দেশে জনগণের ভোটের অধিকার নাই - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৭ এএম, ১৭ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৩ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ও বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি আফরোজা খান রিতা, জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিবের বড় ছেলে ড. খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু এবং মেজো ছেলে খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষীয়ান এই নেতার রাজনৈতিক আদর্শ ও দলের ক্রান্তিকালে সাহসী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন গণতন্ত্র রক্ষায় আপোসহীন নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আমৃত্যু দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ১/১১ এর সময়ে তার সাহসী পদক্ষেপ জাতীয়তাবাদী দলের সকল সমর্থকদের প্রেরণা জুগিয়েছে। জাতি আজো তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
মহান স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ইচ্ছে করলেই খেতাব বাতিল করা যায় না। এমনকি জামুকা বা সরকারও এই খেতাব বাতিলের ক্ষমতা রাখে না। তার খেতাব বাতিল করা হলে স্বাধীনতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাচুরিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার ঘিওর উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামে যান। বিএনপি মহাসচিব তার কবর জিয়ারত করেন ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন।
এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠকে রোধ করা হয়েছে। দেশে জনগণের ভোটের অধিকার নাই। সাধারণ মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা বেআইনিভাবে বসে আছেন। অনির্বাচিত সরকার বেআইনিভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিদেশি অতিথিদের আগমনের অজুহাতে ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের মধ্য দিয়ে সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। সরকার নিজেদের প্রয়োজনে অন্যান্য সমস্ত রাজনৈতিক দলের অধিকার হরণ করেছে। আজ সময় এসেছে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেছে নিয়ে চরম কর্তৃত্ববাদ সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করা।
প্রসঙ্গত, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং দলের মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার পর তিনি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে পুনরায় তিনি বিএনপির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৭৯ সালে মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসনে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন সংসদীয় দলের চীফ হুইপ এবং সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী সংসদীয় দলের চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭৬-১৯৭৮ এবং ১৯৮৪-১৯৮৫ সালে মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং ১৯৭৯-১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কোঅপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ছিলেন মানিকগঞ্জ খোন্দকার নূরুল হোসেন ল’ একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ। এছাড়া তিনি তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন কলেজ এবং পাচুড়িয়া মাদ্রাসা। ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে।
উল্লেখ্য, দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত বিএনপির প্রয়াত এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।