মানুষের আস্থার জায়গাটা শেখ হাসিনার জন্য ক্ষীণ হয়ে গেছে : গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৬ এএম, ২৩ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৬ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আগমন ও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপিসহ দেশের বিরোধী মতের জনগণকে ঘরবন্দি রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এটা কিসের স্বাধীনতা? স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্বাধীনতা আজ বিবর্ণ।
আজ সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত এক দোয়া মাহফিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গয়েশ্বর এ সব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি নেতা বেগম সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী, ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিনসহ নেতাকর্মীদের রোগমুক্তি কামনায় এ দোয়া মাহফিল হয়।
বিদেশিদের সার্টিফিকেট এখন বেশি প্রয়োজন হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কারণ মানুষের আস্থার জায়গাটা শেখ হাসিনার জন্য ক্ষীণ হয়ে গেছে। সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আসুক। ভালো কথা। এটা তো ভালো। সুবর্ণজয়ন্তীতে আসবেন। এটা আমরা স্বাগতম জানাই। কিন্তু তাদের কারণে আমাদের ঘরে বন্দি থাকতে হবে। আমরা আমাদের উচ্ছ্বাস ও আনন্দ উপভোগ করতে পারবো না, এটা কিসের স্বাধীনতা? কি কারণে বলছি বিপন্ন স্বাধীনতা? এই কারণেই বলছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, উনি কারাবন্দির জায়গায় গৃহবন্দি। কারাগারে থাকা অবস্থায় সরকারের যে আচারণ ছিল গৃহে থাকা অবস্থায় সরকারের একই আচরণ আছে। এক কথায় তিনি মুক্ত নন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে আমাদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস প্রতি বছর পালন করি কিন্তু এবার তাও পালনের সুযোগ রাখা হয়নি। বিশ্বের সবার জন্য অভিশাপ হলেও শেখ হাসিনার জন্য করোনা আশীর্বাদ। এটাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধির দোহাই দিয়ে সবাইকে বিরত রাখছেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ করোনার মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি করতে পারবে না। আসলে গোটা জাতিকেই স্বাধীনতার চেতনা বোধ থেকে আলাদা করা হচ্ছে।
সুবর্ণজয়ন্তীতে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের জন্য বিদেশিদের সার্টিফিকেট বেশি প্রয়োজন হয়ে গেছে। সুবর্ণজয়ন্তীতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আসুক ভালো কথা। এটা আমরা স্বাগতম জানাই। কিন্তু তাদের কারণে আমাদের ঘরবন্দি থাকতে হবে, উচ্ছ্বাস ও আনন্দ উপভোগ করতে পারবো না-এটা কিসের স্বাধীনতা?
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্বাস্থ্যবিধি কোথায় বলে প্রশ্ন করে গয়েশ্বর বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী আসবেন। আবার বলেন আসবেন না। আবার বলেন, আসবেন। তিনি আসবেন। আবার সরকার নাকি চায় না, তিনি আসুক-এমন একটা গুজব কিন্তু মাঠে-ঘাটে আছে। তিনি আসবেন ২৬ ও ২৭ মার্চ। নিরাপত্তার প্রশ্ন। তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণ দিবস পালন করতে আসবেন। তিনি মন্দির ভিজিট করবেন। মন্দির তো জাতীয় ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির এখানে আছে। কিন্তু তিনি গোপালগঞ্জের মন্দিরে যাবেন। তিনি সাতক্ষীরা মন্দিরে যাবেন। এর আশ-পাশের লোক এখনই ঘর ছাড়া। নিরাপত্তা বলে একটা কথা আছে। যেখানে যাবেন ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে। তার ভক্ত লক্ষ লক্ষ। একটা অনুষ্ঠান হয় ৭ দিনব্যাপী। সেখানে ১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ লোকের আগমন হয়। এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য যদি এতো লোকের আগমন হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধিটা কোথায়? সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বাধা নাই ?
গয়েশ্বর চন্দ্র আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মতুয়া সম্প্রদায়ের যারা এখানে ঔরস আছে তাদের সাথে মোলাকাত করতে আসছেন। এটা একটা নির্বাচনি প্রচার। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ (বাংলাদেশ)। অন্য দেশে নির্বাচনে অনেক দল অংশগ্রহণ করে, আমরা যদি একটি দলকে নির্বাচনের সুযোগ করে দেই তাহলে কী দাঁড়ায় ?
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, আজ বাংলাদেশের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে এ তালিকার বাইরে আরও অনেকেই অসুস্থ আমাদের জানা মতে। শুধু কোভিড-১৯ আক্রান্ত তা নয়, আরও অনেক রোগে অনেকেই আক্রান্ত। তবে আরও জটিল বিষয় হচ্ছে, যারা করোনার টিকা নিয়েছে তাদের অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে আরও বিড়ম্বনা হচ্ছে, গতকাল সারা দিন দেখলাম সমস্ত টেলিভিশন, অনলাইন, পত্রিকায় নিউজ এসেছে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা হতে পারে। লকডাউন হতে পারে। এ কথাটি বলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আজ আবার দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলছে ‘একথা আমরা বলি নাই। যারা বলছে তারা মিথ্যা বলছে’।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, গতকালের ওই নিউজের কারণে ওইসব টেলিভিশন বা পত্রিকার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হবে কিনা জানি না। যদি সরকারের আঁচলের তলে থাকে তাহলে হয়তো হবে না। আর তা না হলে হতেও পারে। অসুখের যন্ত্রণার চেয়ে এই যন্ত্রণা কম নাকি আমাদের জীবনে? এই জুলুম, অত্যাচার, খামখেয়ালিপনা, জাহেলিয়াত এটাও তো অনেক বড় জিনিস। এ সময় যুবদলের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেন, মহান আল্লাহতায়ালা যেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নেক হায়াত দান করেন, যারা পৃথিবী থেকে চলে গেছেন তাদেরকে জান্নাতবাসী করেন, তারেক রহমানকে দেশে ফেরত এসে নেতৃত্ব দেয়ার তৌফিক দান করেন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজগর হোসেনের সভাপতিত্বে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।