আ.লীগ দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৮ এএম, ১৪ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামী লীগ দেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে চিকিৎসা ও সেবা কমিটির এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে চিকিৎসা ও সেবা কমিটির উদ্যোগে সারাদেশের মহানগরে একযোগে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হয়। রক্তদান কর্মসূচির পাশাপাশি ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসাপত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবারহ করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে যেজন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছি, আমাদের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়ে গেছেন, মা-বোনেরা সম্ভ্রম দিয়েছেন, সেই স্বাধীনতা সেই গণতান্ত্রিক চেতনা, সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ আজকে দেশে একটা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ৫০ বছর পরে আমাদেরকে তাই আজকে শপথ নিতে হবে যে, আমাদেরকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, আমাদের এদেরকে সরাতে হবে।
তিনি বলেন, এদের এখনকার লক্ষ্য একটাই- বাংলাদেশকে লুট করে নেয়া। আমরা ছোট বেলা মায়েদের কাছে বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে গান শুনতাম- ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে। এই বর্গীদের ভ‚মিকায় নেমেছে তারা। বর্গীরা যেমন বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেতো, বাংলাদেশের কৃষককে লুট করে নিয়ে যেতো, সেইভাবে তারা আজ সমস্ত বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সেই কানাডার বেগমপাড়ায় অথবা মালয়েশিয়াতে অথবা আমেরিকাতে-ফ্লোরিডাতে, ইংল্যান্ডে তারা বাড়ি-ঘর তৈরি করছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই জনগণের বন্ধু ছিলো না। আমার দুঃখ হয় যে, তারা এক সময়ে পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে। আমাদের যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বসে আছেন তিনি একসময়ে ছাত্রলীগের বড় নেতা ছিলেন, ভিপি ছিলেন, তিনিও কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বাধীনতার পরের যে ভ‚মিকা, সেই ভ‚মিকায় থেকে থাকতে পারেননি, তিনি বেরিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তারা সেই গণতন্ত্রের মধ্যে আর নিজেদের ধারণ করতে পারছে না। কারণ গণতন্ত্র হলে তো ক্ষমতা চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, গণতন্ত্র হলে তো সবাইকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে, গণতন্ত্র মানলে তো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে-এগুলোর মধ্যে তারা নাই। তারাই সব। তারাই মালিক, আমরা হচ্ছি সব প্রজা। তারা হচ্ছে প্রভু, আমি হচ্ছি দাস, সাধারণ মানুষ দাস। এভাবে গোটা বাংলাদেশকে তারা দেখে, বরাবরই দেখে এসেছে।
দলীয়করণের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আপনারা খুব ভালো করে জানেন, আওয়ামী লীগ সারাদেশে যেভাবে ভয় দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে যেখানে গণতন্ত্র চলতে পারছে না। এই যে আমাদের চিকিৎসক ভাইয়েরা আছেন- এতোটুকু গন্ধ আছে যাদের বিএনপির, ভিন্নমতের ভালো ভালো জায়গা থেকে সব বদলি, অনেকের চাকরি চলে গেছে, অনেকে নিজেই বাধ্য হয়ে অবসরে চলে গেছেন। ঠিক একইভাবে সমস্ত জায়গায়, সব সেক্টরে। এমনকি আমরা শুনতে পাই জানি না সত্য কি মিথ্যা, সেনা বাহিনীতে পর্যন্ত যদি দেখা যায় বিএনপির আত্মীয়-স্বজন আছে তাকেও চাকরি থেকে সরে যেতে হয়। আর পুলিশ তো পরিষ্কার বলেই বসে আছে যে, আমরা হচ্ছি মালিক। কি বলে যেন, ‘বাতির রাজা ফিলিপস, মাছের রাজা ইলিশ আর বাংলাদেশের রাজা হচ্ছে পুলিশ। এরা বলতে কোনো দ্বিধা করে না, তাদের যে বডি ল্যাংগুয়েজ তাদের ঊধর্বতন কর্মকর্তাদের। তারা যখন কথা বলেন, মনে হয় যে, আমাদের প্রভু বসে আছে, অ্যাম্পারার, সম্রাট বসে আছে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা সুপরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। এই মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামে যাদের অবদান সেগুলোকে একেবারেই খাটো করে অথবা একেবারেই না বলে মাত্র একটি ইতিহাস তারা বলতে চেয়েছে তা হচ্ছে যে, এই পুরো স্বাধীনতার জন্য একজন ব্যক্তি, একটি পরিবার, একটি গোষ্ঠী বা একটি রাজনৈতিক দলই একমাত্র কৃতিত্বের দাবিদার। এটি সত্য নয়। এই কথা আমরা বার বার বলে আসছি এবং একটা অসত্য প্রমাণ করবার জন্যই আমরা ২ তারিখে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সামনের সারিতে ছিলেন, তারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন এবং ২ তারিখে পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন সেই দিবস আমরা পালন করেছি। আমরা ৭ মার্চ পালন করেছি। অনেকে এই দিবসটি পালন নিয়ে আমাদের ভুল বোঝার চেষ্টা করেছেন। আমরা কী বলেছি ৭ মার্চে। আমরা বলেছি যে, ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা আসে নাই। আমরা বলেছি যে, স্বাধীনতা একদিনে কোনো একটা ভাষণের ফলে যুদ্ধে পরিণত হয় নাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধ, যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্ত ও স্বাধীন হলাম এবং পরাজিত করলাম পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে। যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা সমগ্র জাতিকে একটা হতাশা থেকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করা হলো সেই মহান নেতা মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আমরা তুলে আনতে চেয়েছি। এটা বুঝতে হবে। একতরফা হয়ে থাকলে চলবে না, দলকানা হলে চলবে না। ইতিহাসকে ইতিহাস দিয়েই মূল্যায়ন করতে হবে এবং সেটাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন প্রভৃতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে সেই আওয়ামী লীগ দানবের মতো আমাদের ওপর চেপে বসে আছে। আসুন, একাত্তর সালে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবার, বৈষ্যমহীন বাংলাদেশ তৈরি করবার, চিন্তার-কথা বলার স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠা করবার সেই বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আমরা শপথ গ্রহণ করি।
স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমারা সারা বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কর্মসূচি করে জনগণের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরব। আমাদের বার্তা এই যে, মুক্তিযুদ্ধের মূল ইতিহাস, সত্যিকার ইতিহাস। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশে শুধু একটি দল ক্ষমতায় ফ্যাসিস্ট কায়দায় টিকে থাকার জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করছে বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য। সেজন্য আমরা প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কি? অনেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম-আন্দোলন, স্বাধিকারের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে এক করে এই প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে চায়। কিন্তু একটি সংগ্রাম, একটি আন্দোলন আর একটি মুক্তিযুদ্ধ এক কথা নয়। মুক্তিযুদ্ধ বা যেকোনো যুদ্ধ একটা সময়ে শুরু হয়, একটা সময়ে শেষ হয়, মুক্তিযুদ্ধ বা যেকোনো যুদ্ধ অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে যখন আক্রমণ করা হয় বা প্রতিরোধ করা হয় অস্ত্রের সাহায্যে তখনই যুদ্ধ শুরু হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সেইভাবে শুরু হয়েছিলো। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনী এদেশে গণহত্যা শুরু করেছে তথন কিন্তু রাজনীতিবিদদেরকে তাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেথা যায় নাই। সেই রাতে চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন মেজর যিনি সাহসী এবং কি পরিমাণ দেশপ্রেমিক হলে তিনি সেই দিন তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ২৫ তারিখ শেষ রাতে ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে রিভোল্ট করেছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। একথা আমি যখন বলি- যারা ইতিহাস বিকৃত করেন তারা এর পরিবর্তে বলেন দেখি আর একজনের নাম, যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রিভোল্ট করেছে। জিয়াউর রহমানের বাইরে আরেক জনের নাম বলতে পারেন কিনা। পারবেন না।
তিনি বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা ’৭৫ সালে যেমনিভাবে বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে তেমনিভাবে আজকে তারা ১২ বছর যাবত গণতন্ত্রকে হত্যা করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজকে অর্থনীতি ঠিক একইভাবে লুট হচ্ছে, ব্যাংক লুট হচ্ছে, শেয়ার বাজার লুট হচ্ছে। হেন কোনো অকর্ম নাই, হেন কোনো খারাপ কাজ নাই এখন হচ্ছে না। যদি আমরা ৫০ বছরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যায় আওয়ামী লীগ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যায়। আর বিএনপি সকল ক্ষেত্রে দেখা যায় সফল। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এই গণতন্ত্রের আন্দোলন, অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনে, সামাজিক সাম্যের আন্দোলনে এবং রাজনৈতিক সাম্যের আন্দোলনে সকল ক্ষেত্রে যদি আমরা প্রকৃত ইতিহাস আজকে তুলে ধরি তাহলে আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ, বিএনপি সেখানে সফল। সেজন্য আওয়ামী লীগ বিএনপির নাম শুনলে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম শুনলে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম শুনলে, তারেক রহমানের নাম শুনলে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়, কম্পন শুরু হয়। এই দুর্বলতাকে ঢাকার জন্য তারা প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায়।
চিকিৎসা ও সেবা কমিটির সদস্য ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, ড্যাবের এমএ সেলিম, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদুল আলম, পারভেজ রেজা কাঁকন, সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মেহেদি হাসান, সম্মলিত পেশাজীবী পরিষদের শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।