জিয়ার খেতাব বাতিল করলে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৭ এএম, ১৬ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১৯ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘বীরোত্তম খেতাব’ সরকার বাতিল করলে তা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির কর্মসূচি তুলে ধরেন কমিটির সদস্য সচিব আবদুল হাই শিকদার।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার বলছি, জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) কোনো এখতিয়ার নেই এই বিষয়ে (জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিল) সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর সরকার যদি এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চরম বিশ্বাসঘাতকতা হবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা হবে এবং এই সরকার যে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বাস করে না সেটাই প্রমাণিত হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও তথ্য তুলে ধরছি। মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও উপাত্ত যেভাবে আমরা উপস্থাপন করছি তাতে আমরা দেখতে পারছি যে, যারা এখন সরকারে আছেন আওয়ামী লীগ তারা নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তারা প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে আবার ইতিহাসকে খন্ডিত করছে, আবার ইতিহাসকে তারা বিকৃত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। আপনারা জানেন যে, মুক্তিযুদ্ধের যদি প্রকৃত ইতিহাস বলতে যাই সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ লিখতে পারবে না। আমরা বিভিন্ন সভায় ইতিমধ্যে বক্তব্য রেখেছি যে, বাংলাদেশে কোনো একজন সেনা অফিসার পাকিস্তানের ছাউনি থেকে প্রথম যে পাকিস্তান ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রিভোল্ট করেছে তার নাম অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত সত্যগুলো তুলে ধরছি বলে আওয়ামী লীগের সহ্য হচ্ছে না, বর্তমান সরকারের সহ্য হচ্ছে না। সেই কারণে তারা বিকৃত ইতিহাস দিয়ে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। সেই কারণে আপনারা দেখবেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার পরিবার ও বিএনপিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। কারণ তারা দুর্বল। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ৫০ বছরে যত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস যদি আমরা পর্যালোচনা করি সেখানে আওয়ামী লীগ আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে বিএনপির সকল ক্ষেত্রে সফলতা। যেমন স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিলো গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্রকে কারা হত্যা করেছেন? আজকে যারা ক্ষমতায় ’৭৫ সালে বাকশাল করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। আবার কে এই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন? যিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সেই জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন বাকশালকে মাটি দিয়ে। আবার হোসেইন মো. এরশাদ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপোসহীন সংগ্রাম করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই যে ইতিহাস তাতে প্রত্যেক জায়গায় আওয়ামী লীগ পেছনে পড়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থায়ী কমিটির সদস্য করোনায় আক্রান্ত সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরীর আশু আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিন ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনায় ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) ডিএমপির যিনি ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্বে আছেন (মনিরুল ইসলাম) তার নির্দেশনা আমাদের বিস্মিত করেছে। কারণ সরকারি প্রোগ্রামের সাথে আমাদের প্রোগ্রামের কোনো কনফ্রনটেশন নেই। তারা তাদের প্রোগ্রাম করবে, আমরা আমাদের প্রোগ্রাম করবো। এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে আমাদের রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য সব রকমের অনুষ্ঠানে যেন বাধা সৃষ্টি করা না হয় সেই অনুরোধ আমরা জানাচ্ছি- বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু তাই নয়, তিনি (মনিরুল ইসলাম) বলেছেন যে, এন্টি ন্যাশনাল প্রোগ্রামস। এটা কেন বলেছেন, কিভাবে বলেছেন, সেটার একটা ব্যাখ্যা আমরা জানতে চাই। ‘নো ওয়ান শুড হোল্ড দেট- হি সেইড, হোয়াট হি সেইড- এন এন্টি ন্যাশনাল প্রোগ্রাম। হোয়াট ডাজ মিন বাই এন্টি ন্যাশনাল প্রোগ্রাম?’ উনি কী বুঝাচ্ছেন এটা আমাদেরকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযপান করা বা পালন করা কী এন্টি ন্যাশনাল প্রোগ্রাম? তারা (সরকার) ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না- এটা কোন ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে আসছে আমরা বুঝতে পারছি না। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে নেয়া কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা তো অবশ্যই সরকারি প্রোগ্রাম হবে। বিদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় মেহমানরা আসবেন। আমরা যথাসম্ভব নিঃসন্দেহে সেটাকে সহযোগিতা করবো।
তিনি আরো বলেন, এটা আমাদের জাতির সম্মানের প্রশ্ন, এটা আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন আমরা অবশ্যই সেটাকে সেইভাবে দেখবো। কিন্তু হঠাৎ করে ডিএমপি থেকে এই ধরনের নির্দেশনা আমি মনে করি যে, আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের যে উদ্দেশ্য, সেটাকে ব্যাহত করবে। একইসঙ্গে স্বাধীনতার বিষয়টাকে প্রশ্নবিদ্ধি করছে কিনা এটাও আমাদেরকে লক্ষ্য করে দেখতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে যে কথাটা বলতে চাই, বিএনপি হচ্ছে একটি সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনতার যোদ্ধাদের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। একাত্তর সালে বিএনপি ছিলো না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি এই দল পরে প্রতিষ্ঠা করেছেন গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রবর্তন করবার জন্যে, প্রতিষ্ঠা করবার জন্য।
তিনি বলেন, বিএনপি সব সময়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। মূল চেতনা যেটা ছিলো সেটাকে বিশ্বাস করে, জনমানুষের যে আকাক্সক্ষা সেটাকে সামনে রেখে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে বিএনপি কাজ করে আসছে, করেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে বিএনপি, সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে বিএনপি, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে বিএনপি, জনগণের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকার নিশ্চিত করেছে বিএনপি, গণতন্ত্রের যে মৌলিক বিষয়গুলো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যখন আমরা ৫০ বছর পরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি তখন সেই গণতন্ত্র বাংলাদেশে নেই, মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে দেশে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবার জন্য, একটা নীলনকশা প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।
১৬ থেকে ৩০ মে উপজেলা ও থানা পর্যায়ে, ১ জুলাই থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর জেলা পর্যায়ে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ২০২২ সালের ২৬ মার্চ জাতীয়ভাবে সমাপনী কর্মসূচি করবে এই কমিটি। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, স্বরচিত কবিতা ও ছড়া, আবৃত্তিকারদের আবৃত্তি, শিশু-কিশোর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপস্থিত বক্তৃতা এবং কুইজ প্রতিযোগিতা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান সারোয়ার, নজরুল ইসলাম মনজু, ফরিদা ইয়াসমীন, রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান, শাহজাহান সম্রাট, রিটা আলী, মনিরুজ্জামান মনির, এনামুল হক জুয়েল, মিজানুর রহমান, রফিক লিটন, আরিফুর রহমান মোল্লা প্রমুখ।