মানুষের হক আ’লীগ সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা লুটপাট করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৩ এএম, ২৫ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩০ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
মহামারি করোনাকালেও গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রাপ্য ‘হক’ বর্তমান দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা লুটপাট করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার ভয়ংকর প্রকোপে পর্যুদস্ত স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গত সপ্তাহে আমি আপনাদের সাথে মিলিত হয়েছি। আজ তাই করোনার সংক্রমণ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। আজ আমি ২০২০ সালে প্রথম দফা ‘সরকারি ছুটি’র আওতায় অপরিকল্পিত শাটডাউনের কারণে উদ্ভূত মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সরকারের উদাসীনতা ও সমন্বয়হীনতা, এক ধরনের আত্মতুষ্টি এবং ক্ষমার অযোগ্য অবহেলা, যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যথাযথ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণে চরম ব্যর্থতা এবং ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ নামে আবারও অপরিকল্পিত, অপরিণামদর্শী ও সমন্বয়হীন পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে কথা বলব। সরকার ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী “সীমিত আকারের” লকডাউন আরোপ করে। ১৪ এপ্রিল থেকে আরো এক সপ্তাহের “সর্বাত্মক লকডাউন” ঘোষণা করে। পরে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এটি বাড়ানো হয়। ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৬ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৬ লাখ পরিবারে মধ্যে ৩৫ লাখ পূর্বঘোষিত। বাকি এক লাখ পরিবার কৃষক, যারা সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত। ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা হিসাবে দুই হাজার পাঁচশ টাকা এবং কৃষকদের এক লাখ পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, কোভিড-ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন-আয়ের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ৮৮০ কোটি এবং দুর্যোগ-ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫০ কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ ছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তা হিসাবে দুই হাজার পাঁচশ টাকা করে বিতরণের ঘোষণা করলেও ৩৫ লক্ষ পরিবার সে অর্থ পায়। বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২৫৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে অবশিষ্ট অর্থ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধা দিলে ঐ অর্থ অবিতরণকৃত থেকে যায়। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বলব। লক্ষণীয় যে, চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অসচ্ছল মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার এ পর্যন্ত নতুন করে মাত্র সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব বলেছেন, সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এই সহায়তা দেয়া হবে। দরিদ্র, দুস্থ ও অসচ্ছল মানুষের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ একেক রকম হবে। তবে প্রথমবার রিলিফ সামগ্রী বিতরণে যে হরিলুট হয়েছে সেসব চিত্র তো আপনারাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। অথচ করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় গত বছর ৫৯ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছিল আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত বিএনপি।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। গত ১৭ মাসের এই দীর্ঘ সময়েও করোনা প্রতিরোধে ন্যূনতম ব্যবস্থাপনা পরিকৌশল গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। প্রথমবার করোনার প্রকটতা অজানা থাকার কারণে সম্যক প্রস্তুতি নেয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তো আর তা বলা যাবে না। বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগাম সমন্বিত বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা বা একটি কার্যকরী জড়ধফ সধঢ় প্রণয়ন করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বিলম্বে এসেছে। সরকার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের অনেক সময় পেয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। সরকার এ সময় শতবার্ষিকী উদযাপনসহ নানান জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনার মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন করা হল। পর্যটনের ক্ষেত্রেও লোকজনকে সীমিত করা হল না। এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকার জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত ছিল বেশি। করোনা মোকাবিলায় প্রধান যে খাত- স্বাস্থ্যসেবা- সে খাতে গত ১ বছরেও সক্ষমতা বাড়েনি। বেড়েছে দুর্নীতি। এ সময় দুর্নীতির সর্বসীমা অতিক্রম করেছে এ সরকার। তন্মধ্যে ঢাকায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করোনা ফিল্ড হাসপাতালটি কিভাবে উধাও হয়ে গেল তা জনগণ জানতে চায়। মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের একই ভবনে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চালুকৃত করোনা হাসপাতালটি অলস ও অব্যবহৃত রেখে একই ভবনে অন্য তলায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে পুনরায় নতুন একটি করোনা হাসপাতাল চালু করার অর্থ কি, জনগণ জানতে চায়। স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মহোৎসবের সাথে সাম্প্রতিক এই দুর্নীতির কাহিনী সকলকে হতবাক করেছে। যারা মনিটরিং করবে সেই সর্ষেই ভূত থাকলে দুর্নীতির কি কোনো পরিসীমা থাকে?