ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সাথে ব্যালান্স করে চলতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:৪০ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিটা দেশের সঙ্গেই আমাদের স্বার্থ রয়েছে। এ তিনটি দেশের সঙ্গেই ব্যালান্স করে চলতে হবে।
আজ শনিবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত 'ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা' শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ও চীনের মধ্যে আছে দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব থাকলেও তাদের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা সেখানে নেই। আমাদের প্রতিটি দেশের সঙ্গে স্বার্থ আছে। কারণ, আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে মেজর খেলোয়াড় না, তাই আমাদের এক ধরনের ব্যালান্স করে চলতে হবে। আমাদের এ তিনটি দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
থাইল্যান্ড মিয়ানমার ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, মূল আলোচনায় তিনটি বিষয় ছিল। তা হলো- সীমান্ত, অপরাধ ও মাদক এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল না। আমি বলেছিলাম, এ তিনটি ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ওৎপোতভাবে জড়িত। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে এ তিনটি বিষয়ের সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, সবার সঙ্গে বৈঠকে আমি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে বলেছি। তাদের দুই লাখ তরুণ-তরুণী আছে। তারা যদি আগ্রাসী হয়, সেখানে বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশের ক্ষতি হবে। এরই মধ্যে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
আরাকান আর্মির সময়েও রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গের ফেরত পাঠাতে হবে। তা না হলে তোমাাদের (মিয়ানমারের প্রতিবেশি সবদেশ) শান্তিও থাকবে না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি উল্টো। দেখেছি রাষ্ট্রের চেয়ে একটা গ্রুপ বা অলিগার্কদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে যিনি প্রধান তার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দ্বিমত থাকতে পারে। একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান থাকে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্য থাকা প্রয়োজন। যেসব দেশে দুটি বড় দল আছে, সেখানেও আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু নির্ধারিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গত ৫২ বছরে তা দেখিনি৷ সব সময় সরকার যেটা মনে করেছে, তাই করেছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় সরকারি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বিরোধীদল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বার্থে বৃহৎ ঐক্য প্রয়োজন। সেখানে আলোচনা হবে, একতরফা কিছুই হবে না।
সংলাপে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও পার্বত্যাঞ্চলে আরাকান আর্মির প্রভাব বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷
তিনি বলেন, আমরা যখন পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কথা বলি, তখন শুধু শান্তি বাহিনীর কথা বলছি৷ কিন্তু ওদিকে আরও বড় বিপদ৷ সীমান্তের ওপারে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে৷ তারা বাংলাদেশ বিদ্বেষী, রোহিঙ্গাদের জন্যেও তারা আশীর্বাদস্বরূপ নয়৷ তারা নতুন করে ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিচ্ছে টেকনাফের দিকে৷ আরাকান আর্মির পাশাপাশি ভারতও সীমান্ত এলাকায় জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে৷
আমীর খসরু বলেন, এখন সীমান্ত এলাকা নিয়ে পলিসি রিভিউ করতে হবে৷ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এমপাওয়ার করতে হবে৷ টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির ব্যাটল ফিল্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে সেনাবাহিনীকে৷
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৫ বছরের পররাষ্ট্রনীতি ছিল গদি রক্ষার নীতি। এখানে কোনো পররাষ্ট্রনীতি, দেশের স্বার্থ ছিল না। সম্পূর্ণ অর্থে সরকার গদি রক্ষার জন্য বিদেশ নীতি সাজিয়েছিল। ফলে দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নানাভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল।