আমাদেরকে কোনো বাধা আটকাতে পারবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩১ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১৬ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আগামীতে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য দলের সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বরিশাল মহানগরীতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আহবান জানান তারা।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় বরিশাল শহরের জেলা স্কুল মাঠে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ সমাবেশ শুরু হয় বিকাল তিনটায়। সমাবেশকে ঘিরে এদিন সকাল থেকেই সারা শহরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়েই পুলিশ ভ্যান, জলকামান নিয়ে উপস্থিত ছিলো। এ সময় শহরের মরকখোলা পুল, নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ডের মোড়, জেলখানা মোড়, আমতলার মোড়, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, কাকলী মোড় ও গীর্জা মহল্লার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। এর আগে বরিশাল মহানগরে বিএনপির সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া দলটির গাড়ি বহর আটকে দেয়া হয় মাওয়া ফেরি ঘাটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে রওনা হন। পথিমধ্যে মাওয়া ফেরিঘাটে বিএনপির গাড়ি বহর আটকে দেয় ফেরি কর্তৃপক্ষ। ঘাটে গাড়ি বহর আসলে ফেরি কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস বন্ধ করে চলে যায়। পরে লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পদ্মা পাড় হন বহরের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কি এই দেশ দেখার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? যে দেশে সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, হত্যা, অন্যায় অবিচার করা হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভারতের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি দেশের প্রথম সারিতে থেকে বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। দেশের প্রতি তার ভালবাসা থেকে সেদিন রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার মতো একজন প্রকৃত সৈনিকের খেতাব বাতিল করতে চায় কিছু লোক। এই স্বাধীন দেশে আমরা এটা কখনো হতে দিব না।
তিনি বলেন, পাশের দেশ মিয়ানমারের সামরিক শাসন হয়েছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। বর্তমান সরকারের শাসন তো সেই স্বৈরশাসকের চেয়েও খারাপ। আমরা কয়জন রাজপথে নামতে পেরেছি? বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের এখন কেউ স্মরণ করে না। যুদ্ধের সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৮০ হাজার, আর এখন হয়ে গেছে আড়াই লাখ। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের বদৌলতে। আজকের এই সমাবেশে আসার সময় জায়গায় জায়গায় পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে, আটক করেছে, বাধা দিয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে সেই প্রতিবাদ কোথায়? সেই প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গতো আমি দেখতে পাচ্ছি না। এখনকার তরুণরা কি অবদান রাখছেন এই দেশের জন্য? তাই আসুন এখনই সময় এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে নামার। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমস্ত সিটি নির্বাচনগুলোকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারেরর অধীনে নির্বাচন চাই, মাফিয়া সরকারের অধীনে নয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিচার বিভাগ আর প্রধানমন্ত্রীর দফতর আলাদা কিনা সেটা জানতে চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনেরে পদত্যাগ চাই এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন চাই।
খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৬ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি আমরা। মাফিয়া সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী, আজ চোরচোট্টা দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। সমাবেশস্থলে আসতে আজ পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। ভোলা নেতাকর্মীদের আসতে দেয়া হয়নি। সমাবেশস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারপরও নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি।
ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, দিন দিন জালিম সরকার স্বাভাবিক নির্বাচন হতে দিচ্ছে না। কোনো নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার বলে তারা দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করে না কিন্তু তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, আজকে সমাবেশে আসার জন্য ঢাকা থেকে রওনা দেয়ার পর মাওয়া ঘাটে সরকার নির্লজ্জভাবে, ন্যক্কারজনকভাবে ফেরি বন্ধ করে দেয়, কর্তৃপক্ষ অফিস বন্ধ করেই চলে যায়। আমাদের প্রায় ২৫টি গাড়ি এখনো সেখানে রয়ে গেছে। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আছি। আমাদেরকে কোনো বাধায় আটকাতে পারবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে মাঠে আছেন, গত ১৩ বছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা হামলার শিকার হয়ে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদেরকে দেখে আমি আরও উজ্জীবিত হলাম৷ আপনারা আগামী আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিন। ইনশাল্লাহ বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন পাকাপোক্ত হবে৷
বরিশাল মহানগরের সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, ওবায়দুল আকরাম, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।