সরকারপ্রধান ও সরকারি দলের যোগসাজশেই বিডিআর হত্যাকান্ড হয়েছিল : হাফিজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩০ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:১১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হত্যাকান্ডের ঘটনার পুনঃতদন্তে ‘আসল রহস্য’ উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে বিএনপি। বিডিআর হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত হওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ঘোষণার পরদিন আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম দলের এই প্রত্যাশার কথা জানান।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনা হৃদয় বিদারক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম রয়েছে, এই দেশটা একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে যাদের কোনো শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে না। এই পুনঃতদন্তে সেই রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ১৯৭১ সালে আমরা ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন অফিসার মিলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলাম। আমাদের সৃষ্ট এই সেনাবাহিনী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেছিলো প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের সাথী হয়ে জনগণের আশা- আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলো। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার জন্যই প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো এই বিডিআর হত্যাকান্ড আমরা আশা করব, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্মোহভাবে নিরপেক্ষভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবেন এবং বিচারের কাজ দ্রুত শুরু করবেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনেক নিরহ ব্যক্তিকে দন্ডিত করা হয়েছে, অনেক দোষী ব্যক্তি শাস্তির আওতার বাইরে চলে গেছে। তবু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা বিএনপির অনুরোধে এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমার জন্য অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে সকল দেশ এবং প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে অপকর্মে লিপ্ত ছিলো তাদের সকলের চেহারা উন্মোচিত হোক জনগণের স্বার্থে। আমরা একটা নতুন যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের দল থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবো।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই নারকীয় বিডিআর হত্যাকান্ডের একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে চাই, বিচার চাই যাতে করে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহ তাদের যাতে অন্তর শান্ত হয়। আমরা দেখতে চাই, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটি যাতে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে আমরা বিএনপির তরফ থেকে তাদেরকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করব এবং পরে যেসকল ঘটনার বিবরণ বা যেসব ব্যক্তিবর্গ যারা অত্যন্ত ভাইটাল উইনেস ছিলেন এই ঘটনায় তারা কেউ বিদেশে চলে গেছেন, কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সাধারণ নাগরিকরাও বর্তমান সামরিক বাহিনীর কর্মকা- ক্লোজড মনিটরিং করছি। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে শেষ মুহূর্তে দ্রুত সরকার থেকে বাইরে নিক্ষেপ করার জন্যে এবং ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করার জন্যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনাবাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পুনঃতদন্তের কোনো সময়সীমা বিএনপি দেবে কি না প্রশ্ন করা হলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে চাই এই তদন্ত কমিটিকে। আমরা আশা করি দ্রুত তারা তদন্ত কাজ এবং বিচারের কাজ সম্পন্ন করবে। সময়সীমা বেঁধে দেয়া অত্যন্ত মুশকিল।
হাফিজ বলেন, এই ঘটনায় সরকারের এবং বিদেশি শক্তির সংশ্লিষ্টতা ছিলো কি না এই সম্পর্কে সব কিছু এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। এই সম্পর্কে আমরা ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি পত্র হস্তান্তর করি। সেখানে অনুরোধ করা হয় যে, এই নারকীয় হত্যাকান্ডের নতুনভাবে তদন্ত করে পুনঃবিচার করতে হবে। এর সাথে কারা কারা সংশ্লিষ্ট বিদেশি হস্তক্ষেপ আছে কি না? কি কারণে এই নারকীয় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিলো এব্যাপারে কমিশন গঠনের জন্য আমাদের দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। আমরা খুব আনন্দিত যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই নারকীয় হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের কাজ শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মেধাবী ৫৭ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ১৭ জন লোককে হত্যা করা হয়। পিলখানার অভ্যন্তর থেকে ৩৮ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নির্মোহ ও উন্মুক্ত তদন্ত হলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পিলখানা ঘটনার প্রধান কারণ কি ছিলো? সেনাবাহিনীর মেরুদন্ড ভেঙে দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ, অকার্যকর, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই এই হত্যাকা- সংঘটিত করা হয়েছিলো। এতে জড়িত ছিলো বিদেশি শক্তির অংশ হিসেবে বেশ কিছু ব্যক্তি। সুপরিকল্পিতভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জনগণের বিশ্বাস রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুনসহ আরো অনেক আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়বর্গ জড়িত ছিলেন বলে জনগণের ধারণা রয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনায় সেনা বাহিনীর তরফ থেকে তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ‘আলোর মুখ’ দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।
তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষয়ে আমরা একটা চিঠি সরকারকে দিয়েছিলাম। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা সন্তুষ্ট যে তারা দ্রুত এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছেন। আমরা আমাদের চিঠিতে একটি তদন্ত কমিশন স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। একটা কমিশন যদি তারা করে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে তাহলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা তদন্ত কমিশনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যদি সরকার মনে করে যে, এখন যে পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার পাশাপাশি যদি সরকার মনে করে যে একটা কমিশন গঠন করবেন সেই কমিশনে অনেকের অনেক কিছু বলার থাকবে যেটা আগে বলতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম।