জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব কারো দয়ার দান নয় - ঢাবি সাদা দল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৫ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১৪ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের শিক্ষকরা।
আজ বুধবার জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই মন্তব্য করেন শিক্ষকরা।
সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. মোঃ হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক এবিএম শহিদুল ইসলাম, মোঃ আলামিন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান নিজামী, আবুল কালাম সরকার, ড. মামুন আহমেদ, অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী আলফেছানি, অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক আলমগীর হোসেন সম্রাট, শহিদুল ইসলাম, নুরুল আমিন, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।
মানববন্ধনে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব কারো দয়ার দান নয়, এটা তার অর্জন। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান রেখেই তিনি এই খেতাব অর্জন করেছেন। যথার্থভাবেই বাংলাদেশ সরকার তাকে মূল্যায়িত করেছেন। এই খেতাব বাতিলে জামুকার আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। জামুকার অপতৎপরতার নিন্দা জানাই
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের জননন্দিত প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান। যিনি দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এক দীর্ঘ পরিক্রমায় নানা ঘটনার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে চলেছি। কিন্তু আমাদের সেই স্বাধীনতার চেতনাকে কলংকিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে।
ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, শহীদ জিয়া জাতির ক্রান্তিকালে জাতিকে মুক্তির দিশা দিয়েছেন। যখন আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান তখন শহীদ জিয়া উই রিভোল্ট বলে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। তার নামে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ফোর্স গঠন করা হয় জিয়ার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে ‘জেড‘ ফোর্স।
তিনি আরো বলেন, আজকে অনেকেই বলেন শহিদ জিয়া পাকিস্তানের চর ছিলেন। আমরা তাদের এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে ও জামুকা গঠন করেছে শহীদ জিয়া ও বিএনপির সরকার। শহীদ জিয়ার খেতাব বাতিলের আইনগত বৈধতা জামুকার আছে কি না সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি জানান, অনেকেই এমনও বলছে দেশের ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে যখন আল জাজিরায় রিপোর্ট প্রকাশ হলো সেটাকে চাপা দিতেই জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার খেতাব পেয়েছেন। এটা কারো দয়ার দান নয়। যারা বলে জিয়া মানুষের ভাতের ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এর চেয়ে ইতিহাস বিকৃতি আর হয় না। তিনি তো দেশের প্রথম ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। শহীদ জিয়া তার কীর্তি কর্মের মাধ্যমে জাতির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আপন মহিমায়। তার খেতাব বাতিলের জন্য যারা অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদেরকে নিবৃত্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার মানে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। বাবা কি ভুল করছিল তাহলে, যে ভুল প্রধানমন্ত্রী সংশোধন করছেন। শহীদ জিয়া সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন।
আসলে সরকারের দুইটা মন্ত্রণালয় এখন সক্রিয় আছে। একটি জিয়া পরিবার দমন মন্ত্রণালয় অপরটি দুর্নীতি দমন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো লাভ নেই। জিয়াউর রহমানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, বিএনপির প্রতি ভালোবাসা আছে থাকবে। কাগজে নয়, খোদাই করে নয়, জিয়াউর রহমানের নাম সকলের হৃদয়ে আছে। এই কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ান, সঠিক ইতিহাস চর্চা করুন। না হলে আগামীতে আপনাদের খেসারত দিতে হবে।
অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ যার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিল, যার নামে একটি ফোর্স ছিল। আল জাজিরার প্রতিবেদন যাতে মাটিতে মিশে যায়, সাংবাদিকরা যাতে এই বিষয় বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমানের ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করে সে জন্যই এই বিষয়টি এখন তোলা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, যে খেতাবটি দিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। জামুকা তৈরি করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জামুকার দায়িত্ব ছিল এ দেশের মানুষের সঠিক তালিকা তৈরি করা, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করা। ইতিহাস বিকৃত করার কারণে যারা জিয়াউর রহমানকে ভুলতে বসেছিল, সে প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে জিয়াউর রহমানকে জানার জন্য।