শহীদ মাসুদ রানার ছোট্ট মেয়েটার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩১ পিএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:০৬ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে জীবন দেয়া মাসুদ রানার জীর্ণ ঘরে ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান আছে। শহীদ পরিবারটি যখন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে আসহায়, তখন তাদের সহায় হয়ে দাড়ালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিলেন শহীদ মাসুদ রানার ছোট্ট মেয়ে আরোবীর ভরণপোষণসহ লেখাপড়ার দায়িত্ব।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর মিরপুরে গণঅভ্যুত্থানে নিহত বিইউবিটি’র শিক্ষার্থী শহীদ তাহমিদ এবং শহীদ মাসুদ রানার পরিবারকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা জ্ঞাপন ও আর্থিক সহযোগিতা করতে যান বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধিদলে রুহুল কবির রিজভীর সাথে ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুল বাছিত আঞ্জু, যুবদল নেতা শাকিল মোল্লা, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’- এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মিথুন, সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ, শাহাদত হোসেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রহমান, হাসনাইন নাহিয়ান সজীব, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান রনি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি শারিফুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, মোহান প্রমুখ।
এসময় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রধান উপদেষ্টা রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৃথিবীর কোথাও ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হয়নি, হবেও না। ইতালি জার্মানিসহ পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্রকামী মানুষ ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থান হতে দেয়নি। যারা নিজ দেশের শিশুদের রক্ত পান করেছে, তারা কি রাজনীতি করবে? তাদের পুনরুত্থান হলে আন্দোলনে যারা চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে, এদেরকে ধরে ধরে হত্যা করবে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সোচ্চার ছিলো, গত সাড়ে ১৫ বছর গুম, নির্যাতন এবং গায়েবি মামলায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল যাদের, তাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর নেমে আসবে শেখ হাসিনার প্রাণবিনাসী কর্মসূচি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে পরিবারগুলো আমরা দেখে গেলাম, তারা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদ মাসুদ রানার রোজগার দিয়ে তার পরিবার চলতো। তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা আজ অসহায়। তার শিশুকন্যা আরোবী ফেরদৌস আর্তনাদ করছে। এছাড়া শহীদ তাহমিদ এমএ পাস করলে তার চাকরি হতো। তার পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত। সেমি বস্তির মতো জায়গায় তারা বসবাস করে। কতো স্বপ্ন নিয়ে তারা লেখা পড়া করেছে। এরাতো নিজের রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র কিনেছে। এটা যেন ব্যর্থ না হয়। এ সমস্ত পরিবার যেন না খেয়ে না থাকে। আপনাকে অনুরোধ করব, যেসব পরিবারে শহীদ হয়েছে, তাদের ভাই বা স্ত্রী যেই থাকুক, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ি সরকারি চাকরি দিন, এটা খুব জরুরী।
এসময় সমবায় ব্যাংকে জমা রাখা ৭৩৯৮ ভরি সোনা ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, কী দেশ ছিল এটা! অনাচার অবিচার লুটপাট, এসবের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছিল শেখ হাসিনা। তার কথাই ছিল আমার ক্ষমতা ঠিক রেখে তোরা যা পারিস কর। শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি দস্যু ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন। পুলিশ-সিভিল প্রশাসন প্রত্যেক জায়গায় শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্টরা শতশত কোটি টাকার মালিক। প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান, তার গ্রামের বাড়িতে ছয় তলা বাড়ী। এই তো প্রশাসন সাজানো হয়েছে। এরা এখন বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। তারা তো হাসিনার পক্ষেই কাজ করবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, যারা প্রশাসন পরিচালনা করছেন, তাদের নিয়ে নানা কথাবর্তা শুনছি। এটা দুঃখজনক। পৃথিবীর দেশে দেশে দেখেছি বিপ্লবী সরকার তড়িৎ গতিতে দুষিত রক্ত বের করে দেয় সমাজ ও রাষ্ট থেকে। এই সরকারকেও আমরা বিপ্লবী সরকার বলি। তাহলে কী করে এই সমস্ত ভয়ঙ্ক দুর্নীতিবাজ, টাকা লুন্ঠনকারীরা এখনো প্রশাসনে অবস্থান করতে পারে?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অতি ধনী লোকের সৃষ্টি হয়েছে। তারা কারা? যারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে টাকা লুট করেছে, যারা মেগা প্রজেক্টের নামে টাকা লুট করেছে, যারা পদ্মাসেতুর নামে টাকা লুট করেছে, যারা শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন সেক্টরে লুট করেছে তারা আজ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। এদের লোকজনই বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। নতুন করে ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটুক, দেশের মানুষ তা চায় না।
শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বের কোন দেশের সাথে কী অসমচুক্তি করেছে, তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অসম চুক্তিসমূহ যদি জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের যোগ্যতা এবং দক্ষতা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করা শুরু করবে। এই পরিস্থিতি যেন তৈরী না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেন তিনি। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার দাবিও জানান তিনি।
দিনকাল/এসএস