করোনা মোকাবিলায় সরকারের কোনো সফলতা নেই - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৪ এএম, ২৫ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৪ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
গত বছর থেকে এই পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় সরকারের কোনো সফলতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ’৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের ক্ষমতা দখলে ২৪ মার্চ কালো দিবস শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখুন করোনা ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার এটার জন্য পুরস্কার নাকি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী করোনাকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। অথচ আজকে সারা বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার দরকার ছিলো সে সমস্ত কোনো কাজই তারা করে নাই। এখন কী বলছে- এখন নাকি আইসিইউ বেড নেই? কেনো এক বছর ধরে কি করলেন? একবছর পর্যন্ত কেনো আইসিইউ বেড সংগ্রহ করতে পারলেন না, কেনো বাসায় বাসায় সংক্রমিত হচ্ছে, কেনো মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেন না, যে সচেতনতায় মানুষ সবসময় মাস্ক পড়বে।
সিঙ্গাপুরের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিছুদিন আগে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম, সেখানে মানুষকে মাস্ক পরতে বলতে হয় না। মানুষ সবাই মাস্ক পরে। কেনো? সরকার তাদেরকে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে ভালোভাবে যে, মাস্ক পরতে হবে। না পরলে ৫শ ডলার ফাইন। আর আপনারা সেখানে (সচেতনতা) থেকেও দূরে সরে গেছেন।
তিনি বলেন, আজকে ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। আমরা কখনো ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কথা বলি নাই, আমরা অবশ্যই ভ্যাকসিনের পক্ষে। কারণ আমরা জানি যে, ভ্যাকসিন ছাড়া এই ভাইরাসের প্রতিষেধক হবে না। আমরা যেটা বলতে চেয়েছি যে, আপনারা ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি করছেন। ২ ডলার ৩৩ সেন্ট করে একটা ভ্যাকসিন কেনার কথা সেখানে ৫ ডলার দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ আপনারা এতো বড় দুর্নীতি করেছেন। আপনারা দেখছেন পত্র-পত্রিকায় এসেছে স্বাস্থ্য বিভাগের বড় বড় নেতা-কর্মকর্তারা মন্ত্রীসহ কিভাবে তারা দুর্নীতি করেছে এই পিপিই-পোশাক-টোশাক নিয়ে, ওষুধ-টষুধ নিয়ে।
ওরা প্রতি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানায়। ঘটনার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন যে, এটা বিএনপি করেছে। ধরা পড়লো কে? যুবলীগের স্বাধীন মেম্বার ধরা পড়লো আর আপনারা বলছেন যে, বিএনপি এটার সঙ্গে জড়িত। আসলে ওরা তো প্রতি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে- এই আসলো, এই বিএনপি আসলো। ওরা বিএনপি ছাড়া কোনো কথা বলে না, সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সম্প্রীতি বিনষ্টের সব যা কিছু হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। আমি সেদিন বলেছি আপনারা একটা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখুন যে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের কত জমি, কত বাড়ি কারা দখল করে আছে। দেখবেন যে, বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে আছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হয়েছে। ৭ ঘন্টায় ৫ হাজার বাড়ি পুড়ে গেছে। মারা গেছে প্রায় ১৫ জন জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী। আমরা বার বার বলে আসছি যে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। এতটুকু জায়গাতে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখা, তাদের ভরণ- পোষণ করা, তাদেরকে সুন্দরভাবে রাখা-এটা বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা বলেছি যে, এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। সমাধান করার আপনারা চেষ্টা করছেন না, আপনারা এটাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। দেখেন এই নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। আজ পর্যন্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোনো রাষ্ট্র সফর করেননি শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করার জন্য, আজ পর্যন্ত আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি চমৎকার কথা বলেন ভারতের সাথে তাদের এতো সম্পর্ক আছে সেই ভারত তো আমার পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে কথা বলে নাই, সেই চীনের এতো চমৎকার সম্পর্ক আমাদের সেই চীন তো এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কেনো? আপনাদের ব্যর্থতার জন্য, আপনাদের কথা আপনাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য আজকে সমগ্র বিশ্বকে আপনাদের পক্ষে আনতে পারেননি।
এই সরকার কৌশলী সরকার বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অত্যন্ত কৌশলী সরকার। কি বলব চালাক, কৌশলী বলি। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সবসময়। কারণ এটা অবলম্বন না করলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি, তারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দেখুন না এই ৫০ সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, আসলে পালন তো করছে মুজিববর্ষ। সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছেন তাহলে মানুষ কোথায় আপনাদের সঙ্গে, মানুষ তো আমি দেখি না, জনগণ তো সঙ্গে নাই। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রোগ্রাম করছে সেখানে শুধুমাত্র ব্যুরোক্রেটস-আমলা, কিছুসংখ্যক তাঁবেদার গোষ্ঠী আর তো কাউকে দেখা যায় না। আর বাইরে থেকে কিছু মেহমান নিয়ে আসছেন। সেই মেহমানরা কি বলেন? তাদের দিয়ে বলাতে চান যে, এক অভূতপূর্ব অলৌকিক উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের সামনে কোনো অভাব নাই। অথচ আমাদের চালের দাম ৮০ টাকা, তেলের দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষের সব কিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ওরা যতই বলুব, যতই ঢাকঢোল পিটাক, সত্যটা হচ্ছে গরীব আরো গরীব হচ্ছে, ধনী আরো ধনী হচ্ছে। মেগা প্রকল্প শুধু মাত্র মেগা দুর্নীতি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, এই সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য যত রকমের অবৈধ কাজ আছে তা করছে, যত রকমের মিথ্যা আছে তারা করছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার তা করছে। এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। আজকে আওয়াজ উঠেছে। আজকে আল-জাজিরা টেলিভিশনে যে রিপোর্ট এসেছে, দি ইকোনমিক্সটে যে তথ্য এসেছে, ডয়েচে ভেলেতে যে কথা এসেছে তাতে করে আপনাদের সেইদিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। আমি বলতে চাই, আজকে শুধুমাত্র সেøøাগান দিলে হবে না, সংগঠন তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, আমাদেরকে শ্রমিক সংগঠন, আমাদেরকে যুব সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সেই শক্তি নিয়ে আমাদের একত্রিত হতে হবে। আর সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করতে হবে এবং একটা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে- এই হোক আমাদের আজকের দিনে শপথ।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করেন। আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে। আমাদেরকে কিন্তু গণতন্ত্র কেউ এনে দেবে না। গণতন্ত্র আমাদেরকেই নিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমাদের সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুদ্দিন মনি, খোন্দকার লুতফর রহমান, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদাক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন বক্তব্য রাখেন।