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বারবার করোনা মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা এমনকি প্রয়োজনে “স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা” জারির বিষয়েও ভেবে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। ২০২০’র এপ্রিলে প্রথম শাটডাউনের শুরুতেই বিএনপি থেকে বিভিন্ন খাতে ৮৭ হাজার কোটি টাকার সুনির্দিষ্ট প্যাকেজ প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সে পরামর্শ গ্রহণ দূরে থাক, উল্টো সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর অংশগ্রহণে হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম ঘটিয়ে আতশবাজি পোড়ানো, ভোট লুটের আয়োজনসহ নানা অনুষ্ঠান করে বেরিয়েছে। “লকডাউনের নামে অপরিকল্পিত সাধারণ ছুটি” দিয়ে সমগ্র দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেশকে একটি স্থায়ী ‘করোনার নিরাপদ আবাসভূমি’তে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সর্বশেষ এ বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত হল সেটাও সরকার গোপন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশি অতিথিদের ডেকে এনে জনসমাগমধর্মী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যোগদানকে কেন্দ্র করে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও আন্দোলনকারীদের সমাগমে করোনা সংক্রমণের এক নির্বিঘœ জনপদে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এপ্রিল ২০২১’র প্রথম এক সপ্তাহে দেশের হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে যায়। প্রবীণ সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারের জন্য আইসিইউ মেলেনি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে আইসিইউয়ের অভাবে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগীদের মৃত্যু ঘটে। গণমাধ্যমে এখন যেসব ছবি আসতে শুরু করেছে, তা মেনে নেয়া কঠিন। করোনার সর্বগ্রাসী সংক্রমণ ও এর প্রভাবে বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা এক চরম সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় বিশেষ করে দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বড় কোনো কর্মসূচিই নেয়া হয়নি। আগেই বলেছি, ৫০ লক্ষ পরিবারকে ২ হাজার ৫শ টাকা করে দেয়ার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাও দুর্নীতির কবলে পড়ে যথাযথভাবে বিতরণ করতে পারেনি। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে এ গরিব মানুষগুলো আরো বিপদে পড়বে। সরকারের উচিত ছিল তথাকথিত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’র আগেই কাজ হারাতে পারে- এ ধরনের গরিব মানুষেদের হাতে খাবার পৌঁছে দেয়া। এ জন্য নগদ সাহায্য দেয়াই শ্রেয়। উন্নত বিশ্বে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে লকডাউনের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এখনও সময় আছে। অনতিবিলম্বে ‘দিন আনে দিন খায়’- এ শ্রেণির মানুষের কাছে নগদ অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা না হলে এরা না খেয়ে মরবে। পরিণামে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে আমরা আশংকা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বছর সরকার বিভিন্ন খাতে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছিল, আমরা আগেও বলেছি তা ছিল একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। বলতে গেলে জনগণের সাথে এক ধরনের প্রতারণা। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে ব্যাংকের কাঁধে বন্দুক রেখে। তা ছিল উবঢ়ড়ংরঃড়ৎ’ং সড়হবু. সরকারি বরাদ্দ নয়। সরকারি বরাদ্দ যা ছিল তা নিতান্তই অপ্রতুল। গার্মেন্টস, পোশাকশিল্পসহ বড় উদ্যোক্তাদের অনেকেই মোটামুটি পেয়েছেন। কিন্তু সেখানেও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। দলীয় ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে সব নিয়ে নিয়েছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী কোনো প্রণোদনা পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ছোটো উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পাননি বলেই চলে। ঝগঊ-এর জন্য বরাদ্দও খুব কম ছিল। ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায়নি। ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে পোশাতে পারবে না বলে ব্যাংক ও এনজিওগুলো ঋণ প্রদানে আগ্রহী ছিল না। করোনার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গরিব মানুষগুলো। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে পারেনি সরকার। গত ১ বছর সরকারের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে আওয়ামী মদদপুষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর আয় কমেছে। একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষনায় দেখা গেছে মানুষের আয় কমেছে ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকায় ৪২ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৩৩ শতাংশ। বেতননির্ভর মানুষের আয় কমেছে ৪৯ শতাংশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারির আগে ২০১৯ সালের সরকারি (বিবিএস) জরিপের তথ্য ছিল শহরের ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবারে খাবার নেই। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) যৌথ গবেষণায় দেখা যায় দেশে দারিদ্র্য ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে শ্রমনির্ভর দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৩ শতাংশ হয়েছে। এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসিও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর যৌথ জরিপে এই চিত্র আরো আশংকাজনকভাবে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায় কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। গবেষণাটিতে মৌলিকভাবেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের এক নতুন চিত্র উঠে এসেছে। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ- গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত। গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেননি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক হিসাব মতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটির মতো। করোনার আগে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১%। পিপিআরসি ও বিআইজিডি’র জরিপে উঠে আসা ২ কোটি ৪৫ লক্ষ নতুন দরিদ্র এই হিসাবের বাইরে। এর আগে বেসরকারি সংস্থা সানেম গত জানুয়ারিতে (২০২১) প্রকাশিত এক জরিপে বলেছে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশে উঠেছে। এ হচ্ছে উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র!
তিনি বলেন, সরকার লকডাউন কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার প্রধান কারণ লকডাউনের শর্ত অনুযায়ী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্যসংস্থান না করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা না করা। এর কিছুই না করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা রীতিমতো অমানবিক ও অর্থহীন প্রচেষ্টা। বিবেচনায় নেয়া হয়নি ক্ষুধা করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। খাদ্যের জোগান দিতে না পারলে গরিব মানুষকে যে ঘরে রাখা যাবে না, তা ভাবা হয়নি। লকডাউন ঘোষণার আগেই জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এদেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন সে কথা মনে রাখা হয়নি ৫০ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৪ মে। জেলাপ্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মিলে ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা তৈরি করেন। অর্থ বিতরণ শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, প্রায় পুরো তালিকাই ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ যারা টাকা পাওয়ার যোগ্য, তাদের বদলে তালিকায় ঢুকে পড়েছেন তুলনামূলক সচ্ছল মানুষেরা। অর্থ বিভাগের এক অবস্থান পত্রে ধরা পড়ে ৫০ লাখের তালিকায় ১৪ লাখ ৩৩ হাজার জনের নামই ভুয়া। মহামারি করোনাকালেও গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রাপ্য ‘হক’ বর্তমান দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা লুটপাট করছে। অর্থ বরাদ্দের পূর্বে যে তা ব্যয়ের একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি, সরকার কখনোই সে গুরুত্ব দেয়নি। যেমন, কাজ হারানো শ্রমিকদের সহায়তার জন্য গঠিত তহবিলের টাকাও সরকার খরচ করতে পারেনি। এক হাজার পাঁচশ কোটি টাকার এই তহবিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জার্মান সরকারের দেয়া ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। করোনায় কাজ হারানো ১০ লাখ শ্রমিককে তিন মাস তিন হাজার করে টাকা সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও ছয় মাসে টাকা খরচ হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। আপনারা জানেন বর্তমানে চিকিৎসা-সামগ্রীর অভাবে রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে মানুষ। আইসিইউ’র অভাবে হন্য হয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে চোখের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে স্বজনরা। অথচ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পড়ে আছে ৩০০ ভেন্টিলেটর । গত ১০ মাস ধরে বিমানবন্দরে পড়ে আছে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় ইউনিসেফের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ১ হাজার ২০০টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটার, পালস অক্সিমিটার, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, মাস্ক, পিপিইসহ আরও নানা সামগ্রী। কে সই করে মালামাল ছাড়াবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গিয়েছে । অন্যদিকে, এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের আওতায় ১৭০টি আধুনিক আইসিইউ শয্যা, ১৭০টি ভেন্টিলেটর, ১০৭টি আরটি-সিপিআর যন্ত্র কেনার কথা ছিল। টাকা বরাদ্দও ছিল। কিন্তু এর মধ্যে শুধু ২৫টি আরটি-পিসিআর যন্ত্র কেনা হয়েছে। বাকিগুলো কেনা হয়নি। কি এক চরম অব্যবস্থাপনা চলছে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে এই মহামারিকালে এর মাধ্যমেই তা অনুধাবন করা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের মধ্যে জরুরি কেনাকাটায় সমন্বয়হীনতার লোমহর্ষক সংবাদ বেরিয়েছে জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ২৩টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এই প্যাকেজের মধ্যে দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের সামাজিক সুরক্ষাসংক্রান্ত প্যাকেজ মাত্র সাতটি। এতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ১০ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। বাকি সবটুকুই ব্যাংকনির্ভর ঋণ প্যাকেজ। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা, দুস্থ, গরিব, দিনমজুর, শ্রমিকেরা উপকৃত হয়নি। এই সাতটি সুরক্ষা প্যাকেজের অর্থও কাক্সিক্ষতদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এসব কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫৬ শতাংশ এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সর্বোপরি, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকই পৌঁছেনি ভুক্তভোগীদের হাতে। ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫০ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বিতরণ সম্ভব হয়নি, যা মোট অর্থের প্রায় ৪২ শতাংশ। যদিও প্রণোদনা প্যাকেজের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়কে শতভাগ অর্থ বিতরণের জন্য অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাবই এ জন্য দায়ী। করোনারটিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তার সংবাদ আবারো সমগ্র জাতিকে গভীর হতাশা ও দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত করেছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ ও শেয়ারবাজার লুটপাটে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানকে টিকা সরবরাহের একচেটিয়া সুবিধা দিতে গিয়ে আজ সমগ্র জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে ভোটারবিহীন দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকার। আমরা সুস্পষ্টভাবে টিকা সংগ্রহে সরকারের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকেও টিকা কেনার পরিকল্পনা নিলে আজ এ নিদারুণ অনিশ্চয়তায় পড়তে হত না। আমরা প্রথম থেকেই এ কথাই বলে আসছিলাম। অবিলম্বে অন্য সূত্র হতে পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহের দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করতে চাই, করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ও সুপরিকল্পিত নীতি প্রণয়ন না করার কারণে বিভিন্ন সময় যেসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা ইতিমধ্যে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। চলমান ‘লকডাউনের নামে শাটডাউন’ অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের সর্বশেষ উদাহরণ। এবারকার লকডাউনে মানুষের দুরবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এর মূলে দুটি কারণ- একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক। লকডাউনের নামে মূলত সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আালেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ঈৎধপশফড়হি ঘোষণা করেছে। লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অংগসংঠনের শত শত নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউকোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে কোনো না কোনোভাবে নিবর্তনমূলক আইনের আওতায় এনে কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। গতবছর লকডাউনের নামে সাধারণ ছুটি শুরু হলে বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গরিব দুস্থদের জন্য সহায়তা দিতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে থাকলেও এবার তাদের পক্ষে রাজেনৈতিক নিপীড়নমূলক আচরণে বাধ্য হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তথাপি সীমিত পরিসরে হলেও যার যা আছে তাই নিয়ে দুঃস্থ জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাসের মন্দার সময় বিশ্বের অনেক দেশ তাদের জিডিপি’র ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদন ঘোষণা করেছে।
মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বাস্থ্যগত, আর্থিক বা খাদ্যসহায়তা দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে জিডিপ’র মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যার পরিমাণ ৪৬০ কোটি ডলার। এরমধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় মাত্র ৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, প্রতিবেশী ভারতের ব্যয় জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ব্যয় করেছে জিডিপি’র ২ শতাংশ। এ পর্যায়ে জিডিপি’র বিপরীতে অর্থবরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি :
