এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই : আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪১ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:০৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। যে শক্তি দেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই শক্তিকে যদি পরাজিত করতে হয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
আজ রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে এবি পার্টি।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশটা আমার এটা এখন প্রত্যেকে বলতে পারি। এখন সময় বদলে গেছে। যারা নিজের জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, গুম হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, বাড়িঘর ছেড়েছে তাদের ত্যাগকে স্বীকার করতে হবে। সর্বশেষে ছাত্র আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণ কী ভাবছে? তাদের প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষ কী? আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের তা জানতে হবে। এটা যারা বুঝবে না, আগামী দিনের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তারা খুব বেশি এগোতে পারবে না। আজ যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে তাদের সহযোগিতা করতে চাই। জনগণ দেশের মালিকানা ফিরে পেয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার যে দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়েছিল জনগণ সেই মালিকানা ফিরে পেয়েছে। এখন যারা বাংলাদেশের মালিক তারাই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কীভাবে চলবে। আর আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা তাদের কাছে গিয়ে বলবো, আমরা তাদের জন্য কী করতে চাই। আমরা কী পরিবর্তন চাই। কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই।
সভায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারছি এটা আমার বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা পলায়নের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, যেখানে মানুষ নতুন করে চিন্তা করছে। এখন মানুষ মুক্তভাবে বাঁচতে চায়, চলতে চায়। দেশের শতকরা প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ তরুণ যুবক, তাদের চিন্তাকে ধারণ না করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো আপনারা মানুষের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাসে অনেকেই নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। শত শত প্রস্তাব আসছে আসবে কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কি? সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে আপনারা আগাতে পারবেন না। কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ না।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, অনেকে বলছেন এটা একটা বিপ্লবী সরকার আসলে এটা একটা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার। যেহেতু এই সরকার বর্তমান সংবিধানকে মেনে চলছে। তিনি বলেন, পুলিশ এখনো সক্রিয় হয়নি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে সক্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, মানবিক দেশ চাই যেখানে নাগরিকের অধিকার কখনো বিঘিœত হবে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক বলেন, গত এক মাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানুষের সাফল্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির সরকার মেনে নিতে পারেনি। তাদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি, পরাজিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি সরকারকে আন্তরিকতার সাথে শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এক মাস একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এই সরকারকে বুঝতে হবে জাতির জন্য যে সমস্ত ছাত্র-জনতা অকাতরে জীবন দিয়েছে, তাদের ভূমিকা অনন্য। সেই শহীদদের প্রতি আমাদের কর্তব্য আমরা পালন করছি কি না? এখনো আহতদের কান্না আমাদের হতবিহবল করে। এই সরকারকে অবশ্যই গণহত্যাকারীদের সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।