লকডাউনের সুযোগে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১০ এএম, ১৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১৪ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
লকডাউনের সুযোগে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষের ভাল-মন্দ তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই সরকার বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালানোকে দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। লকডাউনের এই সুযোগে সরকার যেন ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। ভয়াবহ করোনা, রমজান এবং লকডাউনের মধ্যেও গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে। সর্বত্র আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় আক্রমণে বাংলাদেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দুর্যোগের কাছে মানুষের অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণে মৃত্যুভয় সবাইকে জড়োসড়ো করে ফেলেছে। প্রতিদিন মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে মানুষের দুয়ারে হাজির হচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা। দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর তালিকা লম্বা হয়েই যাচ্ছে। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯৬ জনের মৃত্যু সংবাদে আঁতকে উঠেছে দেশের মানুষ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসকে যদি এখনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে তা ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের মধ্যেও বাগাড়ম্বর বক্তব্য প্রদান ছাড়া সরকার জনকল্যাণে কোনো কাজ না করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া গতিতে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী সরকার আরো বেশি আগ্রাসী নাৎসীবাদী পথ অবলম্বন করে বিরোধী দলকে নিঃশেষ করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের এই ফ্যাসিবাদী নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে গিয়েও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণে পড়তে হয়েছে। ২০২১ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারের জোরালো হিড়িক শুরু হয়েছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে গত ২৮ মার্চ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, গত ১৩ এপ্রিল পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তার কারাবাস অন্যায়ভাবে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, পাঁচলাইশ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, রানীনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোশাররফ হোসেন, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, কিশোরগঞ্জে জেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোঃ কাইয়ুম মিয়া, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হেলাল আহমেদ, হালিম ফকির, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান এফ আই ফারুক, মহানগর বিএনপি নেতা ওয়াসিম আকরামসহ সারাদেশে বিএনপির ৪৭ জন নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ রাখতে গ্রেফতার করা হয়। খুলনা মহানগর বিএনপি নেতা বাবুল কাজী পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে গত ১১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৯ মার্চ খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি পুলিশের হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে দেড় মাস আগে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত পরশু মজনুর জামিন হয়, গতকাল জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সকল মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও কারাফটক থেকে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও যুবদল ময়মনসিংহ মহানগর সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেনসহ সারাদেশে যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি জে এম আমিনুল ইসলাম, ফরিদপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হাসান মৃধা, গাইবান্ধা জেলা শাখার সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের ১১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ময়মনসিংহ দক্ষিণ থানার সদস্য সচিব গোবিন্দ রায়, ছাত্রদল ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার আহবায়ক ইমন চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইফতেখার হায়দার, কটিয়াদি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আশিক রহমান, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হেলাল হোসেন গাজী, যশোরের এম এম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হাসান ইমাম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল হক, মাহবুব মিয়াসহ ছাত্রদলের ৮১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, যুগ্ম সম্পাদক আঁখি সুলতানা, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা লিটা এবং রিনা খানসহ মহিলা দলের ১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ ২০২১ থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১৭৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষের ভাল-মন্দ তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই সরকার বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালানোকে দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। লকডাউনের এই সুযোগে সরকার যেন ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। ভয়াবহ করোনা, রমজান এবং লকডাউনের মধ্যেও গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে। সর্বত্র আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে টুঁ শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্যই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছে সরকার। নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে দেশকে তারা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশকে বিএনপিশূন্য করাই যেন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর এখন প্রধান লক্ষ্য। বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরি করে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই সরকারের নিষ্ঠুর থাবা থেকে অন্যান্য বিরোধী দল ও মতের মানুষরাও রেহাই পাচ্ছেন না। বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে নিজেদের সৃষ্ট অনাচার এবং করোনার মহামারির অভিঘাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই দেশের ভয়াবহ সংকটে বা জনগণের দুর্দশা লাঘবে তাদের কোনো উদ্যোগ নাই। তারা নিজেদের অনৈতিক শাসন টিকিয়ে রাখতে দমন-নিপীড়নের স্টিম রোলার অব্যাহত রেখেছে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, হেফাজতে ইসলাম বা তাদের কোনো কর্মসূচির সাথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলাতেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে তাদেরকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আমি অবিলম্বে অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, শাহাদাত হোসেন এবং রফিকুল আলম মজনুসহ দেশব্যাপী গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।