স্বাধীনতার ইশতেহারের অঙ্গীকার আ.লীগ সরকার কখনোই পূরণ করেনি - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৯ এএম, ৪ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩০ এএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বাধীনতার ইশতেহারের কোনো অঙ্গীকারই আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পূরণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এর আগের দিন ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বিএনপি এই দুইটি দিবসই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কর্মসূচির অংশ হিসেবে পালন করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই স্বাধীনতা সংগ্রাম যেটা হয়েছিলো, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমরা, স্বাধীনতার যে কমিটমেন্ট ছিলো, যে ইশতেহার ছিলো তার একটাও আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দিনই পূরণ করেনি। তারা বাকশাল গঠন করেছিলো, পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো, অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছিলো, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলো এই আওয়ামী লীগ। আজকে একটা ভিন্ন মোড়কে ছদ্মবেশে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছে।
এই অবস্থার পরিবর্তনে করণীয় তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সভার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠানকে আহবান জানাতে চাই যে, আসুন ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আরেকবার লড়াই করি, আরেকবার যুদ্ধ করি। আমরা কারো সেবাদাসে পরিণত হতে চাই না, আমরা কারো হুকুমের দাস হতে চাই না। আমরা আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা আমাদের নিজেদেরকে আরো বিকশিত করতে চাই, আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটা আবাসস্থল গড়ে তুলতে চাই, যেখানে তারা মুক্ত বাতাসে বাস করতে পারবে। আসুন, সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর যে দানব বসে আছে যেটা আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেব বলেছিলেন সরকার মনোস্টার। সেখান থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করি।
তিনি বলেন, আজকে যে বিষয়ে আলোচনা করছি- শাহজাহান সিরাজের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যারা স্বাধিকার আন্দোলনকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, যারা অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো তাদেরকে এখন আওয়ামী লীগ স্মরণ করে না। স্মরণ করে না আসম আবদুর রবকে, স্মরণ করে না শাহজাহান সিরাজকে। আমরা সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তাদেরকে সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। আমরা ইতিহাসে যার যার অবস্থান সেটা দিতে চাই।
স্বাধীনতার ইশতেহারের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। কোথায়? আওয়ামী লীগের শাসনে বাংলাদেশে এই ১৫ বছরে কোথায় এইসব? এখন ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য আকাশ সমান-পাহাড় সমান হয়ে গেছে, বাক স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়ে গেছে। আর অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা সেøাগান দেয়-উন্নয়ন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আর সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য। এক শ্রেণির মানুষ আওয়ামী লীগের যারা মদদপুষ্ট তারা ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করে দিচ্ছে। আরেক শ্রেণির মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, খেতে পারছে না, চরম নৈরাশ্যের মধ্যে আছে। এই হচ্ছে তাদের (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশ।
বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, লেখক মুশতাক আহমেদ তাকে শুধু সমালোচনামূলক একটা লেখার জন্যে এবং সেটা নিজে না, কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর লিখতে গিয়ে তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ৬ মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিলো। এই মুশতাক আহমেদ একা নন। এই ধরনের ৭শ মানুষকে তারা শুধু সমালোচনা করার জন্য তাদেরকে তুলে নিয়ে আটক করে রেখেছে। আমাদের ছাত্রদলের নেতারা এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনারা দেখছেন- কি নির্মমভাবে নিষ্ঠুরভাবে তাদের এখানে নির্যাতন করা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে পিটিয়েছে। শুধু তাই না, তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে কী পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এখন জানতে চান, পুলিশ প্রতিপক্ষ কেনো? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন নিজেদের।
নির্বাচন কমিশনও প্রতিপক্ষ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনকে দেখেন। প্রকাশ্যে প্রেসের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরেকজন নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ভীষণ তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। আরে ভাই, সারা বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-একটা বাদে ৮০% তারা নিয়েছে। আমার নিজের পৌরসভাতে ৭ দিন আগে থেকে তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা সমস্ত নেমে পড়ে বিএনপির যতজন নেতা-কর্মী সবাইকে এরেস্ট করেছে। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন নেই।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। এই ৩ মার্চে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তীকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ এই পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। গতকাল পালন করেছি পতাকা উত্তোলন দিবস। সেই সময় ডাকসুর ভিপি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আসম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কেনো এই দুইটি দিন উদযাপন করছি? কেননা, আজকে যারা প্রজন্ম, আজকে যারা ছাত্র সমাজ তারা যাতে বুঝতে পারে যে, সেদিন যদি পতাকা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তুলতে হয়, পল্টন ময়দানে স্বাধীনতার ইশতেহার শাহজাহান সিরাজকে পাঠ করতে হয়- সেদিন কী বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিলো না। এটা যাতে আজকের প্রজন্ম প্রশ্ন করতে পারে সেদিন রাজনৈতিক দল কারা ছিলো? তখনই তো আসবে সেদিন এমন একটি রাজনৈতিক দল ছিলো তারা পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কি দায়িত্ব ছিলো? তাহলে কেনো ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়েছিলো।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে শেষবারের মতো বাংলাদেশে আর একটা লড়াই করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল আমাদের নেতা (তারেক রহমান) সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তবে ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলতে চাই- ওবায়দুল কাদের সাহেব, তাকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি তো ‘বাঘের বাচ্চা’।
তিনি বলেন, আপনারা একটা নেতা দেখানতো ৫০ বছরের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার জন্য উদ্বোধন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১ মার্চ উদ্বোধন করেছেন। আপনাদের তো কত বড় বড় নেতা আছে, প্রধানমন্ত্রী আছে, মন্ত্রী আছে, একটু দাঁড়িয়ে উদ্বোধন করতে পারলেন না? লাগলো তো সেই তারেক রহমানকে। তাহলে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন কেন?
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, এই মানুষটাকে (তারেক রহমান) দেশে ঢুকতে দেন না। এই মানুষটাকে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। এই পরশু দিন একটা মামলা দিয়েছে। মামলার পর মামলা দিচ্ছেন। মামলা ছাড়া আপনারা (আওয়ামী লীগ) কিছুই দেখতে পান না। আর না হলে হুমকি ধামকি দেন।
কৃষক দলের আহ্বায়ক বলেন, শেরে বাংলা ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, সবার শেষে আমরা আমাদের নেতার কথা বলি। এই যে তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে আপনারা সমালোচনা করেন। তিনিই প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। কত বড় হৃদয় তার। এরকম সাহস কারো আছে? আপনাদের (আওয়ামী লীগের) নিচের একজন কর্মীও যদি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করত তাহলেও বুঝতাম আপনারা একজন কর্মীকে শিক্ষিত করে ইতিহাসের কাছে দিয়েছেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা সত্যকে মানে, বাংলাদেশকে মানে, দেশের ইতিহাসকে মানে, আগামী দিনটা তো তাদেরই। মিথ্যাবাদীদের না।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
এ ছাড়াও সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ- সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনায়াতুল হাফিজ, পল্টন থানা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসাইন আব্দুর রহমান, শ্যামপুর থানা বিএনপি নেতা হাজী মো. জামির হোসেনসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।