শেখ হাসিনার ভূত আজও আদালত-প্রশাসন-পুলিশে সক্রিয় : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:১৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকারের সর্বত্র এখনো শেখ হাসিনার দোসররা সক্রিয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটা করেছিলো তারই আপহোল্ড হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা আইন, একই জিনিস। আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছেন। খাদিজা নামের যে মেয়েটা মাস্টার ডিগ্রিতে পড়েন, সে নাকি এখনো কারাগারে- তাহলে প্রশাসন কীভাবে চলছে? শুধু একটা পোস্ট দেয়ার কারণে একজন ছাত্রী এখনো যদি কারাগারে থাকে, তাহলে তো বুঝতে হবে আমরা যেটা বলি- শেখ হাসিনার ভূতরা আজকে আদালতে-প্রশাসনে-পুলিশে আছে। তারা প্রতি পদে পদে এই সরকারকে ব্যাহত করছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেওয়ার দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদ আর নাৎসিদের কখনোই রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসন হতে পারে না। মুসোলিনী আবার ফিরে আসেনি ইতালিতে, হিটলার আবার পুনর্বাসিত হয়নি জার্মানিতে। সুতরাং কোনোভাবেই মাফিয়া-নাৎসি-ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে হবে না। একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি বৈপ্লবিক বাংলাদেশ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি আইনের শাসনের বাংলাদেশ, একটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বাংলাদেশ- সেই সুন্দর স্বপ্নময় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে, সেদিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য অতি শিগগিরই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। প্রয়োজনীয় যে সংস্কার তা সম্পন্ন করে অতি দ্রুত জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দিলে পরেই সেই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের সরকারের মতো কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধীদলের এতো আত্মত্যাগ, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ওপর এই বিপ্লব রচিত হলো। তাহলে এর টোন, এর ভাষা, এর কার্যক্রম সব কিছু তো বৈপ্লবিক হবে। আজকে ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনে-পুলিশে প্রত্যেকটি জায়গায় বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, বিপ্লবী সরকারের কর্মকাণ্ড হবে বৈপ্লবিক। আইনের কথা বলছেন- আইন উপদেষ্টা নিশ্চয়ই একজন গুনি মানুষ, আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন। কিন্তু বিপ্লবী সরকারের দায়িত্ব তো প্রচলিত কোনো আইনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করা নয়। প্রচলিত আইন ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। একটা মাফিয়া সিন্ডিকেটের সরকার, একটা দুর্বৃত্ত নাৎসী- তিনি এই কাজটা করেছেন। ফোজদারি আইনে এক বছরের বেশি সাজা হলে তাকে কারাগারে যেতে হয়-এই আইন এখন মানা হবে কেন? আইন তো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে, এটা পরিবর্তন করা যাবে না। এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এতো ছাত্র-জনতার যে আত্মদান, এতো রক্ত এখনো গড়িয়ে যাচ্ছে- তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, তারা কেন পুরনো আইন দেখিয়ে কাজ করবেন?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস হয়ে গেল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তিনি কেন দেশে আসতে পারছেন না? কী আইনি প্রক্রিয়া আছে? এই আইন তো মানবতাবিরোধী আইন, এই আইনে স্বার্থরক্ষা করা হয় মাফিয়াদের, স্বৈরাচারের, খুনিদের। এই আইন তো নির্বাহী আদেশের একটা খোঁচায় পরিবর্তন হতে পারে। তাহলে কি আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ভয় পাচ্ছেন? নাকি আপনাদেরকে কেউ নির্দেশ দিচ্ছে কোনো জায়গা থেকে যে, আপনাদের এর বাইরে যাওয়া যাবে না, এইভাবে কাজ করবেন; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেন ফিরতে না পারে- সেই ব্যবস্থার জন্য আপনারা এই কাজগুলো করুন, এগুলো পরিবর্তন করা যাবে না। যেভাবে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো- এই পরিস্থিতি আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি না।
তিনি বলেন, এতো আত্মত্যাগের পরে যে সরকার সেই সরকার কেন শেখ হাসিনার আইনগুলো টেনে নিয়ে এসে গণতন্ত্রের বিপ্লবী মানুষদের যন্ত্রণা দিচ্ছে- এটা গোটা জাতির আজকে জিজ্ঞাসা। আমরা একটা বিপ্লবী সরকার দেখতে চাই। যে সরকার জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে কাজ করবে। আমরা শেখ হাসিনার সরকারের মতো সরকার চাই না। চট্টগ্রামের ডিসি মোনাজাত করছেন কাদেরকে নিয়ে? আওয়ামী লীগের যে সমস্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী নমিনেশন জমা দিয়েছেন- তাদের নিয়ে। এই ধরনের সরকার চাই না বলেই তো এতো রক্তপাত, এতো কিছু হলো, এতো ঘটনা হলো- এটা এই সরকারকে বুঝতে হবে।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আমাদের খুব দুঃখ লাগে যে, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে দাবি নিয়ে। আমরা এই সমাবেশ থেকে সব বন্ধ সংবাদপত্রসহ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। খুনি হাসিনা যত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এই সরকারের চারপাশে ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতাদের ঘুরে বেড়াতে দেখছি। এই প্রেতাত্মাদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে, তাড়িয়ে দিতে হবে। নইলে যেভাবে আমরা রক্ত দিয়েছি, আমরা আবারও ফ্যাসিবাদের দালালদের তাড়ানোর জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, কেন মাহমুদুর রহমানকে জেলে যেতে হলো, আইন উপদেষ্টাকে বলতে হবে। মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে আমাদের সংগঠনের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ভাইকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো। তিনি এক বছর ৭ মাস কারাবরণ করেছেন এই মিথ্যা মামলায়। তিনি দেখে যেতে পারেননি যে, তার মামলাটি প্রত্যাহার হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে গত ৮ আগস্ট। কোথায় আমাদের সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলো?
তিনি আরও বলেন, আপনারা আইন দেখিয়ে সেই ফ্যাসিবাদী দোসরদের ক্ষমতায় রাখবার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। আমরা বলতে চাই, আপনাদের আমরা সহযোগিতা করতে চেয়েছি। ২০০৯ সালের পর থেকে যতগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহার করুন। আমরা ৪৮ ঘন্টা সময় দিতে চাই, নির্বাহী আদেশে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যত কালাকানুন আছে সবগুলো বাতিল করতে হবে, বন্ধ গণমাধ্যমগুলো ক্ষতিপূরণ দিয়ে অবিলম্বে প্রচারে নিয়ে আসতে হবে।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল আউয়াল ঠাকুর, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মুরসালীন নোমানী, মহিউদ্দিনসহ দুই ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
দিনকাল/এসএস