ওই নারী মামুনুল হকের স্ত্রী নন, আরও ঘটনা জেনে জানাব - সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ৫ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৮ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হন। এরপর তিনি দাবি করেন, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আজ রবিবার সংসদে এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামুনুলের বিষয়ে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ওই নারী তার স্ত্রী নন। ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সোনারগাঁও উপজেলার একটি বেসরকারি হোটেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। টেলিভিশনে ওই নারী তা নিজের মুখে স্বীকার করেছেন। তিনি তার স্ত্রী নন। এ বিষয়ে আরও ঘটনা জেনে সবাইকে জানাব।
মন্ত্রী আরও বলেন, ওই ঘটনার পর দেখলাম ওই রিসোর্টের ওপর আক্রমণ। কেন এই আক্রমণ আমার জানা নেই। সেখানে কয়েকজন বিদেশি ছিলেন। পুলিশ ও বিজিবি গিয়ে তাদের রক্ষা করেছে। হেফাজতের তান্ডবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে এই ধরনের তান্ডব কেন, নিশ্চয়ই এর কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। যারাই তান্ডব করে থাকুক তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।’
এদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নানান প্রশ্নের মধ্যে গতকাল রবিবার সকালে মাওলানা মামুনুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজস্ব ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই নারীর সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি। মামুনুলের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো : হাফেজ শহিদুল ইসলাম আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একজন। সাংগঠনিক কাজে আমার দু-চারজন সহযোগীর অন্যতম। বেশ পুরনো আমাদের সম্পর্ক। সম্পর্কের গভীরতা পারিবারিক পরিধি পর্যন্ত। পরিবারসহ একে অপরের বাসায় যাতায়াত আমাদের দীর্ঘদিনের। সেই সূত্রে তার পারিবারিক অভিভাবকত্ব করতাম আমি। পারিবারিকভাবে খুঁটিনাটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য তারা আমার দ্বারস্থ হতো। দুই সন্তানের ছোট সংসার নিয়ে চলছিল তাদের জীবন। একটা পর্যায়ে এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে শুরু হয় মনোমালিন্য। মনোমালিন্য থেকে বাদানুবাদ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু। আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। তখন তাদের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি আমি। তাদের উভয়ের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু কোনোভাবেই আর সেটি সম্ভব হয়নি। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের। ছাড়াছাড়ির পর দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন হাফেজ শহীদুল ইসলাম। সেই বিবাহ আমি পড়াই। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। সেই ঘরে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে আরেকটি সন্তান। অপরদিকে হাফেজ শহীদ ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে যায় অনেকটা অসহায়। এক রকমের কূলকিনারাহীন। রাগের মাথায় সংসার ভেঙে গভীর সংকটে পড়ে যান তিনি। ওই পরিস্থিতিতে তার জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি আমার শরণাপন্ন হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেন। সেই দুঃসময়ে সহযোগিতা করার মতো আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না তার।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ এবং অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আমি তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করি। জীবনের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিতই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় তাকে। এমতাবস্থায় একজন বেগানা নারীর সঙ্গে এভাবে সম্পর্ক রাখাকে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, যত দিন তার অভিভাবকত্বের প্রয়োজন হবে আমার, তাকে বেগানা হিসেবে রেখে অভিভাবকত্ব করব না, বরং ইসলামী শরিয়তের আলোকে বৈধ একটা সম্পর্ক তৈরি করে নেব। বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলি এবং এ বিষয়ে তাদের জানিয়ে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিবাহের কালেমা পড়ে বিবাহ করে নিই। দুই বছর ধরে এভাবেই মানবিক ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমি তার অভিভাবকত্ব করছি এবং একজন অসহায় নারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি পুণ্যের কাজ করেছি বলে বিশ্বাস করি। আমি যা বললাম, এটা আল্লাহর নামে হাজারবার শপথ করে বলতে পারব। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কুল্লামার শপথও করতে পারি। বিষয়টি খোলাসা করার পরেও যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা আমার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করেছে এবং হামলা করেছে, গায়ে হাত তুলেছে, আমি এর বিচার চাই আল্লাহর কাছে, প্রশাসনের কাছে এবং জনগণের কাছে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের এই হামলা ও আচরণ প্রমাণ করে বর্তমানে বাংলাদেশে মান-সম্মান কিংবা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করা সম্ভব না।
শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রয়াল রিসোর্টের ৫ম তালার ৫০১ নম্বর কক্ষে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে ‘নারীসহ’ অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। মামুনুল হকের দাবি, সঙ্গে থাকা নারীর নাম আমিনা তৈয়ব। তিনি মামুনুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমিনাকে সঙ্গে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুক্ত হয়ে তিনি ফেসবুক লাইভে গিয়ে বলেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। মামুনুল হকের দাবি, সঙ্গে থাকা নারীর নাম আমিনা তৈয়ব। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী।