শহীদ জিয়ার খাল খনন প্রকল্প ফের চালুর দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৩ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:০৪ পিএম, ২ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৪
শহীদ জিয়ার খাল খনন প্রকল্প ও নদী খনন প্রকল্প আবারো চালু করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি।
একইসাথে গত ৫০ বছর আগের জাতীয় ভূমি নকশা অনুসারে বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদী খাল পুনরুদ্ধার ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করার দাবি তুলেছেন তিনি।
আজ (বুধবার) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল লতিফ জনি বলেন, সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের বিশেষ নির্দেশনায় দলের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন প্রতিটি জেলা থেকে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও ওষুধ-সামগ্রী নিয়ে বন্যায় সহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। জননেতা তারেক রহমানের এ নির্দেশনায় বানভাসী এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের যে উপকার হয়েছে তা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরবাসী আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, আমি ফেনী জেলার একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এবারের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি-বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে লাখ লাখ মানুষ নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরবাসী-বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডকে কখনো ভুলতে পারবে না। বিশেষ করে ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর মানুষ আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। একইসাথে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার ও সাহায্য করার জন্য দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অসংখ্য সামাজিক সংগঠন এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার ছাত্ররা বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিকদল তাদের সাধ্যানুযায়ী ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত মানুষের সীমাহীন কষ্টের পাশে থেকেছেন। তাদেরকেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আবদুল লতিফ জনি বলেন, সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। লাগাতার বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কোনো পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই সব গেট আকস্মিকভাবে খুলে দেয়ার কারণে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলায় নিয়ন্ত্রণহীন এ ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। শুরু হয় মানবিক বিপর্যয়। ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া থানার পুরো এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। সোনাগাজী, দাগুনভূইয়া থানাও সাত থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। গবাদি পশু (গরু-ছাগল-ভেড়া-মহিষ-হাঁস-মুরগি) পানির তীব্র স্রোতে ভেসে চলে যায়। শুরু হয় অমানবিক-অবর্ণনীয় বাসস্থান ও খাদ্যসঙ্কট।
জনি বলেন, নদী বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে চিন্তা করা যেমন অসম্ভব তেমনি বাংলাদেশের অনেক নদী অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে মাতৃতুল্য নদী আজ ইতিহাসের ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি বাংলাদেশের নদীও হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে একাকার হয়ে মিশে আছে। এই বিবেচনার গুরুত্বকে সামনে রেখে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষক এবং রণাঙ্গনের ‘জেড’ ফোর্সের সর্বাধিনায়ক মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী বীর, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ফেনী নদীর মোহনায় মুহুরী প্রকল্প এবং ছোট ফেনী নদীর মোহনায় মুছাপুর ব্যারেজ প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্পগুলো সমুদ্রের নোনা পানির জোয়ারের সময় ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় এবং শুকনো মওসুমে মিঠা পানি জমিয়ে রেখে ধানসহ অন্য ফসল উৎপাদনে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। যার ফলে ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অনেক অঞ্চলে ধান ও অন্য ফসল উৎপাদনে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয় এবং ধান উৎপাদনে এই অঞ্চল স্বনির্ভর হওয়ার সফলতা লাভ করে। জোয়ারের সময় নোনা পানির তীব্র আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় মানুষ ফসল উৎপাদনে সফলতার গৌরব অর্জন করে।
আবদুল লতিফ জনি বলেন, স্রোতস্বিনী নদীগুলো ভরাট করে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এর কারণে জাতি কতটুকু উপকৃত হয়েছে? কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি হয়েছে? তা তদন্ত করা হোক। নদী হত্যাকারী পাহাড় ধ্বংসকারী, বনাঞ্চল দখলকারী ও ইটভাটা করে পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক। শুধু তদন্ত নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর কাছে আকুল আবেদন, ওই সমস্ত দখলকারী ও তাদের দোষরদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হোক। একইসাথে গত ৫০ বছর পূর্বের জাতীয় ভূমি নকশা অনুসারে বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদী খাল পুনরুদ্ধার ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হোক।