নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকার জড়িত - ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১০ এএম, ৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২২ পিএম, ৯ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ‘সিন্ডিকেট’-এর সাথে সরকার জড়িত থাকা কারণেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত যে সামনে রমজান আসছে। ইতিমধ্যে চাল-ডাল-লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সেগুলোর দাম যেভাবে বেড়ে গেছেÑ এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সব সময় ব্যর্থ হয়েছে।’
‘কারণ যারা দাম বাড়ায় সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকার জড়িত। সরকারের লোকেরাই এই সিন্ডিকেট তৈরি করে। যার ফলে এই অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে এই অর্থনীতি এখন একটা দুর্নীতিবাজদের অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, লুটেরাদের অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেটা আমরা বলে আসছি, বর্তমানে যে আওয়ামী লীগ সরকার এরা তো জনগণের পক্ষের সরকার নয়, তারা জনগণের বিরুদ্ধের সরকার। আগেরও বলেছি, বর্গীরা যেমন আগে বাংলাদেশে আসতো, লুট করতো আর চলে যেতো।’ ‘এরাও ঠিক একইভাবে লুট করছে এবং বিদেশে তাদের বিত্ত তৈরি করছে এবং সেখানে দেশের সম্পদ পাচার করে দিচ্ছে। দ্যাটস অল।’ একই সঙ্গে আবারো সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সংসদ নির্বাচনের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সকল দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ভার্চুয়ালি এই সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি মহাসচিব। ফের মামলা সরকারের চক্রান্তের অংশ মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের ঘটনা এটা হচ্ছে যে, সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগের যে চক্রান্ত, সেই চক্রান্তেরই একটা অংশ। অর্থাৎ এগুলো কিন্তু এখন যারা রাজনৈতিক বিশ্লেষক আছেন তারা মনে করছেন যে, এটা সরকারেরই সাজানো তৈরি।’ ‘মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, বিএনপিকে আবার মামলা-মোকাদ্দমার জালে জড়ানো। তারা যেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম করছিল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিচালনায়, তারা যেভাবে সংগঠিত হচ্ছিল। আমরা অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম, আন্দোলন শুরু করেছিলাম সেগুলোকে কী করে আবার আপনারা একেবারেই বন্ধ করে দেয়া যায়, নিশ্চিহ্ন করার যায় সেটারই একটা অংশ।’
২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে এবং সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ জনকে গুলি করে হত্যা এবং পরের দুইদিনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচিতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস সেল, গুলি করে মোট ২০ জনকে হত্যা জাতির জীবনে এক কলংকজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। প্রমাণিত হয়েছে যে, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের বেআইনি ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সকল মূল্যবোধকে ধ্বংস করে, একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হীন চক্রান্ত করছে।’
‘দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে। গত কয়েক দিনের সরকারি বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক হত্যা, আওয়ামী এজেন্টদের দ্বারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এবং সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য অডিও নাটক সাজিয়ে আমাদের নারী নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতার, রিমান্ডে নেয়া ও সারা দেশে পুনরায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করার হীন পরিকল্পনা করছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো দেখলেই এটা স্পষ্ট হবে যে, মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বিরোধী দলকে পুনরায় মামলা মোকাদ্দমার বেড়াজালে আটকে গণতন্ত্র উদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে ব্যাহত করা, দমন করা।’
গত কয়েকদিন দিনের বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকায় ৮টি মামলায় কয়েক হাজার আসামি, চট্টগ্রামের হাটাজারীতে কোনো মামলা করা হয়নি। অথচ বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের হামলায় প্রায় ৫০ জন আহত এবং চট্টগ্রাম মহানগর আহবায়ক ডা. শাহাদাতসহ প্রায় ২৪ জনকে গ্রেফতার, যার মধ্যে মহিলা হচ্ছেন ১৫ জন। ইতিমধ্যে শাহাদাতসহ প্রায় ১৫ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।’
‘হবিগঞ্জে মামলা ১টি, ৪০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি এবং বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র গউসের ছেলে ব্যারিস্টার মঞ্জুরুল কিবরীয়া প্রীতমসহ অনেক গ্রেফতার, নারায়ণগঞ্জে ৭টি মামলায় ৩,৯০০ আসামি, সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুনসহ ১৬৬ জন বিএনপির বাকি অজ্ঞাতনামা। কিশোরগঞ্জে ২টি মামলা ৬৪ জন বিএনপি, ২,২৫০ জন অজ্ঞাতনামা।’ নিপুণ রায় চৌধুরীর কথোপকথনে প্রচারিত অডিওটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী একজন কর্মরত আইনজীবী, একজন সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী এবং সচেতন রাজনীতিক। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে একটি ষড়যন্ত্রমূলক, সাজানো তৈরি করা এবং তাকে মিথ্যা দোষারোপ করার একটি জঘন্য চক্রান্ত।’
‘করোনার জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকার ব্যর্থ’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে যে সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়োজন ছিল জনগণের মধ্যে, সেই সচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তারা নিজেদের সুরক্ষিত রেখেছেন, নিজেরা মাস্ক পরেছেন, ফেস-শিল্ড পরেছেন, ঘর থেকে বেরোননি। আর সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিয়েছেন ঘর থেকে বেরোনোর জন্য।’
‘আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে কিভাবে একবার সব ফ্যাক্টরি খুলে দেয়া হয়েছে, কিভাবে আবার বন্ধ করা হয়েছে, কিভাবে আবার শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে, কিভাবে অফিসে যেতে বাধ্য করা হয়েছে সব লোকজনকে। একই সঙ্গে করোনার সুযোগ নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার বিরোধী দলকে দমন করার জন্য এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটসের এবার যে রিপোর্ট বেরিয়েছে সেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, করোনার সুযোগ নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার তারা বিরোধী দলকে দমন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এটাই বাস্তবতা।’