জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০১ এএম, ১৩ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৪ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের রূপকার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলÑ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় বীরউত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ও আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, আল-জাজিরার বর্তমান প্রতিবেদন থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে হীন কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে বিএনপি সারাদেশে দুই দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাছাড়া দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো দেশজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তি গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন, স্বাধীনতা অর্জনে প্রদত্ত বীরত্বপূর্ণ অবদানের খেতাব বা বীরত্বসূচক পদক বাতিল করা যায় না। কারণ বীরত্বপূর্ণ অবদান বা বীরত্ব প্রদর্শনের কারণে রাষ্ট্র নির্মিত হয়েছে। সুতরাং এ রাষ্ট্রে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদান বাতিল করার আইনগত ও নৈতিক কোনো সুযোগ নেই। এই বীরত্ব সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের ‘অনিবার্য বাধ্যবাধকতা।’ এটা অপরিহার্যভাবেই জাতি-রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথে জড়িত।
বীরবিক্রম কর্নেল (অব) ড. অলি আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ জাতির দুর্দিনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যখন দিশেহারা, অসহায় ছিল, জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে আলোর দিশারী হিসেবে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর আহ্বানের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত সব বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, ছাত্র-জনতা বাঙালি সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
কর্নেল অলি আরও বলেন, সেদিন আমরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে, ফাঁসির ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিলাম। যুদ্ধে বীরত্বের জন্য জিয়াউর রহমান খেতাব পেয়েছেন। সুতরাং কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা সরকারের সমীচীন হবে না।
জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য, তথা রাজনৈতিক হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ ধরনের জঘন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের জঘন্য সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে দেশের সব রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য অপমানজনক ও অবমাননাকর। সরকারের এ ধরনের জঘন্য অপচেষ্টা কোনো দিনই সফল হবে না।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের গুরুত্ব যথার্থই অনুধাবন করেছিলেন। সে কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানীদের বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। এখন যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব কেড়ে নেয়া হয়, তবে সেটা হবে কার্যত বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার শামিল।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বীরউত্তম খেতাব দেয়া হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর তার খেতাব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের অবিনাশী কুটিল প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
জামুকা’র সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এক বিবৃতিতে বলেছেন, যারা দেশমাতৃকার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব অর্জন করেছেন তাঁদের খেতাব বা পদক বাতিল করা মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবান্বিত করে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহছান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. কামরুল আহসান খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ এই মহামানবের কন্ঠ-নিঃসৃত বাণী ‘উই রিভোল্ট’ সমগ্র জাতিকে সাহসে উজ্জীবিত করেছিল। জাতির সেই ক্রান্তিকালে সম্মুখযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালে উপযোগী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মপন্থা গ্রহণ ও সেগুলো সততা এবং নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
আমরা ধারণা করছি, সম্প্রতি কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম (টিভি চ্যানেল) আল-জাজিরা বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির ক্ষমতার সীমাহীন অপব্যবহার ও দুর্নীতি নিয়ে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ শিরোনামে প্রচারিত সংবাদে যে অভিযোগ তুলে ধরেছে, চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এই ঘৃণিত, কুরুচিপূর্ণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বীরবিক্রম হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, জামুকা’র এগুলো কাজ না, জামুকা হলো কে ভাতা পাবে কি পাবে না। কে মুক্তিযোদ্ধা, কে মুক্তিযোদ্ধা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণকে আর হাস্যাস্পদ করবেন না। এই উদ্যোগ যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে আপনি আপনার পিতাকে অসম্মান করছেন। এই খেতাব নিলে কী গেল কিছু আসে-যায় না, তিনি এখন মৃত। খেতাব নিলেও জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমান থাকবেন, লাখ-কোটি মানুষের কাছে, অনাগত ভবিষ্যতের কাছে তিনি এই দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা-রূপেই ইতিহাসে চিহ্নিত থাকবেন এবং জনগণের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসন তাঁর চির অমøান থাকবে।
বীরউত্তম ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ধরনের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একটা হচ্ছে মিলিটারি ফোর্স, আরেকটা হলো ফ্রিডম ফাইটার, তিন নাম্বার হলো যুদ্ধের শেষদিকে বিএলএফ নামে, এই সংগঠন গঠন করা হয়েছিল যার বাংলা ‘মুজিব বাহিনী’। আমরা যারা মিলিটারি ফোর্স আমাদের কন্ট্রোল করে কোর নামে একটা সংস্থা আছে সেন্টার অফিসার্স রেকর্ড অফিস। আমাদের সঙ্গে জামুকা’র কোনো সম্পর্ক নাই। তৎকালীন ছাত্র-কৃষক-যুব-শ্রমিক যারা যুদ্ধে গেছেন, ট্রেনিং করেছেন, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে যুদ্ধ করেছেনÑ তাদের ভাতা, তাদের সম্মানী, তাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে অধিক থেকে অধিকতর দেয়া যায় তাই জামুকা’র কাজ।