সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২১ এএম, ১১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৪৬ পিএম, ১৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪
ক্ষমতাসীন সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিটি করপোরেশনসমূহের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আজ বুধবার বিকালে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে দুইটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সারাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই সমাবেশ হয়। নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে বিএনপির সমাবেশ এলাকা। দুপুর ২টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই সমাবেশস্থল ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নির্ধারিত খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। কানায় কানায় সমাবেশের সামনের স্থান পূরণ করে নেতাকর্মীরা এখন মঞ্চের পেছনে এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন।
সমাবেশে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আজকের সমাবেশ মোহাম্মদপুরে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সমাবেশে যাতে নেতাকর্মীরা না আসতে পারে সেজন্য গতকাল রাতে তড়িঘড়ি করে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু সরকার ব্যর্থ হয়েছে ষড়যন্ত্র করে। বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী সরকারের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আজকের সমাবেশস্থলে এসেছেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এই সমাবেশ সমবেত হয়। নেতাকর্মীদের হাতে হাতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ‘দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেব জনগণের হাতে’ প্ল্যাকার্ড এবং বাংলাদেশের জাতীয় ও বিএনপির পতাকা ছিল। তারা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘ভোট ভোট চোর’ এর মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশের দুই ধারে বিএনপির আবদুস সালাম পিন্টু, ইসহাক সরকারসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবি সম্বলিত পোস্টার ছিল। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পুরো সড়কে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদপুরের শহীদ পার্কে। রাতে পুলিশ সেখানে আপত্তি জানালে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে খিলগাঁওয়ে আনা হয়।
যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়-খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এই যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। আজকে এই জনসভা থেকে আমরা ঘোষণা করতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা গঠন করতে হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কী ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ৬ জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। তাদের ভোটের দিন সবাইকে বের করে দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা তাদের পছন্দমত ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়, সেই ২০১৮ সালের আগে থেকে ২০১৪ সালে যে নির্বাচন সেই নির্বাচনেও আরেকটি নির্বাচন কমিশন তারাও ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষিত করেছে। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেইনি।
আবার ২০১৮ সালে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে। লজ্জা হয়- চিফ ইলেকশন কমিশনার তিনি যখন বলেন যে, ভোট সুন্দর হয়েছে, সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ তারই একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব তিনি খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণ করার, ভোট পরিচালনা করার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্য নয়।
নির্বাচনের প্রতিবাদে জানাতে বিভিন্ন মহানগরী সমাবেশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কেনো এতো ভয়? জনগণের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেনো? জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেনো? কারণ আমরা জানি জনগণ যদি ভোট দেয়, ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনদিনই আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার খুব দুর্বল সরকার। এতো দুর্বল যে তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয়। এই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই যে আপনারা মোবাইল বলেন, ফেসবুক খোলেন-এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। কে কোথায় কি বলে না বলে ওইগুলো দেখে। তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেটা আল-জাজিরা টেলিভিশন আবার সেটা প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার। সেই প্রচারে আমরা বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট চিফ জাস্টিস। আমরা সবসময় বলি ধর্মাবতার, ধর্মের অবতার। অর্থাৎ আল্লাহর পরেই বলা হয় যে, বিচারক যে সত্যকে ধর্ম বলে সত্য কাজ করবে। তারা কি বলেছে? তারা বলেছে, লেখালেখি করা ভালো কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়-এটা আমরা মেনে নেবো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। সেজন্য মুশতাক আহমেদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, তার মাথার মধ্যে রক্তপাত হয়। সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না রাষ্ট্রের? আমরা যখন দেখি প্রায় ৭শ লেখক তারা লেখালেখি করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকা পড়ে আছেন তখন রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় না। আমরা যখন দেখি যে, আমেরিকাতে ১০ জন সিনেটর তারা সিনেটে চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় চরমভাবে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না। যখন সাত সাতটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দেয়-বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার নেই, লঙ্ঘিত হচ্ছে অন্যায়ভাবে এখানে হয়রানি-নিপীড়ন করা হচ্ছে তখন ইমেজ নষ্ট হয় না।
৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদের অবদান ছিল তার সঠিক ইতিহাস জানাতেই বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, শুধুমাত্র একজনের জন্য, শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীর জন্য, শুধুমাত্র একটি পরিবারের জন্য, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এদেশে স্বাধীনতা আসে নাই। বছরের পর বছর ধরে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের পরিশ্রম, যে আত্মত্যাগ, আমাদের নেতৃবর্গের যে আত্মত্যাগ সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। সেই স্বাধীনতাকে কি করেছো তোমরা? সেই স্বাধীনতাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছো। আমি জানি না আমি কি করে স্বাধীন বলবো। আমি বলতে পারি না, আমার সেই অধিকার নেই, আমি কথা বলতে পারি না। আমার লেখার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। লিখলে জেলে দিচ্ছে, জেল থেকে জামিন পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে আমার ন্যায্য হিস্যা রয়েছে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সেই হিস্যাও চাইতে পারবো না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব। সীমান্ত হত্যা নিয়ে এই সরকারের এত দুর্বলতা কেনো? কেনো সে নিজের নাগরিকের কথা বলতে ভয় পায়। কেনো কানেকটিভিটি ওরা চায়? আমরা চাই যে, কানেকটিভিটি হোক। বাণিজ্য বাড়ুক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু আমি কিছুই পাবো না। আমি পোর্ট দিয়ে দেবো, আমার এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেবো, আমার রাস্তা ব্যবহার করতে দেবো কিন্তু বিনিময়ে আমি ফেনী নদীর পানিরও হিস্যা পাবো না, তিস্তা নদীর পানিরও হিস্যা পাবো না। এটা হতে পারে না। সেখানে আমরা স্বাধীন কোথায়?
সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের দুরভিসন্ধির কোনো সীমা নাই। তারা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু বুঝে না। একমাত্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেই তারা ক্ষমতায় টিকে আছে, টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন যে সরকারের আওয়ামী লীগের নৈশভোটের নির্বাচনের যে বৈধতা দিয়েছে, সেই বৈধতা দেয়ার ফলে আজকে আওয়ামী একটা ভূত আমাদের ওপর চেপে বসেছে। তাদের অত্যাচার, তাদের নিপীড়ন, তাদের লুট, তাদের খুন- এর কোনো শেষ নাই। আমি এই অথর্ব নির্বাচন কমিশনারদের বলতে চাই, এই সমস্ত খুন, লুট, খুনি-ডাকাতি কোনো কিছু থেকে আপনারা মাফ পাবেন না। আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার আগে এই নির্বাচন কমিশনারদের বিচার হবে, তাদের শাস্তি হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেন, জিনিসপত্রের দাম কমান, মানুষকে কথা বলার স্বাধীনতা দেন। তা না হলে জনগণ বিস্ফোরণ ঘটাবে, আর সেই বিস্ফোরণে রক্ষা পাবেন না। সামনে রমজান মাস আসছে। বাজারে যান, খোঁজ নিয়ে দেখেন, জিনিসপত্রের দাম তিন-চার গুণ ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজের, লবণের ও তেলের দাম বেড়ে গেছে। শেখ হাসিনার উপদেষ্টাদের সাথে ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেছে এই ফাঁকে হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে লুটপাট করা যায়। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে বক্তব্য দেয়া শুরু করেছে, তাতে মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে বলবেন জিয়া উদ্যানের কবর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে মারার জন্য ব্রাশফায়ার করছে। তিনি (শেখ হাসিনা) যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, এই যে ডিজিটাল কালো আইন। এই আইনের মধ্য দিয়ে যে কুকীর্তিগুলো হচ্ছে, এই কুকীর্তি বন্ধ করার জন্য হলেও এ আইন বাতিল করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে যুবদলের সাবেক সভাপতি আরও বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছেন। আপনার নিজের ঘরে যে হাডুডু খেলা হচ্ছে। সেগুলো আগে বন্ধ করেন। নোয়াখালীতে কাউয়ামুক্ত আওয়ামী লীগ ও কাউয়াওলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের মধ্যে লেগে গেছে। ইতিমধ্যেই ৩/৪টা উইকেট পড়ে গেছে। ড্রেসিং রুমে প্রায় আরও ৭০ জন অপেক্ষা করছে। কাউয়াকে থামাতে পারছেন না, কাউয়াবিরোধী কেউ থামাতে পারছে না। পুলিশরাও আহত হয়েছে। পুলিশ ভাইয়েরা সেটা চোখে দেখে না। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পুলিশে ২ ভাগ হয়ে গেছে। পুলিশের এক ভাগ বলছে, মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে ওসি প্রদীপ, আর এক ভাগ সেটার বিরুদ্ধে নারাজি দিচ্ছে। আবার হাজি সেলিমের ছেলেকে একভাগ মামলা দিচ্ছে, আর এক ভাগ ছেড়ে দিচ্ছে। এই নাটকগুলো কেন করা হচ্ছে? মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, মানুষ আশায় আছে বেগম খালেদা জিয়াকে মাঠে দেখার জন্য। বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেন, জিনিসপত্রের দাম কমান, মানুষদেরকে কথা বলার স্বাধীনতা দেন। তা না হলে জনগণের যে বিস্ফোরণ ঘটবে, সেই বিস্ফোরণে রক্ষা পাবেন না। যত সুরক্ষিত অবস্থায় থাকেন না কেন। আগুনের লেলিহান শিখা যেখানে যাবে সবকিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের দাবিগুলো মেনে নেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেছেন, অনেকেই বলেন, এই রাষ্ট্র এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাই আমিও বলি, এই পুলিশ আর পুলিশ নাই। এই পুলিশ আর ওনাদের (আওয়ামী লীগের) পার্থক্য একটাই পুলিশ পোশাক পরে আর ওনারা পরে না। তিনি বলেন, আমাদের আজকের সমাবেশ মোহাম্মদপুরে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওনাদের পছন্দ হলো না এবং জনগণ বেশি হবে বলে তারা সেখানে করতে দেয় নাই। ওনারা (আওয়ামী লীগ) যা ভাবছে বা বলবে তাই করতে হবে? না, আমাদের স্বাধীনতা আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা অনেক ধৈর্য ধারণ করেছি। ওনাদেরকে (পুলিশকে) বলতে চাই আপনাদের বেতনের টাকা কি শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে আসে? আপনাদের বেতনের টাকা দেয় এই দেশের কৃষক-প্রবাসী। তাদের টাকায় আপনাদের বেতন দেয়া হয়। কিন্তু আপনারা হাসিনার কথামতো অন্যায়ভাবে চলেন। তিনি বলেন, এখনও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যে দিন আইন মানবো না, সেদিন কোথাকার বাঁশ কোথায় যাবে বুঝতে পারবেন। তাই এখন দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আজকে তালতলার মার্কেটের সামনে যে জনতার ঢল নেমেছে সেখানে বিএনপি কর্মীরা শুধু নয়, সাধারণ মানুষও আজকে যোগ দিয়েছে। আমরা জানি, ঢাকাসহ বাংলাদেশে ভোট কর্মসূচি নামে একটা তামাশা দেখছি। নিয়মিত আমাদের ভোটকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, আগের রাতে ভোটের বাক্স ভরিয়ে রাখে তারপরে ইভিএমের মাধ্যমে আমাদের ভোট ছিনিয়ে নেয়। ওনারা হয়তো সংখ্যা অঙ্কতে একটা কাগজে লেখতে পারে। ভোটাররা কি চায় সেটা আমাদের সকলের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের সকলের সামনে দেখানো হয়েছে যতই চুরি করুক জনতা আমাদের সাথে, আমাদের মেয়রদের সাথে, আমাদের ধানের শীষের সাথে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে আর ‘নিশ্চুপ’ না থেকে রাস্তায় নামতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সরকার পতনের আন্দোলনে প্রথম বুলেট বুক পেতে নেব বলে জানিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে। আমি বলতে চাই, তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মেনে নেব না। আমি কথা দিচ্ছি এই আন্দোলন সংগ্রাম সফল করতে এই রক্ষীবাহিনীর পতন ঘটাতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য বুক পেতে দিবো। পেছনের দিক দিয়ে পালিয়ে যাবো না। আপনাদেরকে সাথে নিয়ে ইনশাআল্লাহ এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর পতন ঘটাবো। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও, তালতলা মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ কথা বলেন। ইশরাক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি, ক্ষমতায় যাওয়ার যে একটা লালসা সেখান থেকে আমাদের মধ্যে বিবাদ, বিভাজন, বিরোধ, মারামারি, হানাহানি করছি। এখানে লাভ কার হচ্ছে? এখানে একটি স্বার্থবাদী, মাফিয়া গোষ্ঠী, ভূমিদস্যু, যারা বিএনপির সময় ব্যবসা করেছে, আওয়ামী লীগের সময়েও ব্যবসা করেছে, জমি দখল করেছে, বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করেছে, গরিব দুঃখী কৃষকদের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম নকি ও ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বরিশালের অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার, খুলনার নজরুল ইসলাম মনজু, চট্টগ্রামের ডা. শাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি কেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, আতিকুল ইসলাম মতিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ প্রমুখ। এছাড়াও সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, জলবায়ু বিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ভিপি হারুন, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, জাসাসের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. খালিদ আলম শিপু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম পারভেজ, নাছির উদ্দিন, গোলাম সাবের চৌধুরী কিরন, গাজী আশরাফ হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ভিপি হানিফ, হেলাল তালুকদার, বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান, পল্টন থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসাইন আব্দুর রহমান, ২৪নং ওয়ার্ড সাবেক কমিশনার মো. মাহমুদুল আলম মন্টু, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন দেলু, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান, ৫০নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিশনার প্রার্থী দেওয়ান মো. নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খানসহ মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।