৭টি রাজনৈতিক দল নিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার আত্মপ্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১০ পিএম, ২১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:০৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাম ঘরানার ৭টি রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা’ নামে নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে তোপখানা রোডে আফম মাহবুবুল হক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরো একটা নির্বাচনি তামাশার আয়োজন করে ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তাদের দুষ্কর্কমের সহযোগীরা নতুন নীল নকশা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং শোষিত নির্যাতিত জনগণের মুক্তি অর্জনের একমাত্র পথ ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রাম। শ্রমিক কৃষক ও ব্যাপক জনগণের লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে জনগণের সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বৈপ্লবিক লক্ষ্যের দিকে। এই উপলব্ধির ভিত্তিতে আমরা ৭টি বামপন্থি রাজনৈতিক সংগঠনের ফ্যাসিবাদ বিরোধী ইস্যুভিত্তিক লড়াইয়ের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম হিসেবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার নামে ঘোষণা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়কের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক সুভাংশু চক্রবর্তী।
লিখিত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক বলেন, অতীত ও বর্তমানের ফ্যাসিবাদের সাথে সম্পর্কিত রাজনৈতিক দলগুলো ব্যতীত সকল বাম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি আমাদের আহ্বান- আসুন ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান শোষণ ও বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র-সরকার প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী লড়াই এগিয়ে নেয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। ১৩ দফা ইসুতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে ‘রাজপথে’ থাকার অঙ্গীকারও ঘোষণা করে নতুন আত্মপ্রকাশ হওয়া জোট। তারা আগামী ২৪ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও ফোনে আড়িপাতার প্রতিবাদে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে।
নতুন জোটের রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে : বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ। বর্তমান বাম ঘরানার আরো দুইটি জোট রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। বাম গণতান্ত্রিক জোটে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে গঠিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যে রয়েছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্ক্সবাসী-লেনিনবাদী), সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার ১৩ দফার মধ্যে রয়েছে : কৃষক শ্রমিক জনগণের ক্ষমতা ও অবাধ গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিবেশসহ জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৪ ধারা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল, শিল্প পুলিশ-শিল্প গোয়েন্দা, র্যাবসহ দমনমূলক সকল আইন, বাহিনী ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠন-সমাবেশ করার অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা-হামলা, নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও দোষীদের বিচার, জনগণের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎকারী দুর্নীতিবাজ, দখলবাজ পাচারকারীদের বিচার, বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি-সারসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, মজুরি ও বেতন বৃদ্ধি করাসহ শ্রমজীবী-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের জন্য সারাবছর রেশনিং ব্যবস্থা, ৮ ঘন্টা শ্রম সময় নির্ধারণ, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ দেশের ওপরে সকল বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ, ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে করা ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও প্রকল্পসমূহ বাতিল, অভিন্ন নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যবস্থাসহ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, বন্ধ ঘোষিত পাটকল ও চিনিকল আধুনিকায়ন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা, কৃষি উপকরণের দাম কামানো, ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজ ও ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের দায়িত্বে সর্বজনীন বৈষম্যহীন স্যেকুলার একই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, পাহাড় ও সমতলের নিপীড়িত জাতিসত্তার স্বীকৃতি, নারী ও পুরুষের সমানধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মের সকল ব্যবহার বন্ধ প্রভৃতি রয়েছে।
সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডে নতুন জোটের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
জোটের সমন্বয়ক জাফর হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি শহীদুল ইসলাম, গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মাসুক, কমিউনিস্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ইমাম গাদ্দালী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সদস্য মঈনুদ্দিন চৌধুরী লিটন।
এছাড়া ছিলেন গণমুক্তি ইউনিয়নের রাজা মিয়া, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের বেলাল চৌধুরী, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সান্তুনু সমুন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।