গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের পর এখন কালো আইন ব্যবহার হচ্ছে : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ এএম, ২৪ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক বিবৃতিতে খুলনায় সাংবাদিক এবং ফেনী ও নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হয়রানি বন্ধসহ নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনৈতিক সরকারের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, দমন-নিপীড়ন, গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপ এবং ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, লুটপাট, অনৈতিকতা, অনিয়ম, বেপরোয়া আচরণ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে লেখক, সাংবাদিক, কবি, কার্টুনিস্ট, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের ওপর ধারাবাহিক নিষ্ঠুর জুলুম চলছে। গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের পর এখন এই কালো আইন ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে মানুষ নিজেদের কষ্ট ও ক্ষোভ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যক্ত করতে না পারে।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছে কিংবা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের জীবনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর কালাকানুনের দ্বারা নেমে আসছে ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। এরই ধারাবাহিকতায় খুলনার ভোট ডাকাতির নির্বাচনে মেয়র ও তার স্বজনদের দুর্নীতি, অনৈতিক ও বেআইনি অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্য খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, এনটিভি’র ব্যুরোপ্রধান ও মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দোলন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন এবং ছাত্রদল কর্মী এমরানুল হক এবং নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল করিম পাটোয়ারী মিন্টুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যুবদল নেতা আব্দুল করিম পাটোয়ারী মিন্টু এবং ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌর বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক কমিশনার জয়নাল আবেদীন ফারুককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ফেনীর ছাত্রদল কর্মী এমরানুল হকের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার কর্তৃক এসব ন্যক্কারজনক ঘটনা চলমান ভয়াবহ দুঃশাসনের খন্ডচিত্র মাত্র।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণকে বন্দি রেখে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক কালো আইন ব্যবহারের মাধ্যমে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয় বলেই সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করতে পারছে না। এই কালো আইনের মাধ্যমে জনগণের বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এই আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে। চলমান বৈশি^ক অতিমারি করোনার মধ্যেও এই আইনের অপপ্রয়োগ করে নিজেদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সরকার স্বাধীন ও বিরুদ্ধ মতকে দমন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি নিবর্তনমূলক কালো আইন। দেশ ও বিদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ এই কালো আইন বাতিলের দাবি করলেও সরকার নিজেদের কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে এই আইনের অপপ্রয়োগ করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুলনায় সত্য সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মামলা দায়ের ও কারাগারে নিক্ষেপ এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে ফেনী জেলা ও নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেফতার ও হয়রানির ঘটনা নিঃসন্দেহে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারবিরোধী রাজনীতির ওপর চরম আঘাত। গণমাধ্যমের স্বরকে নিস্তব্ধ করার অংশ হিসেবেই ভোট ডাকাতির নির্বাচনে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ষড়যন্ত্রে সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সীকে ফাঁসানো হয়েছে। আবু তৈয়ব মুন্সীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের এবং তাকে কারাগারের প্রেরণ এবং ফেনী জেলা ও নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়েরের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলোÑ গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে চিরদিনের জন্য কবরস্থ করতে চায় বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে মহান স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা গণতন্ত্র এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া না হলে সরকারকে তাদের শোচনীয় পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে সাংবাদিক আবু তৈয়ব মুন্সীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফেনী জেলা ও নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধসহ নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জোর দাবি জানান।
ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌর বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুক, ছাত্রদল নেতা এমরানুল হক এবং নোয়াখালীর চাটখিলের যুবদল নেতা আব্দুল করিম পাটোয়ারী মিন্টুসহ এই কালো আইনে ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত সকলের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।