাসন নির্মূলে যার অবদান অনস্বীকার্য, তাঁর জীবনও বিপর্যস্ত। আধুনিক বাংলাদেশ রূপান্তরে যাকে অন্যতম পুরোধা বলা হয় সেই মানুষটি আজ হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না শুধুমাত্র কূট রাজনীতির বলি হবার কারণে। আজ তাঁর মতো একজন সিনিয়র সিটিজেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা নিয়ে যদি এতো রাজনীতি হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপত্তা পাবে এই সরকারের কাছে থেকে সেটা এখন সবাই উপলব্ধি করতে পারছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইদানিং একটা ব্যাপার বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা হলো সম্প্রীতির অভাব। যেমন উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দিয়েও যদি চিন্তা করেন প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই সম্প্রীতি এখনো দেখা যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বর্তমান সরকার প্রধান তাঁর আশু রোগমুক্তির জন্য বার্তা প্রেরণ করেছেন অথচ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সরকারের কোনো পর্যায় থেকে তাঁর জন্য কোনো কিছু বলা হয়নি। এটাকে কি অবজ্ঞা কিংবা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে ধরে নিবেন।
সাধারণ মানুষ সরকারের এই গাফিলতির কারণে যদি কোনো অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাহলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। সেই সাথে সরকারের উচিত বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যেতে সহায়তা করা এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব।
সরকার নিজেকে ডিজিটাল সরকার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার দাবি করে। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাপ্রাপ্তির জন্য যাওয়ার যে দরখাস্ত করা হয়েছে, সেই আবেদন গ্রহণ করে প্রাপ্তি স্বীকার করতেও সরকারের ব্যাপক সময় লেগে যাচ্ছে। এ থেকে সন্দেহ হয় যে, এটি তাদের ইচ্ছাকৃত বিলম্ব এবং এভাবে কালক্ষেপণ করে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের হানি ঘটার মতো পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বেই বাংলাদেশের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে নির্বাচন হতে বিরত রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যা একটি মামলায় নিম্ন আদালতে ফরমায়েশী রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনের বছরে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয় একটি জনমানবশূন্য পরিত্যক্ত কারাগারে, যেটি সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযুক্ত হওয়ায় সেটিকে আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, কারাবন্দিদের নতুন স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। অথচ বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা হয় সেই পরিত্যক্ত জনমানবশূন্য কারাগারে।
কারাগারের যে রুমে তিনি বন্দি ছিলেন সেটি ছিল মুক্ত আলো-বাতাসহীন একটি স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার কক্ষ। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি অন্ধকার কুঠুরিতে দিন কাটিয়েছেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যেটা সম্পূর্ণ মানবতার চরম লঙ্ঘন। মুক্ত বাতাস, মুক্ত পরিবেশে, মুক্ত আলোতে তিনি বিচরণ করতে পারেননি বহুদিন। আলো-বাতাসহীন ছোট্ট কক্ষে দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় তাঁর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। কারাগারে অযত্নে-অবহেলায় এবং বসবাসের অযোগ্য পরিবেশের কারণে তাঁর শরীরে রক্তশূন্যতা ও প্রোটিনের অভাব দেখা দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবাসের পর মাচর্, ২০২০ হতে সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায়ই তাঁর নিজ বাসভবনে বন্দি জীবন যাপন করছিলেন। বন্দি অবস্থার কারণে তিনি চাইলেও তাঁর পছন্দমতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছিলেন না। করোনা মহামারি বিবেচনায় তিনি চাইলেই কোনো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলে একজন বন্দি হিসেবে তাঁর পক্ষে কোনো হাসপাতালে গিয়ে করোনা ভ্যাকসিন নেয়া সম্ভব ছিল না এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। সরকারের উচিত ছিল এই রকম একটা পরিস্থিততে ওনাকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে সহায়তা করা। অথচ এটা পরিলক্ষিত হয়েছে সরকারের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের বাসায় গিয়ে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়াকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অসুস্থ হন তখন তাদের শারীরিক অবস্থা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানানো হয়। এই করোনাকালীন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখনও প্রতিদিন একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রাইভেসি রক্ষা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ক্ষেত্রে তাঁর প্রাইভেসি রক্ষা করা হচ্ছে না। এই ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোরও সচেতন ভূমিকা পালন করা উচিত। একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে খবর প্রচার করলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
উদার গণতন্ত্রের পরিবর্তে সর্বজনীন গণতন্ত্র, দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সরকার নিয়ে খুব ভাসা ভাসা কিছু চিন্তা করতে দেখা গেছে। কিন্তু পারম্পর্য রক্ষা করে বিক্ষিপ্ত চিন্তাকে চিন্তাধারারূপে বিকশিত করার প্রচেষ্টা নেই। প্রচারমাধ্যম চলমান ধারাকেই অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট।
সরকার দেশের মানুষের মুক্ত ও মত প্রকাশে যেভাবে বাধা তৈরি করছে এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় যেভাবে হয়রানি করার প্রবণতা নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে তা জনমনে ব্যাপকভাবে আক্রোশের জন্ম দিয়েছে ইতিমধ্যে, যা সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। শুধু বিরোধী দল নয়, এটা এখন সাধারণ মানুষেরও দাবি যে, বেগম খালেদা জিয়া এখন সিসিইউতে আছেন সরকারের এই মুহূর্তে উচিত হবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া এবং অবিলম্বে ওনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দ্রুত পাঠানো।