দেশের নাম অর্থ বরাদ্দে জিডিপি’র অংশ
যুক্তরাষ্ট্র ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ
যুক্তরাজ্য ১৬ দশমিক ২ শতাংশ
সিঙ্গাপুর ১৬ শতাংশ
জাপান ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ
জার্মানি ১১ শতাংশ
থাইল্যান্ড ৮ দশমিক ২ শতাংশ
চীন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ
মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৫ শতাংশ
কম্বোডিয়া ৪ দশমিক ১ শতাংশ
ভারত ৩ দশমিক ৩
ফিলিপাইন ২ দশমিক ৭ শতাংশ
কেনিয়া (আফ্রিকান দেশ) ২ দশমিক ৪ শতাংশ
পাকিস্তান ২ শতাংশ
আফগানিস্তান ২ দশমিক ২ শতাংশ
বাংলাদেশ ১ দশমিক ৪ শতাংশ
বাংলাদেশের আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে আইএমএফ’র বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, রাজস্ব থেকে ঘোষিত প্রণোদনার মধ্যে উপকারভোগীদের মাঝে মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। সেই বিবেচনায় জিডিপি’র অনুপাতে জনগণকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারে তলানিতে রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারকে নতুন করে যুগোপযোগী অর্থনৈতিক প্রণোদনা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। গত এক বছরে যে নতুন নতুন ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে তাদেরকেও প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে নতুন করে যারা দরিদ্রতার কড়াল ছোবলে পড়েছে তাদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে বিএনপি যে সকল আশংকা করেছিল ইতিমধ্যেই তার অনেক কিছু সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের জন্য রাষ্ট্র, সমাজ, দেশ সবকিছু। জিডিপি’র বিশাল সাইজ দিয়ে কী হবে যদি জনগণই বেঁচে থাকতে না পারে? বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আশা করে করোনা মহামারিকালে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির প্রতিটি মানুষ যাতে সুস্থ থাকে, খেয়ে পরে বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বছর নতুন দরিদ্র বেড়েছে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার। এদেরকে মাথায় রেখে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও প্রণোদনা প্যাকেজ ঢেলে সাজাতে হবে। প্রয়োজন দেশপ্রেম, আন্তরিকতা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা।
এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে পুনরায় কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করছি :
১. লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ‘দিন আনে দিন খায়- এ শ্রেণির গরিব দিনমজুর, পেশাজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রত্যেককে এ পর্যায়ে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য ১৫,০০০ (পনের হাজার) টাকা এককালীন নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনে এ বরাদ্দ নবায়ন করতে হবে।
২. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তি ছয় কোটি আট লাখ। এরমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে (শ্রম আইনের সুবিধা পান) কর্মরত জনশক্তি মাত্র ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সবচেয়ে বড় অংশ ৮৫ দশমিক এক শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। এই হিসেবে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ দিনমজুরের মতো কাজ করেন। যাদের শ্রম আইন-২০০৬ প্রদত্ত নিয়োগপত্র, কর্মঘণ্টা, ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসাভাতা, বাড়িভাড়াসহ বেশিরভাগ অধিকারই নিশ্চিত নয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত এ সকল শ্রমিকদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য ১৫,০০০ (পনের হাজার) টাকা এককালীন নগদ অর্থ প্রদান করতে হবে। এদের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনে এ বরাদ্দ নবায়ন করতে হবে।
৩. নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা অর্থাৎ দারিদ্র্যের বর্তমান হার বিবেচনায় নিয়ে সমগ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে।
৪. গত বছরের অভিজ্ঞতা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। যাতে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে প্রকৃত দুঃস্থ এই মানবিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত না হয়।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও কৃষিখাতে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় না নিয়ে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তাকে এ ঋণ প্রণোদনা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। কোনোরকমেই এ ঋণ ব্যাংকের উবঢ়ড়ংরঃড়ৎ’ং সড়হবু নির্ভর ঋণ হবে না।
৬. ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ২০২০ সালের এপ্রিলে বিএনপি উপস্থাপিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবাবলী সম্বলিত প্রণোদনা প্যাকেজকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা পুরো জাতি আজ এক মহাসংকটের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করছি। এ মুহূর্তে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদের এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।