খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন : ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ১৯ মার্চ,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সারাজীবন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন রাজনীতিতে আসেন তখন মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেব সেই সময় থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার দলের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি এত জনপ্রিয় ছিলেন যে বারবার মানিকগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি থেকে শুরু করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের অত্যন্ত খারাপ সময়ে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি বলবো ১/১১ এর সেই দুর্দিনে তিনি শুধু মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেননি, প্রকৃতপক্ষে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের উভয় দায়িত্ব পালন করেন। কেননা আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তখন বন্দি। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেব সিনিয়র নেতা হিসেবে আমাদের নেত্রী মহাসচিবের দায়িত্ব অর্পণের জন্য তাঁকেই উপযুক্ত মনে করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করেছিলেন তার অনুপস্থিতিতে এমন একজন নেতাকে দায়িত্ব দিতে হবে যিনি দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব উভয় হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। সেই ব্যক্তি ছিলেন মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। সেই সময় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সাথে থেকে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে দলকে পরিচালনা করেন।
১/১১ সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের তখনকার কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করতে তার সন্তানকে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। তারপরও তিনি দলের দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে একচুল পিছুপা হননি। আমরা জানি সেই সময়ে একটি সংস্থা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বিভক্ত করার জন্য মরহুম সাইফুর রহমানের বাসায় মোটামুটি জোর করে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন প্রকার কথা বলে তাদেরকে একত্রিত করেছেন। কিন্তু সেখানে মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিতে পারেননি। তিনি যখন জানতে পারলেন এইভাবে একটি আয়োজন হচ্ছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তিনি তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা পত্রিকায় দেখেছি তিনি যে কেবিনে ভর্তি হয়েছেন সেখানে এসে তাকে জোর করে সাইফুর রহমানের বাসায় নিয়ে যেতে পারে সেই ভয়ে তিনি কেবিন থেকে পালিয়েছেন। তাকে কিন্তু তখন হাসপাতালে এসে সেই সংস্থাটি পায়নি। তিনি সেইদিন সেখান থেকে পালিয়েছেন বলেই সংস্থাটির যে ষড়যন্ত্র সেটা পরিশেষে বাস্তবায়িত হয়নি। তাই আমি সবসময় বলি মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ব্যতিক্রমধর্মী মহাসচিব।
তিনি বলেন, সেই সময়ে ১/১১ সরকারের একটা ষড়যন্ত্রই ছিল যে মাইনাস ওয়ানের নামে বেগম খালেদা জিয়া ও বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। সেই ধরনের অতি জঘন্য ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করেছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেব। এজন্য বিএনপি তথা বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে স্মরণ রাখবে।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমাদের দলের জন্য যারা পিলার ছিলেন তারা এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছেন। অবশ্যই তাদের স্মরণ করা উচিত, তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করা উচিত। রাজনীতিতে তাদের যে কমিটমেন্ট তা স্মরণ করা উচিত। তাহলেই আমরা আবার যেই দুঃসময় অতিক্রম করছি তা মোকাবিলা করতে তরুণরা সাহস পাবে।
মোশাররফ বলেন, দেশ আজ নৈরাজ্যকর অবস্থার মাঝে অতিক্রম করছে। সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ব্যাংকের টাকা লুট, রিজার্ভের টাকা লুট। অন্যদিকে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি, হত্যা, খুন, গুম। এমন কোনো অপকর্ম, এমন কোনো অন্যায় নাই যা আজকে স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে ঘটছে না। তাই আমরা যখন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে স্মরণ করবো তখন তার রাজনৈতিক সাহসী চরিত্র ও কমিটমেন্টকে ধারণ করে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, দেশের মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের শপথ নিতে হবে। তাহলেই মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে স্মরণ করা সার্থক হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের বড় ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।