ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি আসবে না-ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৭ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫১ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ না হলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের মাধ্যমে ইজরাইলের একজন প্রতিনিধি শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অর্থ ও অস্ত্র দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। তারা বলেছিল এজন্য দুটি চুক্তি করতে হবে। দেশ স্বাধীনের পর অস্ত্র কোথায় যাবে তা তারা ঠিক করে দেবে আর টাকা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ফেরত দিলেও চলবে। বিনিময়ে ইজরাইলকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ইজরাইল সেদিন চুক্তি করতে না পারলেও তারা আশা ছাড়েনি। এখন সেই ইজরাইলের যন্ত্র দিয়ে আমাদের জনগনের উপর নজরদারি করা হচ্ছে।
আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ বাংলাদেশের উদ্যোগে সাম্প্রতিক কাশ্মির পরিস্থিতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে ও সাউথ এশিয়ান ষ্টাডিজঃ বাংলাদেশ’র সম্পাদক কর্ণেল (অব.) মুহম্মদ ইসহাক মিয়ার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক, সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. এহসানুল হক মিলন, সামরিক বিশেষজ্ঞ কর্ণেল (অব.) আশরাফ আল দ্বীন পিএসসি, কাউন্টার টেররিজম বিশেষজ্ঞ ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক এ এফ এম করিম, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর আবুল বাশার খান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাবেক মহাপরিচালক সাকিব আলী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত বাংলাদেশকে সিকিম বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিব সেটা চাননি। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে যাননি। স্বাধীন হওয়ার পরও ভারত প্রস্তাব দেওয়ার পরও তিনি ভারতের বিমানে না এসে ব্রিটিশ বিমানে আসেন। তিনি ভারতে নামতেও চাননি। তবে পরে নেমেছিলেন। কারণ শেখ মুজিব বুঝেছিলেন ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তিনি বলেছিলেন, আমি বাঙ্গালী ও মুসলমান। তখনই ইন্দ্রাগান্ধী বুঝেছিলেন শেখ মুজিবকে ট্যাকেল করা সহজ হবে না।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের পরিবর্তে আমাদের পাকিস্তান-ইরান-সৌদিআরবের সাথে নতুন চুক্তি করা উচিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এখন নিয়মিত গবেষণা করা উচিত, ভারতে প্রতিনিয়ত কি হচ্ছে তার খোঁজ খবর রাখা উচিত। তাদের সবকিছু আমাদের দৃষ্টিতে রাখতে হবে। তাদের ইদুর নীতি বন্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব সময় রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতেন, আপনিও পিতার মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিন। মোশাহেদদের আপনার পাশ থেকে সরিয়ে দিন। কাশ্মির ও উলফাদের পক্ষ নিন।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ভারত আমাদের কি কি বিষয়ে নাক গলায় তা আমি সেনাবাহিনীতে থাকতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকতে দেখেছি। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে যতটুকু সমস্যা ছিল কাশ্মিরে তার থেকেও বড় সমস্যা চলছে। ভারত এখন কাশ্মিরকে আগ্নেয়গিরি করে রেখেছে। সেখানে চতুর্থ মুক্তি আন্দোলন চলছে। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার সময় মুসলিম সংখ্যাগরিস্ট হায়দারাবাদ স্বাধীন দেশ থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত এক রাতের মধ্যে তাদের দমনপীড়ন করে দখল করে নেয়। একইভাবে কাশ্মিরকেও তারা তাদের মধ্যে নিয়ে নেয়। এখন তারা গায়ের জোরে ৩৭০ ধারা ভঙ্গ করে কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন কেড়ে নিয়েছে। জেনারেল ইবরাহিম সরকারকে কাশ্মিরের পক্ষে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ভারতের সাথে আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে তার প্রধান কারণ হবে কাশ্মির। এজন্য সরকারকে কাশ্মিরের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
এহসানুল হক মিলন বলেন, অনেকে মনে করেন কশ্মিরে সমস্যা হলে আমাদের কি? আসলে কাশ্মির অস্থিতিশীল হলে তার প্রভাব আমাদের উপর পড়ে। ভারত কাশ্মিরের সাথে যে দমন পীড়ন চালাচ্ছে তাকে আমাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। আগ্রাসনের বিস্তার যেন না ঘটে সে ব্যাপারে জনগনকে সচেতন হতে হবে। স্বাধীনতার সবর্ণ জয়ন্তী পালনকালে কারো পরগাছা হয়ে যেন থাকতে না হয়।