এস আলমের গাড়ি সরাতে সহায়তা
সুফিয়ান-এনামসহ বিএনপির তিন নেতাকে শোকজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৫ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:১০ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
মধ্যরাতে চট্টগ্রামের শীর্ষ বিএনপি নেতাদের তদারকিতে আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি একটি ওয়্যারহাউজ থেকে একে একে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে দলটি। নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতারা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম-আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া।
প্রসঙ্গত: গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে একটি ওয়্যারহাউজের ভেতর থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিলাসবহুল ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে আছে বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ ও অডি ব্যান্ডের গাড়িও। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দৃষ্ট হয় এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্তত ১৫ জনের একটি দল এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউজের সামনে আসে। একই সময়ে আরো তিনটি গাড়ি সেখানে পৌঁছে। সেখানে গাড়ি থেকে একে একে নামেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, পটিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব অহিদুল আলম চৌধুরী পিবলু এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ হোসেন নয়ন। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ছেলের শ্বশুর মীর গ্রুপের আবদুস সালাম বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামের মামাতো ভাই।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী এক জন জানান, একটি গাড়ি থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের ড্রাইভার মনসুরকে নামতে দেখা যায়। সে গাড়ির ভেতরে আবু সুফিয়ান বসেছিলেন। নইলে ওয়্যারহাউজে তার ড্রাইভারের আসার কথা নয়। নাম প্রকাশে একজন জানান, কিছুক্ষণ পরই আমরা বুঝতে পারি শুরুর দিকে আসা ১৫ জনের পুরো দলটিই ছিল মূলত ড্রাইভার। কারণ, তাদের একেক জনকে একেকটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো হচ্ছিল। এভাবে আমরা অন্তত ১৪টি গাড়ি নিয়ে যেতে দেখেছি।
প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সবকটি বের হওয়ার পরই এনামসহ বাকি সব নেতা ওয়্যারহাউজের সামনে থেকে সরে যান।
ঘটনার ঐ প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘গাড়ি শুধু নয়, গাড়িগুলোর ভেতরে কিছু একটা ছিল। আমাদের ধারণা, সেখানে বিপুল অঙ্কের টাকা ছিল। শুধু গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষনেতাদের সেখানে সশরীরে আসার কথা নয়।’ গাড়িগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেননি। তবে তারা জেনেছেন, গাড়িগুলো সীতাকুণ্ডের দিকে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় ছিল, সেটা তারা জানতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তরা যা বললেন: এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ‘মিথ্যা সংবাদ’ প্রচার করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ জেলা নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
লিখিত বক্তব্যে আবু সুফিয়ান দাবি করেন, ‘গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কে বা কারা প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরে বিএনপির নাম দিয়ে টাকা চাঁদা দাবি করছে বলে এনামুল হক এনামকে অবহিত করেন। যদি চাঁদা না দেয়, তাহলে মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা চালাবে বলেও হুমকি দেয়। তাই মীর গ্রুপের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিএনপির নাম দিয়ে ফোন করার ঘটনা অবহিত হওয়ার পর এনামুল হক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে ঘটনার কথা জানান। তারপর আমরা কয়েক জন বিএনপি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠানে যাই এবং চাঁদাবাজদের হুমকির ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বিএনপির নাম ব্যবহার করা চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করতেই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো অবস্থান করে মীর গ্রুপের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করি এবং বিএনপির নাম দিয়ে কেউ যদি কোনো ধরনের চাঁদা দাবি করে, তাহলে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আমরা চলে আসি। মূল ঘটনা হলো এটা। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করেছে আমরা নাকি কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন মইজ্জার টেক এলাকায় অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউজে গিয়েছিলাম, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।