চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস, বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০১ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:১৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিরোধীদের চক্রান্ত থেমে নেই, এখনও নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস, তারা বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছে, এখনো হায়নারা (আওয়ামী লীগ) লুকিয়ে আছে, যেকোনো সময় আক্রমণ করবে। হায়নাদের আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণসভায় বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন। এই স্মরণ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
গতকাল গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জিলানীর উপর হামলা ও সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক দিদার শহীদ করা হয়েছে এটি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের মানুষ সবসময় আত্মত্যাগ ও প্রাণ দিয়েছে। "৭১ যখন আমার স্বাধীন হলাম, তখন ভেবেছিলাম সত্যিকার অর্থে আমরা একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ পাবো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার ছিলেন প্রথম তাদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়। ৭৫ সালে তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। এ কথা একবার বললে হবে না, বারবার বলতে হবে।
তিনি বলেন, এই দলটি আবার ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধ্বংস করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে বারবার দমন করতে নির্যাতন, গুম খুন করেছ। এর ফলশ্রুতিতে জুলাই মাসে ও ১৭ বছর এদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের জীবন নিয়েছেন, প্রাণ নিয়েছেন।
আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন কথা তুলে ধরে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, স্যালুট জানান বেগম খালেদা জিয়াকে, গণতন্ত্রের প্রশ্নের তিনি কখনো আপোষ করেননি, মাথা নোয়াননি। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে ছিলেন ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি মুক্ত হয়েছেন। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অভিবাদন জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়তবা স্বাধীন হয়েছি কিন্তু চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস। তারা তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরীর জন্য পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।
নেতাকর্মীদের কোনভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে পা না দেওয়ার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার পেয়েছি, এই সরকারের কাছেই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী। অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা, তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে সত্যিকার অর্থে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। ছাত্রজনতার আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ বছর ধরে যারা পঙ্গু ও নিহত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সরকার প্রধানের কাছে এমন দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
১৬ বছর ধরে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনীত দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা হয়েছে তা অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে এমন দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির কাছে অঙ্গীকার করতে চাই, সত্যিকার অর্থে প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব। তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে কেউ যেন আমাদেরকে বিপথের না নিয়ে যায়। কোন মতেই আমরা যেন আমাদের লক্ষ্য ও পথ না হারাই।
স্মরণ সভায় বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ দাঁড়ানোর জন্যও একটা মুরগির খোপ পায়নি। আগামী ১০০ বছরও ছাত্র জনতার কাছে তারা আস্থা পাবে না। ছাত্র জনতার হত্যাসহ গত ১৫ বছরের গুম-খুন ও নির্যাতনের বিচার হলে আওয়ামী লীগ ‘কবরলীগে’ পরিণত হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে কেউ যেন বেইমানি না করে তার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর বলেন, ‘যারা আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, শহীদ হয়েছে তাদের যেন আমরা ভুলে না যাই। জুলাই ফাউন্ডেশন পাশাপাশি গত দেড় দশকে যারা হারিয়েছে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলের শীর্ষ নেতা এহসানুল হুদা, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন প্রমুখ।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সহ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য তাবিখ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী।