শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারবেন না : মান্না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৪ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
‘শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন আর হতে পারবেন না’ বলে হু্শিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল নানা আলোচনার প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দল মিলিয়ে যুগপত আন্দোলন, বৃহত্তর আন্দোলনের বৃহত্তর একটা প্লাঠফর্ম তৈরি করেছি। আজকের এই কর্মসূচিও সারা বাংলাদেশে জুড়ে পালন করা হচ্ছে। আমরা খুব স্পষ্ট কন্ঠে বলতে চাই, শেখ হাসিনার ইভিএম মানি না, কোনো জ্বাল জুয়াচুরি মানি না, ফোরটোয়ান্টি নির্বাচন করতে দেবো না। সবার জন্যে বলি, শেখ হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন আর হতে পারবে না।
মান্না বলেন, ‘‘শেখ হাসিনাকে যেতে হবে ক্ষমতায় থেকে। তার জায়গায় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সেই সরকার অন্তবর্তীকালে একটা ভালো নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবেন- এই কথা আমরা যেমন বলছি, আজকে সারা দুনিয়া বলছে। আমেরিকা কি কি বলেছে আপনারা জানেন। এখন দেখি কানাডা বলে, এখন দেখি জাপান বলে। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি তো দুনিয়ার কোথাও শুনি নাই দিনের ভোট রাত্রে হয়ে যায়। এখন দেখি অস্ট্রেলিয়া বলছে।”
‘কর্মসূচি দুই-একদিনের মধ্যেেই’
মান্না জানান, গণতন্ত্র মঞ্চ পরবর্তি কর্মসূচি পরে সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করা হবে। আজকেই আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করছি না। আগামীকাল আমরা সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি নিয়ে আলাপ করে পরে ঘোষণা করতে পারব। যেহেতু আগামীকালও আমাদের যুগপত আন্দোলনের সহযোগীদের কারো কারো কর্মসূচি আছে।”
সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা বেলা সাড়ে ১২টায় পদযাত্রা শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বরে গিয়ে বেলা দেড়টায় পদযাত্রা শেষ করে।
যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো শনিবার সারাদেশে পদযাত্রা কর্মসূচি করছে।
বিএনপি ইউনিয়ন ইউনিয়নে এই পদযাত্রা কর্মসূচি করছে। এছাড়া ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপিও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন রুটে পদযাত্রা করে।
‘ওদের মৃত্যু ঘন্টা বেজে উঠছে’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘সর্বশেষ আমেরিকাসহ ১২ দেশ সাংবাদিকদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়, তাদের লিখতে দেয়া হয় না, ছবি ছাপতে দেয়া হয় না, সত্য কথা বলতে দেয়া হয় না-বলেছে একাজ বন্ধ করতে হবে।ধীরে ধীরে পাখির ডানা ছোট হয়ে আসছে, ধীরে ধীরে হাত-পা যত নাড়াতো সেই হাত-পা-ও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ওদের মৃত্যু ঘন্টা বেজে গেছে-রাজনৈতিক মৃত্যু। অবশ্য এটা বলা যায় যে, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ তো জীবিত নাই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কি? তারা কোন ভালো কাজ করছে। সো-কল্ড যে উন্নতির কথা বলছে, সেই উন্নতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষই বলে- চালের দাম যদি ৯০ টাকা হয় দেশের উন্নতির মানে কি ....?”
এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘‘ আমরা খুব বেশি দেরি হবে না, ঘুছিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
‘সরকারের মন খারাপ’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘সরকারের খুবই মন খারাপ কেনো বিরোধী দল একটা গাড়ি ভাংচুর করছে না, কেনো একটা বাসে তারা আগুন দিচ্ছে না। যদি এই সহিংসতা করে তারা(সরকার) গায়েবী মামলা দিয়ে, ভুয়া মামলা দিয়ে, হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে দমন করতে পারে, গ্রেফতার করতে পারে। আজকে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেরও সরকারি দল সমালোচনা করছে। আওয়ামী লীগে ঐহিত্যবাহী রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের একটা বড় রাজনৈতিক পরাজয়, আওয়ামী লীগ এখন সামনের কাতারে না, বিরোধী দলের পেছনে পেছনে হাটছে, বিরোধী দলের কর্মসূচির এখন তারা লেজুড়বৃত্তি করছে। বিরোধী দল যখন সমাবেশ দিচ্ছে, পাল্টা কর্মসূচির তারা ডাক দিচ্ছে। এভাবে সহিংসতা, ভয়ভীতি তৈরি করে তারা তাদের দখলদারিত্বকে দীর্ঘায়িত করতে চায়।”
‘পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার: নির্লজ্জ সরকার’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘আপনারা আজকের পত্রিকায় দেখেছেন, নির্লজ্জ কত খানি হলে তারা(সরকার) দেড় মাস ধরে দুইটো বই সিক্স-সেভেনের জন্যে পড়তে বিলি করবার পরে সেটা গতকাল রাতে হঠাত করে উইথ ড্র করেছেন। কেনো? কারণ তার মধ্যে এরকম কিছু জিনিস আছে যেটা দেশের মধ্যে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি স্থাপনের বদলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং দেশে অশান্তি তৈরি হতে পারে।”
মান্না বলেন, ‘‘গতকাল চাঁদপুরে পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন যে, এর মধ্যে এমন কিছুই নাই যার জন্য বিরোধী দল এতো কথা বলতে পারে। তো এখন নিজেরাই যে কথা বলছেন? সেই কথার কী হবে?”
‘ওরা দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আজকে তারা(সরকার) দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এই যে আমাদের পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার.. এটা যে কত বড় ঘটনা। একটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করলে ওই দেশের আর কিছু ধবংস করতে হয় না। উনারা(সরকার) আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করার ব্যবস্থাদি নিয়েছেন এবং শিক্ষা দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। সেখানে শিক্ষা নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার সমস্ত নীতি তারা কার্য্কর করছে। এটা কেনো করছে? আবারো ক্ষমতায় থাকার সুবিধার জন্য। আবারো বলি, ক্ষমতায় থাকার যে স্বপ্নে বিভোর আছে দেশ ও মানুষকে বিভক্ত করে, ক্ষমতায় থাকার এই স্বপ্ন জনগন চুরমার করে দেবে।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন পাপ্পুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সামতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন।