জনগণকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে সরকার - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২০ এএম, ২৪ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২৭ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
জনগণকে বাদ দিয়ে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দেখার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই অভিযোগ করেন।
বেলা ১২টায় হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দেখতে আসেন মহাসচিব। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলীয় কর্মসূচির সময়ে পুলিশি হামলায় সোহেল গুরুতর আহত হন। পরে তার দেহে অস্ত্রোপচারের জন্য এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। এ সময়ে বিএনপি দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সুবর্ণজয়ন্তীটা পালন করছে জনগণকে বাদ দিয়ে। জনগণ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সুবর্ণজয়ন্তীর যে অনুষ্ঠানগুলো তারা করছে এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবস্থান নেই। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনো অবস্থান নেই। শুধু মাত্র বিদেশি মেহমানদের নিয়ে এসে এখানে দেখানো হচ্ছে, বলানো হচ্ছে যে, আপনার উন্নয়নের লৌহরী বয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটারের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের প্রতিবেশী চারটি বন্ধু দেশ এসে গেছে। তাদের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এবং আগামী ২৬ মার্চ আমাদের বন্ধু দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন। আমরা সবসময় বলে এসেছি যে, আমরা সমসময়ই আমাদের দেশে বিদেশি বন্ধুদের স্বাগত জানাই এবং সুবর্ণজয়ন্তীতে অবশ্যই আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাবো।
দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপননে বিএনপির সারা বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণের কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সেই কর্মসূচিগুলো পালন করছি। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে গত ১৭ তারিখ থেকে এই সুবর্ণজয়ন্তী ও বর্ষ পালন করার কারণ দেখিয়ে এবং বিদেশি মেহমানরা আসবেন সেই কারণ দেখিয়ে আমাদের কর্মসূচিগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে কি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আসছেন নাকি পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচনি প্রচারণা করতে আসছেন এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, পশ্চিম বাংলার পত্রিকাগুলো, ভারতের পত্রিকা, আমাদের দেশের পত্রিকাগুলোতে সেই ধরনের ইঙ্গিতই আমরা পাচ্ছি। মূলত তার (নরেন্দ্র মোদি) এই ভিজিটের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে সেই সমস্ত মন্দির পরিদর্শন করছেন যে সমস্ত মন্দিরে তাদের অনুসারী রয়েছে, তাদের যে ভোট পশ্চিম বাংলায় রয়েছে সেই ভোটের জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। এটা পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে ৫০ বছর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যে অধিকার তা হারিয়ে ফেলেছি, আমরা আমাদের মানুষের অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলেছি। এখানে যে পরিস্থিতিতে সরকার দেশ পরিচালনা করছেন সেটা কোনো মতেই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়, সংবিধানকে তারা সংরক্ষণ করছেন না, এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, ভারতের সাথে সম্পর্ক আরো উন্নত করতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে অভিন্ন নদীগুলো রয়েছে তার হিসসার মীমাংসা হওয়া উচিত, সীমান্তে হত্যা বন্ধ হওয়া উচিত। কানেকটিভিটিতে আমার কী লাভ হচ্ছে সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। এই কথাগুলো আমরা বরাবরই বলে আসছি। আমরা এখনো পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, সীমান্তে হত্যা অবিলম্বে বন্ধ হোক। যেটা অমানবিক। যেটা পৃথিবীর কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা আছে কিনা আমরা জানি না। এতো বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সঙ্গে এটুকু সমাধান করতে পারেন না। তিস্তা নদীর চুক্তি হচ্ছে না, ফেনী নদীর পানি একতরফাভাবে নিয়ে গেছে। সেতুও তৈরি হচ্ছে কানেকটিভিটিতে। অথচ আমাদের মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান হচ্ছে না। আমরা এখনো প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশ সরকার আমাদের দাবিগুলোকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে আমাদের কোটি কোটি মানুষের সমস্যার সমাধান করবেন।
করোনা সংক্রমণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসপাতালগুলোতে বেড নাই। এতোদিন ধরে কী করলেন বেড নাই কেনো? কখন থেকে আমরা বলছিলাম। সেই বেড তো তারা যোগাড় করতে পারেননি। চিকিৎসা ঠিক মতো দিতে পারেন না। জনগণের সমস্যা বাড়ছে, করোনা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে, আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। আমাদের অনেক নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন, অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা বার বার বলছি যে, এ ব্যাপারে সরকারের সব কিছু বাদ দিয়ে একেবারে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সকলের সাথে কথা বলে নিয়ে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি সরকার মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে না এজন্য যে, তাদের নিয়তেরই ঠিক নাই। তাদের তো লক্ষ্য একটাই কখন কোত্থেকে তারা চুরি করবে। মানে কথা বলছি একেবারে সরাসরি। প্রত্যেকটা বিষয়ে যখন দুর্নীতি করতে চায় তখন তো সমাধান করা সম্ভব না। আর করোনার মতো একটা সমস্যা যেটা সারা বিশ্বে আজকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানবসভ্যতার জন্য সেটাকে সমাধান করার জন্য যে আন্তরিকতা, যে নিষ্ঠা এর কোনটাই না। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম যে, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও এনজিও তাদেরকে ডেকে একটা পরিকল্পনা রোড ম্যাপ তৈরি করা। ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক কথা আসছে। যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই ফাস্ট ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এগুলোর তো সমাধান বলতে হবে তাদেরকে।