আলহাজ্ব জি কে গউছের সংগ্রামী জীবনের ৫৩ তম জন্মদিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৩ পিএম, ২০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২৯ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
একটি বৈচিত্রপূর্ণ, বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের ৫৩ তম জন্ম দিন আজ। ১৯৬৮ সালের এই দিনে তিনি হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম আলহাজ্ব গোলাম মর্তুজা লাল মিয়া ও মাতা মরহুমা আলহাজ্ব মঞ্জিলা বেগম।
আলহাজ্ব জি কে গউছ, ৫৩ বছরের জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে ১৩শ ৪৭ দিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাভোগ করেছেন। হবিগঞ্জের বহু চড়াই-উৎড়াইয়ের সাথে এই নামটি সম্পৃক্ত।
জনসেবা আর উন্নয়ন দিয়ে যে মানুষটি হবিগঞ্জবাসীর হৃদয়ের মনিকোটায় স্থান করে নিয়েছেন তার নাম জি কে গউছ। যার প্রমাণ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ পৌরবাসী দিয়েছেন। কারাগারে থেকেও নিজের যোগ্যতা ও গ্রহণ যোগ্যতার জানান দিতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। পৌরবাসীর ভোটে টানা ৩ বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাটিত হয়েছেন।
সরকারী দল পরিচালনায় এবং বিরোধী দলে থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ সরব রেখে দলীয় ফোরামেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। দলের প্রতি আনুগত্য আর দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে পৌর মেয়রের পদ ছাড়তেও তিনি দিধাবোধ করেননি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এই নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করেন টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার এই জনপ্রিয় মেয়র।
তিনি পরাজিত হলেও হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জের মানুষের হৃদয়ের মনিকোটায় তিনি ঠাই করে নিয়েছেন। মানুষের ভালবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন। রাজনীতির পাশাপাশি আলহাজ্ব জি কে গউছ “দৈনিক আজকের হবিগঞ্জ” এর সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
১৯৮৪ সালে তিনি এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারী কলেজে। একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাশ করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই তার উপর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পিত হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তখন জি কে গউছের মধ্যে ফুটে উঠে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিভা।
১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। টানা ৫ বছর তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে জিকে গউছ হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৯৫ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। বলিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ জেলায় যুবদলকে সু-সংগঠিত করেন। এরই ফলশ্র“তিতে তিনি জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সমবায় সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০৪ সালে বিএনপি’র তৎকালিন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জনাব তারেক রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকাস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হবিগঞ্জ জেলার সকল থানা ও পৌর কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের গোপন ভোটে জি কে গউছ হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে তিনি ২য় বারের মত হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পরে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ। এর পর থেকে তিনি বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বিএনপি’র বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ৫ বারের সফল অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের সাথে ছিল আলহাজ্ব জি কে গউছের অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ফলে রাজনীতির পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলার উন্নয়নে তিনি মনোনিবেশ করেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ হবিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন।
২০০৪ সালে আলহাজ্ব জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জীবনের প্রথম এই নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় ছিল তার রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই বছরে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল তা যে বিগত ২৫ বছরেও হয়নি সে কথা স্বীকার করেন তার চরম বিরোধীতাকারী লোকেরাও।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ছিল তার চোখে পড়ার মতো। ৫ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচনে ভোটাররাও এর প্রতিদান দিয়েছেন। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী ২য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন আলহাজ্ব জি কে গউছ। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎস্বর্গ করেন।
আলহাজ্ব জি কে গউছ অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রতি বছর সরাসরি প্রশ্নোত্তর বিষয়ক পৌরবাসীর মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এসব ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফলে তিনি ২ বার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোল্ড মেডেল অর্জন করেন।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কারাগার থেকে অংশ গ্রহন করেন বিএনপির এই সংগ্রামী নেতা। নির্বাচিত হন টানা ৩য় বারের মত মেয়র। পরে তিনি মিউনিসিপ্যাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ম্যাব এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন।
১/১১ এর সময় আলহাজ্ব জি কে গউছকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলকভাবে গ্রেফতার করা হয়। দেয়া হয় বিভিন্ন মিথ্যা মামলা। দীর্ঘ সাড়ে ১৯ মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই ১/১১ এর সময় দায়ের করা সকল মামলা থেকে তিনি বেখসুর খালস পান।
২০১৪ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক চার্জশীটে জি কে গউছকে আসামীর শ্রেণীভুক্ত করা হয়। এ বছরই ২৮ ডিসেম্বর আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করে কারাগারে যান জি কে গউছ। হবিগঞ্জ কারাগারে থাকা অবস্থায় জি কে গউছ কারা অভ্যান্তরে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই কারাঅভ্যান্তরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে এক আসামী আলহাজ্ব জি কে গউছকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিটে ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী ৭শ ৩৯ দিন দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারাভোগের পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তিলাভ করেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। এই নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পদত্যাগ করেন টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে।