মোদিকে অভিনন্দন জানাতে জনগণকে জোরপূর্বক বাধ্য করছে সরকার - ডা. জাফরুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৪ এএম, ২৮ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫২ এএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নরেন্দ্রে মোদিকে অভিনন্দন জানাতে সরকার জনগণকে ‘জোরপূর্বক বাধ্য’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ শনিবার দুপুরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে বর্তমান পৃথিবীর নরাধম-নরপশু অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি তাকে অভিনন্দন জানাতে আপনি (সরকার) বাধ্য করতে চাইছেন আমার দেশবাসীকে, আপনি তাদেরকে জোর করছেন। আপনারা যাদের ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন সেই হেফাজত ইসলামও কিন্তু আজকে তার (নরেন্দ্র মোদির সফর) প্রতিবাদ করছে। আপনার পার্টির লোকেরাও আপনার সামনে এসে কথা বলতে ভয় পায়, তারাও আজকে প্রতিবাদ করেছে। কিভাবে? আপনি স্মরণ করুন। ১৭ মার্চ আপনার মহান পিতার জন্মদিবস। সেইদিন আওয়ামী লীগের প্ররোচনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লাতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার। তারা সংখালঘুদের ওপর অত্যাচার করে নাই। তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, মৌদিকে আমন্ত্রণ একটা ভুল কাজ।
গতকাল বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় মোদি বিরোধীদের সাথে পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের ডাকা রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সমর্থন জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, প্রতিবাদ করা আমাদের মৌলিক অধিকার। হেফাজতের কর্মসূচিতে সারাদেশে যেসব মৃত্যু হয়েছে এগুলো পরিকল্পিত হত্যা। ওইসব ঘটনায় যারা মারা গেছেন তারা যুবক। পাকিস্তানি কায়দায় এই নতুন প্রজন্মকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যারা হত্যা হয়েছে তারা শহীদের মর্যাদা পাবে, কিন্তু হাসরের দিন আপনি (সরকার) কি উত্তর দেবেন? শান্তিপূর্ণ যে হরতাল ডাকা হয়েছে তাদের বাধা দেবেন না, এটা আহবান করা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমি মনে করি, আমাদের সবারই উচিত সেই হরতালকে সমর্থন করা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ প্রতিবাদ সমাবেশের দুইদিকে দিয়ে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে সাড়ে ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের গেটের কাছে আসলেই ৪/৫ কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
রমনার জোনের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, মূলত কয়েকজনকে ধরা হয়েছে, আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করি নাই, পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে নেয়া হয়েছে গতদিন যে মামলা হয়েছে সেই মামলার সাসপেক্ট আসামি হিসেবে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো। তারা যদি আসামি না হয়, সাধারণ মানুষ হয় ছেড়ে দেবো।
গতকালের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন দফা তুলে ধরেন গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক জোনায়েদ সাকী। তিন দাবির মধ্যে আছে, শুক্রবারে বায়তুল মোকারকমসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় নরেন্দ্র মোদি বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশি হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, যারা হত্যা হয়েছেন তাদের সঠিক পরিচয় প্রকাশ, যথাযথ তদন্ত, বিচার, নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ওপর সংঘটিত হামলার তদন্ত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতা এমন জিনিস যা নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। সেটা ভারতে দেখছি আমরা কিভাবে ভারত পুড়ছে। সেটা বাংলাদেশে আসছে। এটা মোকাবিলা করা পথ কি? দক্ষিণ এশীয় জনগণের মৈত্রী, ঐক্য এবং যারা সাম্প্রদায়িকতা করে, যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গতভাবে এই বিজেপি সরকারের যে বিষবাস্প তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমাদের নাগরিকের কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আমরা এখানে প্রতিবাদ করতে এসেছি। গতকাল ছিলো আমাদের ইতিহাসের গৌরবের দিন। সেইদিনে কিভাবে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, কিভাবে ঢাকা শহরে নাগরিকদের অবরুদ্ধ করা হয়েছে, এক ধরনের হরতালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে এটাকে কেবলমাত্র মোদি ও সরকারি দলের উৎসবে পরিণত করা হয়েছে। এটা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা, এটা স্বাধীনতার অবমাননা, এটা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি অবমাননা।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজপথ রক্তে রঞ্জিত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিনাভোটের এই মাফিয়া সরকার ৪টি লাশ উপহার দিয়েছে। আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে ধিক্কার জানাই। আজকে তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের গোলামি করার জন্য ভারতে যেমন বিজেপি মসজিদে হামলা করেছে, মুসলমানদের কচু-কাটা করছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই বিনাভোটের মাফিয়া সরকার তাদের সুখের পাত্র নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করতে গতকাল স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, পুলিশ লীগ দিয়ে বায়তুল মোকাররমে তান্ডব চালিয়েছে, একই তান্ডব চালানো হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে, ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যেমন একাত্তরে গণহত্যা চালিয়েছিল রাতের অন্ধকারে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২৬ মার্চ ভারতীয় আধিপত্যবাদের এই গোলাম সরকারও একই গণহত্যা চালিয়েছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবলুর পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নঈম জাহাঙ্গীর, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত করীম, রাষ্ট্রবজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, ছাত্র অধিকার ফোরামের আকরাম হোসেন, ছাত্র ফেডারেশনের গোলাম মোস্তফা প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।