জিয়াউর রহমানের খেতাবে হাত নিলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে-গয়েশ্বর চন্দ্র
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৭ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাবে হাত নিলে সেই হাত পুড়ে ছাই হয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ সোমবার দুপুরে এক বিক্ষোভ সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ঢাকা জেলার উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলে সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সভা হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, জিয়াউর রহমানের খেতাবে হাত দিলে সেই হাতে ফোসকা ফুটবে, আগুনে পোড়ার মতো ছাই হয়ে যাবে। এরা যে কত বড় একটা মহা কলঙ্কের তিলক নিজেদের কপালে আঁকার চেষ্টা করছে- এখনো বুঝছে না। কবি-সাহিত্যিক-গীতিকাররা সবপক্ষ যে গানের লাইনটি বলেন, মানি না, মানি না, কলঙ্ক আমার ভালো লাগে অর্থাৎ কিছু কিছু লোকের কলঙ্কের তিলক পরতে ভালো লাগে, সেই জাতের মধ্যে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই দেশটা প্রজাতন্ত্রের, সেই প্রজাতন্ত্রের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই জনগণের মালিকানা ফেরত আনার জন্যই আমাদের আগামী দিন পথ চলতে হবে। তাতে বাধা আসবে, বাধা অতিক্রম করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। সেই গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, জিয়ার বাংলাদেশ জনগণের সামনে হাজির করতে হবে। এটাই হবে আমাদের জন্য বেস্ট রিভেঞ্জ। আমাদের অন্য কোনো প্রতিশোধ নাই। ইনস্টিড অব ডেমোক্রসি ইন দি বেস্ট রিভেঞ্জ ফর দি বিএনপি ফর খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এন্ড অল অব দি পিপলস এজওয়েল এজ। আমরা সেই প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠি, গণতন্ত্রকে ফেরত আনি।
সরকারের দমনপীড়নের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে তাদেরকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা পালনের আহবানও জানান তিনি। প্রতিবেশী দেশের তল্পিবাহক সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করে গয়েশ্বর বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারের সংজ্ঞা হলো, বাই দি পিপল, ফর দি পিপল, অব দি পিপল। আমি বছর ৭/৮ আগে বলেছিলাম যে, দিস গভর্নমেন্ট নট বাই দি পিপল, নট ফর দি পিপল, নট বাই দি পিপল। দিস গভর্নমেন্ট বাই দি ইন্ডিয়া, ফর দি ইন্ডিয়া, অব দি ইন্ডিয়া। সুতরাং আজকে যা কিছুই হচ্ছে সে বিষয়ে ভারতের একটি অংশ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে না পেলেও মনের দিক থেকে তারা এই দেশটাকে শোষণ করছে। শোষণের যে ক্ষেত্রস্থল তৈরি করার দায়িত্বটা শেখ হাসিনার নিয়েছেন। সেই কারণে বংশ পরম্পরায় শেখ হাসিনা অর্থাৎ এই দলটি যেন তাদের খেদমতে সবসময় নিয়োজিত থাকতে পারেন সেজন্য তাদের একটা চেষ্টা আছে। জনগণ তাদের সমর্থন করলো কি করলো না সেটা তাদের কাছে বড় বিষয় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে আপনার রাজ সিংহাসন থরথর করে কেঁপে উঠলো। আপনার গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান, আমলাদের প্রধান, পুলিশ বাহিনীর প্রধান সব দিল্লিতে যাচ্ছে। কারণ আপনার ক্ষমতার উৎস তো জনগণ নয়। জিয়াউর রহমান বারবার বলেছেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এটা জিয়াউর রহমানের একটি মহান বাক্য মানুষের মুখে মুখে। আর আপনার ক্ষমতার উৎস তো আমরা জানি। জনভিত্তি না থাকলে হিল্লি-দিল্লি দৌড়ে কোনও লাভ হবে না। ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি কি আয়নার দিকে তাকান না? আপনি কি আপনার মন্ত্রিপরিষদের দিকে তাকান না? আপনি কাদেরকে সেখানে রেখেছেন? শেখ মুজিবের হত্যাকারী যাদেরকে বলা হচ্ছে তাদেরকে দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার যখন ব্যবস্থা করা হয় তখনতো জিয়াউর রহমান বন্দি ছিলেন। গৃহবন্দি ছিলেন। তখন তো আপনাদের সমর্থনেই একটি ‘ক্যু’ হয়েছিল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। সেদিন আমরা টেলিভিশনে দেখেছি, খালেদ মোশাররফের মা-ভাই বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে ৩২ নম্বরে মিছিল করেছে। সেই খালেদ মোশাররফই তো আপনার পরিবারের হত্যাকারীদের থাইল্যান্ডে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ কথা আপনার মন্ত্রীরা বলে না কেন? আপনার নেতারা বলে না কেন? সেদিন তো খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায়। তাহলে তারা জিয়াউর রহমানের কথা বলছে কেন? জিয়াউর রহমান তো চাকরি করতেন। তিনি সেকেন্ড ম্যান ছিলেন, এক নম্বর ব্যক্তিও ছিলেন না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, সেই সময়ে এক নম্বর ব্যক্তি যিনি ছিলেন যার দায়-দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করার তিনি টেলিফোনে বলেছেন, “আপনি প্রাচীর টপকে পার হয়ে যান”। এতো বড় কাপুরুষ ভীরু লোককে আপনার পিতা সেনাবাহিনীর প্রধান বানিয়েছিলেন। অথচ সিনিয়র ছিলেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। আর এই কারণেই বোধহয় তাঁকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়নি! যাকে করা হয়েছিল তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘প্রাচীর টপকে’ বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। এই হচ্ছে আপনাদের সেই সেনাপ্রধানের চরিত্র। আর সেই লোককেই কিনা আপনারা এমপি বানিয়েছিলেন। রূপগঞ্জ থেকে আপনি এমপি বানাননি?
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মাধ্যমে আপনি কোন মুখে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের কথা বলেন? এটাতো প্রতিহিংসা। এই প্রতিহিংসা করতে গিয়ে আপনি একের পর এক রাষ্ট্র নিয়ে, দেশ নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে যে কাজগুলো করছেন এটা ইতিহাসের ‘জঘন্যতম কালো অধ্যায়’ হিসেবে রচিত হবে।
তিনি বলেন, আজকে তো কথা বলার অধিকার নেই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কত কালাকানুন। প্রতিটা মানুষের কণ্ঠের মধ্যে ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কথা বললেই মামলা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো ১৯৭২-৭৫ সালে ক্ষমতায় ছিল, আপনাকে ক্যাপ্টেন নাছির গ্রেফতার করেছিল কেন? এই উত্তরটি আপনি দেবেন, কেন আপনাকে গ্রেফতার করেছিল? আপনি তো আওয়ামী লীগের বড় নেতা, ক্ষমতায় থাকলে তো সবাই আপনাদেরকে ভয় পায়, কিন্তু সেই সময়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় কেন আপনাকে ক্যাপ্টেন নাছির গ্রেফতার করেছিল, এই উত্তরটা আপনি দিন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগে লাইট জ্বালিয়ে তো একটা বীর প্রতীক পাওয়া যাবে না। বীর উত্তম তো অনেক পরের ব্যাপার। রণাঙ্গনে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাই বলেই জিয়াউর রহমানকে খাটো করছে। কোনো লাভ হবে না। জনগণ আপনাদের চেনে, আপনাদের চরিত্র সম্পর্কে জানে।
তিনি বলেন, গতকাল না পরশুদিন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি প্রধান অমিত সাহা পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। উনি বলে গেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ থেকে একটি পাখিও নাকি ঢুকতে পারবে না। তো পাখিরা যদি না ঢুকতে পারে তাহলে এই মাসিরা পিসির বাড়িতে যাবে কিভাবে? এই মাসিদের পিসির বাড়ি যাওয়া যখন বন্ধ হবে তখন জনগণ এদেরকে ঘেরাও করবে। আর সেই ঘেরাওয়ের নেতৃত্ব দিতে হবে বিএনপিকে। এর বাইরে আর কোনও পথ নাই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, বাংলাদেশের আকাশে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হচ্ছে প্রজ¦লিত সূরুয। যেই সূরুয কোনো দিন অস্ত যাবে না। চাঁদেরও কলঙ্ক আছে কবি-সাহিত্যিকরা বলেন। কোনো কলঙ্ক যেমন সূরুযকে স্পর্শ করতে পারে না তেমনি শহীদ জিয়াকে ছোট করার কোনো চেষ্টাই কোনো দিন বাংলাদেশে সফল হবে না ইনশাল্লাহ।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় বিক্ষোভ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, তমিজউদ্দিন আহমেদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ।