ঢাকা-১৪ আসনে উপনির্বাচন, আ'লীগে রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৭ পিএম, ২৬ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৮ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যু ওই আসনের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা, রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়নে শোকাবহ ব্যানারে ছড়াছড়ি। শোকের ব্যানার থানা থেকে ওয়ার্ডের অলিগলিতে পৌঁছে গেছে।
স্বাভাবিকভাবে মনেই হতে পারে, এই সাংসদের মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকা দলীয় কোন্দলের অবসান হয়েছে। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব শোকাবহ পোস্টার, ব্যানারের আড়ালে রয়েছে আত্মপ্রচারণা। নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত বছরের তুলনায় ত্রাণ ও ইফতারসামগ্রীর পরিমাণ বেড়েছে প্রয়াত আসলামুল হকের আসনে। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ ত্রাণ ও ইফতারি নিয়ে অলিগলিতে পৌঁছে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এসব কার্যক্রম পরিচালনাকালে বড় করে স্থাপিত ব্যানারটিই সার্বিক উদ্দেশ্যের কথা বলে দেয়। অর্থাৎ মানবিক কাজের বাইরে মনোনয়নপ্রত্যাশাই বড় করে দেখানো হচ্ছে সেখানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-১৪ আসন উপনির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা। কিন্তু থানা ওয়ার্ডে অগুরুত্বপূর্ণ বহু নেতা মনোনয়নের দৌড়ে শামিল হতে চাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ওই আসনে রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেন।
ওইসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই অন্তর্কোন্দল ব্যাপক আকার ধারণ করায় বিষয়টি খোদ শেখ হাসিনার নজরে পড়েছে। যে কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে গতকাল রবিবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ১৪ আসনের অন্তর্র্ভুক্ত থানা ও ওয়ার্ডের নেতাদের ডেকে সতর্ক করেছেন।
আসনটির প্রতি এত আগ্রহ কেন- বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা জানান, দেশের অন্যতম বৃহত্তম গাবতলী গরুর হাট, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, আমিনবাজার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা বালু উত্তোলনের ক্ষেত্র, ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বারসহ নানাবিধ অর্থের উৎস রয়েছে ওই আসনে।
স্বাভাবিক কারণেই আসলামুল হকের অনুসারীরা গণমাধ্যমে খবরের অনুষঙ্গ হয়েছেন। সাংসদ আসলামুল হকের মৃত্যুর পর ‘অর্থের বড় উৎসাগার’ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না অনেকে। যে কারণে এখানে এত এত মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাষ্য ভিন্ন। তারা বলছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশা একজন রাজনীতিকের অধিকার। রাজনীতি মানুষের জন্য আর তাদের জন্য কাজ করার বড় একটি প্ল্যাটফর্ম হলো সংসদ সদস্য হওয়া। সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন বলে তাদের অভিমত।
উপনির্বাচনের জন্য আলোচনায় এগিয়ে আছেন আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক। আসলামুল হকের মৃত্যুতে পরিবারটির প্রতি আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতার রেশ ধরে তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
অন্যদিকে পরিবারের দাবি নিয়ে আসলামুল হকের বড় ভাই মফিজুল হক বেবুও মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু তিনি জাতীয় পার্টির (জেপির) প্রেসিডিয়াম সদস্য। ভিন্নমতের রাজনীতির কারণে তিনি ভাইয়ের সিমপ্যাথি থেকে বঞ্চিত হবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও এবিএম মাজহারুল আনাম, সহযোগী সংগঠন থেকে আলোচনায় আছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন আলোচনায় রয়েছেন।
মিরপুর, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা ও রূপনগর থানার আংশিক এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন থেকে অন্তত ৫০ জনের বেশি নেতা মনোনয়নের মিছিলে শরিক হচ্ছেন।
এ ছাড়া গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও মনোনয়নের বাসনা পোষণ করেছেন। তবে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা না পেলে তাদের কেউ নিজেদের ইচ্ছার কথা জানান দেবেন না।
মনোনয়নের বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মনোনয়নের বিষয়ে নিজ থেকে কোনো বক্তব্য দিতে নারাজ। তবে তাদের অনুসারীরা ব্যানার-পোস্টারে পুরো নির্বাচনী আসন ছেয়ে ফেলেছে।
সাবেক সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের মন্তব্য চাওয়া হলে সদ্যপ্রয়াত আসলামুল হকের আত্মার শান্তি কামনা করেন বলেন, আসলাম ভাই নেই। বাস্তবিক কারণেই এখানে উপনির্বাচন হবে। গত নির্বাচনের মতো এবারও আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমি এবং আমার পরিবার এই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে দীর্ঘদিন ধরে আছি এবং আমৃত্যু থাকব। এ আসনের প্রতিটি অলিগলি আমার চেনা-জানা। আমি মনে করি এখানকার মানুষও আমাকে চায়।
গত ৪ এপ্রিল সাংসদ আসলামুল হকের মৃত্যুর পর ১৩ এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসন শূন্য ঘোষাণা করেছে সংসদ সচিবালয়। শূন্য ঘোষণার গেজেট নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পাঠানো হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে উপনির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনের অন্তর্ভুক্ত। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব এলাকা ঢাকা-১১ আসনভুক্ত ছিল। ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা-১১ ভেঙে ঢাকা-১৪, ১৫ ও ১৬ আসন গঠন করা হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আসলামুল হক। প্রথমবার প্রার্থী হয়েই এসএ খালেককে পরাজিত করেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও এমপি নির্বাচিত হন আসলাম।