জীবন ও জীবিকার রক্ষায় ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ দাবি মির্জা ফখরুলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৭ এএম, ২০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩২ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশে ধর্মীয় নেতা-আলেম-উলামাদের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার বিকালে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই লকডাউনে সুযোগ নিয়ে আমি আগেও বলেছি যে, একটা ক্র্যাকডাউন করা হয়েছে। সেই ক্র্যাকডাউনের মধ্য দিয়ে একদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের ধর্মীয় নেতা যারা আছেন, যারা আলেম-উলামা আছেন তাদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ, শ্রদ্ধেয় আলেম আছেন, এদেশে মানুষের কাছে যারা অত্যন্ত শ্রদ্ধারপাত্র তাদেরকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্যক মিথ্যা মামলাও দেয়া হচ্ছে। আমি আহবান জানাব যে, অবিলম্বে এই সমস্ত মামলা-মোকদ্দমা তুলে ফেলা হোক, ধর্মীয় যারা নেতা আছেন, আলেম-উলামা আছেন তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করা হোক এবং বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হোক এবং তাদের সকল মামলা তুলে নেয়া হোক।
তিনি বলেন, ধর্মীয় নেতাদেরকে গ্রেফতার করে আজকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের বুকে আঘাত করা হচ্ছে এবং তাদের আবেগ, সেন্টিমেন্ট সেখানে আঘাত করা হচ্ছে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, ধর্মীয় নেতাদেরকে এভাবে অপমান করা, তাদেরকে এভাবে হয়রানি করা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কিন্তু কোনোভাবে মেনে নেবে না। হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করে দলটির মহাসচিব বলেন, হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে আমরা বরাবরই বলেছি যে, তাদের সাথে আমাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। এটা কোনো রাজনৈতিক দলও নয়। সম্পূর্ণভাবে একটি ধর্মীয় সংগঠন। গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র আগমনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো সংগঠিত হয়েছে এটা তো সরকারের তৈরি করা। আমি এর আগেও বলেছি। সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাগুলো যাতে ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ২৬ মার্চ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন একই সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক সংগঠন তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে উপলক্ষ করে তারা বিরোধিতা করেছিলো এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিলো। আমরা দেখেছি যে, বায়তুল মোকাররমে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি হচ্ছিল তা শান্তিপূর্ণ ছিলো। এটাকে শান্তিপূর্ণ করে দেয়ার পেছনে পুলিশের সবচেয়ে বড় ভূমিকা এবং তার পরে আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরা তারা আক্রমণ করে এটার ওপর পুরোপুরিভাবে হামলা চালায়। সেই কারণে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে ও ব্রাক্ষনবাড়ীয়াতে এই ঘটনাগুলো সংগঠিত হলো। সেই কথাগুলো কিন্তু তারা (সরকার) কখনোই বলছে না। তারা বার বার করে দোষ চাপাচ্ছে যে, এই সমস্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলো এবং বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি এইসব ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি যে, ওইসব ঘটনাগুলোর সাথে বিএনপি কখনো জড়িত ছিলো না। আমরা প্রতিবাদ করেছি বিক্ষোভ করেছি- অবশ্যই। সেটা হচ্ছে যে, মানুষকে যখন বিনা কারণে হত্যা করা হলো। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছর তাকে কলুষিত করা হয়েছে জনগণের মানুষের রক্ত দিয়ে- সেটারই আমরা বিরোধিতা করেছি, আমরা প্রতিবাদ করেছি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সম্প্রতি দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এখন সম্পূর্ণ একটা গণবিচ্ছিন্ন দলের পরিণত হয়েছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই তাদের এখন রাষ্ট্রযন্ত্র ওপর ভর করে রাজনীতি করতে হচ্ছে, তাদেরকে রাজনীতি করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে, তাদেরকে রাজনীতি করতে হচ্ছে বিচার বিভাগ দলীয়করণ করে, তাদেরকে রাজনীতি করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করে। তাদের কোনো অধিকারই নেই যে, তারা এখনো বলবেন যে, আমরা গণতান্ত্রিক দল।
উনি যে কথাগুলো বলছেন, এটা ভূতের মুখে রাম নামের মতো। গত ১৭ এপ্রিল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব তুলে ধরেন। এই বৈঠকে দেশের করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, লকডাউনে নিম্নে আয়, দিন আনে দিন খায় মানুষজন, শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংকট, টিকার অনিশ্চিয়তা, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহাসচিব ছাড়া বৈঠকে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। ভার্চ্যুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকরা অংশ নেন।