টাকা ছাপিয়ে দেশ চালাচ্ছে সরকার : আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০২ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৪৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু চৌধুরী বলেছেন, টাকা ছাপিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে বর্তমান অবৈধ সরকার। গত দুই মাসে তারা পঞ্চাশষ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাপিয়েছে। এটা অব্যাহত ভাবে চলতে পারে না। দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধংস্ব করে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে দশ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আওয়ামী লীগ। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাস্তায় আন্দোলন করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে।
আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট মাঠে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভোট চোর, এটাই মূল কথা। দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। তাদেরকে মিথ্যা, গায়েবী মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। খুন করা হচ্ছে। ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য অবৈধ ভাবে সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় বহু অপকর্ম তারা করছে। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি করে না। তারা পুকুর চুরি করছে, ব্যাংক, শেয়ার বাজার, মেঘা প্রজেক্ট, ছোট প্রজেক্ট সব চুরি করে দেশকে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিনত করেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। নিন্ম ও মধ্যবিত্ত মানুষ দু’বেলা খেতে পারছে না। সরকারের লুটপাট ও চুরির কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেলের উচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। আওয়ামীলীগের সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে ভোট চুরিতে মন দিয়েছে। জনগণকে পিটিয়ে ভোট দখলে রাখতে চেষ্টা করছে।
এ সময় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে এই বিএনপি নেতা বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। টিকে থাকতে পারবেন না। স্বেরাচার টিকতে পারেনি। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আমাদেরকে হামলা, মামলা, হত্যা করেও থামাতে পারেনি। আমরা মরতে শিখেছি। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।
এ সময় নতুন কর্মসূছি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। আর এভাবেই ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সরকার পতনের শেষ সংগ্রামে জনগণকে সম্পৃক্ত করে শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হবে। এর মধ্য দিয়েই মানুষ দেশের মালিকানা ফিরে পাবে, বলেও যোগ করেন তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ভয় পায় না। তিনি ভয় পায় নির্বাচনকে। আর এ কারণেই তিনি নির্বাচন নিয়ে উপহাস করছেন। অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরকে সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন এক দফার আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করে দেশকে ধ্বংসের দ্বার প্রাপ্ত থেকে ফিরিয়ে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাই প্রস্তুতি নিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সদ্য সংসদ থেকে পদত্যাগকারী এমপি হারুন অর রশিদ বলেন, উপ-নির্বাচনে হিরো আলম সরকারকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। এই সরকার জালিম ও মুনাফেক সরকার। ওয়ান ইলিভেনের পর তারা ক্ষমতায় এসে তাদের সব মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের মামলা সব চালু রেখেছে। গত ২৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা রাজশাহী সমাবেশ করেছে সরকারি গাড়ী রিকুজিশন করে, লোক ভাড়া করে। তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধংস্ব করে দিয়েছে। অটো পাশ চলছে। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের বই দিতে পারছে না। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী বলছেন-আমরা নাকি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছি। অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করুন, না হলে দেশের মানুষ জুতা মারবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বিএনপি।
এতে সভাপতি ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময় সমাবেশটি যৌথ ভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও শরীফুল আলম।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আব্দুল বারী ড্যানী, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল আলম খান, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি ও শাহ শহীদ সারোয়ার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম প্রমূখ।