জিয়ার খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে বুধবার বিএনপির সমাবেশ ও বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৫ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৯ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর খেতাব বাতিলের সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে আবোরো বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। আগামী বুধবার বরিশাল বিভাগ ছাড়া সারাদেশে মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশের এই কর্মসূচি হবে।
আজ রবিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় স্বৈরতন্ত্র ও মাফিয়াতন্ত্র পতনের দাবিতে ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব বাতিলের সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে আগামী বুধবার বরিশাল বিভাগ ছাড়া সারাদেশে মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সদরে আয়েজিত সমাবেশে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অংশ নেয়ার আহবান জানান খন্দকার মোশাররফ।
পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি আসবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ধাপে ধাপে অবশ্যই কর্মসূচি থাকবে। এছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সরকার পতনের আন্দোলন আমাদের চলমান আছে। বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী ১৮ তারিখ বরিশালে আমাদের যে সমাবেশ এটাও তো আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে আন্দোলনকে আমরা আমাদের লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সরকারি পরিকল্পনার অংশ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, একটি সোর্সের ওপরে, একটি সাপ্লাইয়ের ওপরে আমাদের নির্ভর করা সমীচীন হচ্ছে না। কোনো দেশই একটি সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তারা এই ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা নেয়নি, তারা একাধিক সূত্র থেকে ক্রয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই আমরা এখনো বলছি যে, আমাদের বিকল্প সোর্স যদি খোঁজা না হয় তাহলে কিন্তু এই যে, কিছুদিন পরে যে পরিমাণ আমাদের ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন সেই পরিমাণ ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হবে না সরকারের।
বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছে-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) নিজেরাই তো সাক্ষী আরকি। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে- এই ঝগড়াটা কে লাগিয়েছে? বিএনপি না সরকারের পুলিশ। তো এখন তারা আক্রমণ করে বলে যদি আমরা ঝগড়া লাগাচ্ছি-এটার জন্য আমাদেরকে প্রশ্ন না করে বরঞ্চ তারা যখন প্রশ্ন করে তাদেরকে বলা উচিত না যে, আপনি এই কথা বলতেছেন কিন্তু আপনাদের লোকরাই তো ঝগড়া লাগাইতেছে। একজন মন্ত্রী, একটা পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আল-জাজিরার মতো একটা সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে কিছু জানেন না এটা বিশ্বাস করা কঠিন। কাতারের শাসকগোষ্ঠীর মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংবাদ মাধ্যম তাকে প্রভাবিত করতেছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বা বিএনপি-এরকম কথা যে বলে আরকি তার প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বরঞ্চ তাকে বলা দরকার যে, আপনি বোঝার চেষ্টা করেন, জানার চেষ্টা করেন, শেখার চেষ্টা করেন তারপরে কথা বলেন।
শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় দেশে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের অনুষ্ঠিত এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে যেসব প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়Ñতার অন্যতম হলো :
ক) মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছরের প্রথমেই দেশ, দেশের সরকার প্রধান এবং দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক এক স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিশ^খ্যাত সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের বিশ^াসযোগ্য ও যুক্তিগ্রাহ্য জবাব না দিয়ে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে এড়িয়ে যাওয়ার সরকারি অপচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, দেশের নাগরিক সমাজ এবং দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সংগঠন, সংবাদপত্রে বিষয়টি নিয়ে যেসব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে দেশের ভাবমূর্তি সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার স্বার্থে অনতিবিলম্বে মাফিয়াগোষ্ঠীকে সহায়তাসহ রিপোর্টে উত্থাপিত তথ্যাদি ও অভিযোগসমূহের যুক্তগ্রাহ্য জবাব তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা কিম্বা ব্যর্থতা শুধু সরকারের অপরাধ প্রমাণ করবে নাÑ দেশের স্বার্থ ও ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
খ) সভায় আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ জনগণের দৃষ্টি আচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতা-কর্মীদের ভুয়া অভিযোগে কারাদন্ড প্রদান এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক, দেশের শ্রেষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম সেক্টর ও ফোর্সেস কমান্ডার, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নেয়ার সরকারি অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘জামুকার’ সভায় এখতিয়ার বহির্ভূত ও অযাচিতভাবে এমন প্রস্তাব গ্রহণের জন্য দায়ীদেরকে অবশ্যই একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে দৃঢ়মত ব্যক্ত করা হয়।
গ) সভায় দেশের ভাবমূর্তি ও স্বার্থহানিকর কর্মকান্ড, দুর্নীতি-অনাচার ও মাফিয়াতন্ত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব কেড়ে নেয়ার অপচেষ্টার মত ধৃষ্টতা প্রদর্শন ও বিরোধীমত দমনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন পর্যন্ত মুছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি স্বৈরাচারী অপচেষ্টার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সন্ত্রাসী কায়দায় বাধাদান, মানববন্ধন কর্মসূচিতে আক্রমণ চালিয়ে কেন্দ্রীয়, মহানগর ও অঙ্গ দলের সিনিয়র নেতৃত্বসহ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীকে আহত করা, সিনিয়র বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ শত শত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে অনেককেই কারাগারে প্রেরণ এবং অজ্ঞাত আসামি বলে সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গ দলসমূহের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় চলমান আন্দোলন অব্যহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। সভায় মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের আশু মুক্তির জন্যও জোর দাবি জানানো হয়।
ঘ) সভায় স্বৈরতন্ত্র ও মাফিয়াতন্ত্রের পতনের দাবিতে এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর খেতাব বাতিলের সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে আগামী বুধবার ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিভাগ বাদে দেশের সকল মহানগর ও জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সদরে আয়োজিত সভায় বরিশাল বিভাগের সকল জেলা বিএনপি ও অঙ্গ দলসমূহকে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির এই ভার্চুয়াল বৈঠকে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।