রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১০ এএম, ১ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের মাধ্যমে নির্লজ্জভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকার এখন আরও বেপরোয়াভাবে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের দমন-নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় গতরাত থেকে চট্টগ্রাম, নওগাঁ, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা চালিয়ে আহত করা, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, জুলুমবাজ সরকার কর্তৃক নির্বিচারে মানুষ হত্যা, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে হামলা এবং জনগণের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্দোলনকে দমন করতে গণবিরোধী সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় হামলা-মামলা-দমন-নিপীড়নের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ২৯ ও ৩০ মার্চ মহানগর ও জেলা সদরে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার পর এখন মিথ্যা মামলা দায়ের করে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করতে গ্রেফতারি অভিযান, হয়রানি ও জুলম চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় হয়রানি চলছে। গতকাল বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, নাজিমুর রহমান, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, মোঃ শাহ আলম, মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহানগর মহিলা দল সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনসহ মহানগর ও বিভিন্ন থানা নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গতরাতে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। হামলায় ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টো বিএনপির ৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। গতকাল নওগাঁ জেলায় বিএনপির পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলি, টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জের নির্মম হামলার পর রাতে নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য ও মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহাদেবপুর থানা শাখার সভাপতি আব্দুল হান্নান, মহাদেবপুর থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী সোবহান, সদস্য ইখতিয়ার উদ্দিন দুরন্ত, চঞ্চল, নওগাঁ পৌর বিএনপি নেতা মুকুল স্বর্ণকার, এনামুল হক, বাবু, জেলা যুবদল সদস্য আনোয়ার হোসেন, শহীদুল ইসলামের ওপর হামলা চালিয়ে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। খুলনা মহানগর বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনকে গতরাতে তার বাড়ির গ্রীল ভেঙ্গে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৯ ও ৩০ মার্চ ২০২১, বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা, হামলার পর ময়মনসিংহে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে গ্রেফতার করতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। গতকাল সকালে ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিশোরগঞ্জে গতকাল বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জের পর গতরাতে জেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, জেলা ছাত্রদলের সদস্য হাসিবুর রহমান মিশাদ, পৌর ৭ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনার মিয়া, যুবদল নেতা জাবাল মিয়া ও মোঃ বাবুকে গ্রেফতার ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বাড়িতে বাড়িতে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের মাধ্যমে নির্লজ্জভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী সরকার এখন আরও বেপরোয়াভাবে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিতে তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন যেন বর্তমান আওয়ামী সরকারের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। দেশকে বিরোধী দলশূন্য করতে বিএনপির যেকোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা, গুলিবর্ষণ ও নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতার বর্তমান গণধিকৃত সরকারের ধারাবাহিক অপকর্মেরই অংশ। সভা-সমাবেশ করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের কর্মসূচি পন্ড করতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিকে সরকারি নীতিতে পরিণত করেছে। সরকার দেশ শাসনে নজিরবিহীন ব্যর্থতা ঢাকতেই বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে আটকে রাখতে সুদূরপ্রসারী মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব মাস্টারপ্ল্যানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা। তবে সরকারের সকল অপকর্ম ও অপশাসনের মূলোৎপাটনে জনগণের ক্ষোভ এখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জনদাবি মেনে দমন-নিপীড়ন বন্ধ এবং পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে বর্তমান সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান। তিনি আহত নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনা করেন।