নৌকার ভোট প্রকাশ্যে কাউন্সিলর ভোট গোপন কক্ষে, পরামর্শ আ.লীগ নেতার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৭ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পঞ্চম ধাপে আজ রবিবার অনুষ্ঠেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যের ভোট দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী নায়ার কবীরের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র কাউন্সিলরের ভোট গোপন কক্ষে হবে। তাহলে নৌকার ভোট প্রকাশ্যে নেয়া হবে কি না সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে আল মামুন সরকার কথা না বলে চুপ থাকেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১০ জন করে ভলান্টিয়ার রাখবে আওয়ামী লীগ। যাদের গায়ে থাকবে লোগো সম্বলিত বিশেষ পোশাক।
এই ঘোষণার পরে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন অন্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়া বলেন, আজকের এই বক্তব্যের পরে আর নির্বাচন থাকে না। সম্প্রতি উত্তর পৈরতলা এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি সভায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, আগে নৌকার ভোটটা ওপেন দিয়া এরপরে ভিতরে গিয়া কাউন্সিলর যাকে পছন্দ লাগে তাকে ভোট দিবেন।’
সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আল মামুন সরকার বলেন, ‘আপনারা এমনভাবে মাঠে নামবেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নৌকা ছাড়া আর কোনো কিছু থাকবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সভায় সব কাউন্সিলর প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারাই বলেছেন, নৌকার ভোট তারা প্রকাশ্যে চান। তাদের সুরে সুর মিলিয়ে আমি সেই কথা বলেছি। প্রতিটি কেন্দ্রে ভলান্টিয়ার নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল মামুন সরকার বলেন, ‘ভলান্টিয়াররা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবেন। তারা নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচনি পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে। সেখানে দলীয় স্বেচ্ছাসেবক কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন পৌর এলাকার কাজীপাড়ায় অনুষ্ঠিত একটি উঠান বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের উদ্দেশে আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘মেম্বারের (কাউন্সিলর) ভোট যেন আমরা দিতারি (দিতে পারি), হেই ব্যবস্থা কইরা দিবা। আর নৌকার ভোটটা আমরা ওপেন দিয়ালাইতে (দিয়ে ফেলতে) চাই। যদি আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি, নৌকার ভোটটা যেন সবাই দেলা। আর ওই (কাউন্সিলর) ভোটটা গোপনে হইলেও আমাদের কোনো আপত্তি নাই।
তিনি আরও বলেন, ‘মেম্বাররার (কাউন্সিলরদের) মধ্যে ডেক্কাডেক্কি (ধাক্কাধাক্কি) করলে আমরার নৌকা পিছে পইড়া যাইবোগা। আমি একটা মত বা প্রস্তাব দিয়া যাই, আমরা নৌকাডারে নিশ্চিত করতে কাউন্সিলরদের মধ্যে ঐক্য করা যায় কি না। আমাদের নেতা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কাজীপাড়ার মানুষদের তিনি ভালোবাসেন, সম্মান করেন। তিনি দায়িত্ব দিছে মন্টু ভাইকে (জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু)। ওনার দিকে তাকাইয়া আগামী ২৮ তারিখ আমরা কাজীপাড়ার মানুষ দল-মত নির্বিশেষে নৌকা প্রতীককে জয়ী করব।’
তার দেয়া এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান হোসেন বলেন, ‘কাজীপাড়ায় আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী অনেক। আমরা কয়েক জনকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি খন্দকার শাহনেওয়াজ প্রস্তাব তোলেন- নৌকার ভোট ওপেন এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট যেন গোপনে হয়। নিজের স্বার্থে তিনি এই প্রস্তাব করেছেন। তার আত্মীয় কাউন্সিল পদপ্রার্থী। আমি এই প্রস্তাব সমর্থন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নৌকায় ওপেন ভোট দেয়ার বিষয়টি আরও অনেক সভায় খোলামেলা আলোচনা হচ্ছে। বড় বড় নেতারা বললে কোনো দোষ নেই, এখন আমি বলাতে দোষ হয়ে গেল?’
সম্প্রতি জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক খোকন অভিযোগ করেন, তার অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ক্রসফায়ারের ভয় দেখাচ্ছে, যেন কেউ ভোটকেন্দ্রে না যায়। আমরা আশা করছিলাম সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে ভোট তারা লুটে নিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ওপেন ভোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গোপন কক্ষে ভোট দেয়ার জন্যই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পৌর নির্বাচনকে ঘিরে মোট ৪৮টি কেন্দ্রের ৩৩৯টি ভোটকক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের ব্যাপার।’
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মোট ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ছয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন এবং সংরক্ষিত চারটি ওয়ার্ডে ১৫ নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার মোট ভোটার এক লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৯ হাজার ৫৬২ জন, নারী ভোটার ৬০ হাজার ৯৪২ জন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান মেয়র নায়ার কবীরকে দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন নির্বাচন করছেন।