দুই শ গজে নৌকার ব্যাজ পরাদের সরব উপস্থিতি ছিটেফোঁটা ধানের শীষের পোলিং এজেন্টও ছিল, ছিল ভোটার সঙ্কটও
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা-১৮তে ফের নির্বাচনের দাবি বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫২ এএম, ১৩ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০৭ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঢাকা-১৮ আসন ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ফের অনুষ্ঠিত হলো ভোটারবিহীন নির্বাচন। এজেন্ট বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল করাসহ নানা অভিযোগ এনে ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে এই আসনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার পর ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান।
ভোট কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজ পরা মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষ্য করার মতো। এসব মানুষের সরব উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে রাজনৈতিক দলের সভা চলছে। ভোট কেন্দ্রের দুই শ গজের মধ্যে এসব বহিরাগত দিব্যি অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। যার ইচ্ছা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করছে- ঘুরছে ফিরছে। আবার কেউ সেলফি তুলছে। তবে এসব কেন্দ্রে ভোটারের বড় সঙ্কট ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-১৮ আসনের উত্তরা মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ, নবাব হাবিবুল্লাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মালেকাবানু আদর্শ বিদ্যানিকেতন, খন্দকার আবাসন বিদ্যানিকেতন, আমজাদ স্মৃতি বিদ্যানিকেতন, উত্তরা আনোয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গাঁওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দৃশ্য প্রায় এমনই দেখা গেছে। এর মধ্যে সকাল আটটায় উত্তরা মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিএনপি প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। সেখানে শুধু ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। মাঝখানে সকাল সাড়ে নয়টায় মালেকা বানু উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন এস এম জাহাঙ্গীর।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর মালেকা বানু উচ্চ বিদ্যালয় ভোটদান শেষে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছে ও ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন। এর আগে তিনি উত্তরা মডেল হাই স্কুল, নবাব হাবিবুল্লাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। অতীতে আমরা যে অভিযোগ করেছি তা সত্যি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ঢাকার বাইরে গাজীপুর, সাভারসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী এনে প্রত্যেকটা ভোটকেন্দ্রে জড়ো করেছে। ভোটাররা সেখানে ভয়ে ভোট দিতে পারতেছে না। শুধু তাই নয়, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। পুলিশ কোনো সহযোগিতা করছে না। আমাদের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ভোটার তো দূরের কথা ধানের শীষের এজেন্টদেরও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি যতটা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি এবং আমাদের কন্ট্রোল রুমের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় কেন্দ্র থেকে মারধর করে পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, উত্তরা রাজউক কলেজে ৮টি ইভিএম মেশিনের চারটি নষ্ট। সেখানে সাংবাদিকরা প্রবেশকালে তাদের বাধা দেয়া হয়। নবাব হাবিবুল্লাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই কেন্দ্রের ভোটার না হওয়ায় ধানের শীষের কাউকে ঢুকতেই দেয়নি পুলিশ। যা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। এই হচ্ছে ভোটের অবস্থা। তারা কোনভাবেই চায় না জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। জনগণ যদি ভোট দিতে আসতে পারে তাহলে অবশ্যই ধানের শীষে ভোট দেবে। ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে নৌকার কৃত্রিম লাইন তৈরি করে রেখেছে। যার কারণে ভোটাররাও ভয়ে প্রবেশ করতে পারছে না। এটা কিসের আলামত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকে। কিন্তু এবার ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। আপনারা বলেন অনেকে চাকরি করে তারা উপস্থিত ভোট দিতে আসবে না। এখানে সবকিছু ওপেন স্টাইলে চলতেছে। দখলদার বাহিনী দখল করবে বলে এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ বাহিনী সব একাকার হয়ে ভোট দখলের চেষ্টা করছে।
তিনি আরো বলেন, আমি এই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছি। আবার এই কেন্দ্রে সকালে ১০ জন ভোটার ভোট দিতে এসেছিল। তাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। যারা ধানের শীষের চিহ্নিত ভোটার। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট সুস্থ হওয়ার কোনো আলামত নেই। সুস্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের যে রকম ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে এবারও তাই করছে। আওয়ামী লীগ তাদের দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে। ভোটের কোনো পরিবেশ নেই।