খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুলের ফোন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৮ এএম, ৫ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৬ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হয়। তবে এই আবেদনের খবর ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নির্ধারণের পাশাপাশি গুছিয়ে আনা হয়েছে পারিবারিক অন্যান্য প্রস্তুতিও। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নিয়োজিত চিকিৎসকেরা দফায় দফায় তাঁর শারীরিক পরীক্ষা ও মানসিক অবস্থা নিরীক্ষা করছেন। তবে যেহেতু তিনি শর্ত সাপেক্ষে মুক্তিতে আছেন, এ কারণে সরকার অনুমতি দিলেই কেবল বিদেশে রওনা করতে পারবেন। সোমবার (৩ মে) মধ্যরাত পর্যন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন ও বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিন মধ্যরাতে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ওনার চিকিৎসকেরা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত না হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। আর একইসঙ্গে পারিবারিক ও দলীয়ভাবেও দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চলতি এপ্রিলে আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাঁর দল ও পরিবার। সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের অনুমতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তারা। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বেগম খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। কিন্তু স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে সরকারের অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে এমন আশ্বাস দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছকু বিএনপির একজন নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকাররের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আজকে সন্ধ্যার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানান। একইসঙ্গে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে সরকারের অনুমতির বিষয়ে কথাও বলেন। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বুধবার বেলা ১১টায় বিএনপির একটি ভার্চুয়াল আলোচনা আছে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর এই সভায় তিনি খালেদা জিয়ার বিদেশ নেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্যও রাখবেন।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া সোমবার ভোর থেকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। পরে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে এদিন বিকাল পৌনে চারটায় তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে সোমবার সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আপনারা জানেন বেগম খালেদা জিয়া নিয়মিত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা তত্ত্বাবধান করছেন। সোমবার ভোরের দিকে ওনি একটু শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। শ্বাসকষ্ট অনুভব করার পর চিকিৎসকরা তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তক্রমে করোনারী কেয়ার ইউনিট- সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা দেশবাসীর কাছে ওনার রোগ মুক্তির জন্য দোয়া চাই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে ওই চিকিৎসক বলেন, মানুষের যেকোন সময়, যেকোন পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ম্যাডামের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। চিকিৎসকরা সম্মিলিতভাবে এই পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো করছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনারী কেয়ার ইউনিটে যখন কোনো রোগী থাকে তখনতো স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসই নেয়। আমি কয়েক মিনিট আগে ওনার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। কথা বলে এসেছি।
এর আগে রবিবার রাতে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। আগে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তা নিয়ে মেডিকেল বোর্ড পর্যালোচনা করে। পরে তারা নতুন কিছু পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। গত ১০ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো বেগম খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট হলেও ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ২৭ এপ্রিল তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।