এই সরকারের কথা হলো, আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৩ পিএম, ২১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:০৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বর্তমান সরকার ১৪ বছর ধরে দেশের ওপর, দেশের জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কই নেই।
আজ শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে শীতার্ত মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এমনিতেই আপনারা কষ্ট পাচ্ছেন শীতে। আবার ভাতেরও কষ্ট পাচ্ছেন। চালের দাম, ডালের দাম, চিনির দাম, লবণের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের দামও কমে নাই, বেড়েছে। গ্যাসের দামও বাড়ছে। এইযে থ্রি হুইলার, অটোরিকশা, ট্রেন সবকিছুর টিকিটের দাম বেড়ে গেছে, কারণ তেলের দাম বেড়েছে। গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের যদি বাড়ে, তাহলে যারা উৎপাদন করে, অর্থাৎ কাপড়-চোপড় ইত্যাদি সেগুলোর দামও বেড়ে যায়। বাংলাদেশে এখন সে অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজ শহরের বাসা থেকে পার্টি অফিসে হেঁটে আসতে দেখি শহরের রাস্তা ঘাট ভেঙে শেষ, হাঁটা যায় না। সেই রাস্তা ঠিক করার উদ্যোগ নেই। যাকে পৌরসভার মেয়র বানিয়ে দিয়েছে, সে তো দেখতেও পায় না। আর যারা এখানে সরকারি দলের নেতা আছেন, তারা তো নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। তারা শুধু ফুলছে, ফুলেই যাচ্ছে। যার একটা একতলা বাড়ি ছিল, তার এখন ১০তলা বাড়ি হয়েছে। যে স্যান্ডেল পরে বের হতে পারত না, সে এখন বড় গাড়ি চড়ে বেরোচ্ছে। সারাদেশের চিত্রই এটা। গরিব মানুষ গরিব হচ্ছে, আর এরা ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছে। হাজারো কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এটা একটা ছোট্ট ছবি। সারাদেশে এই ১৪ বছরের যে ছবি, এটা অত্যন্ত করুণ, মর্মান্তিক। আর শুধু একটা কথা বললেই ওর বিরুদ্ধে মামলা, পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কথা বলা যাবে না। প্রতিবাদ করা যাবে না, মিছিল করা যাবে না, বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারপারসনের সঙ্গে কারাগারে সাধারণ মানুষের ন্যায় আচরণ করা হয়েছে। হাজী সেলিমের জামিন হয়, ক্যাসিনো সম্রাটের জামিন হয়, ১৭ বছর কারাদন্ড হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের বড় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া অবাধে হয়ে ঘুরে বেড়ায়। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন হয় না। এবার আমার জামিন নিতে সিএমএম কোর্ট থেকে হাইকোর্ট, হাইকোর্ট থেকে চেম্বার জজ, সেখান থেকে অ্যাফিলিয়েট ডিভিশন। এতে লাখো টাকা চলে যায়। এই যে লম্বা প্রক্রিয়ায় জামিন নিতে কয়জন পারে, বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এই বিচার ব্যবস্থাটাকে ঠিক করার জন্য, মানুষ যাতে ন্যায্যবিচার পায়, তার জন্য আমরা একটি বিচার বিভাগের কমিশন গঠনের কথা বলেছি। এই যে প্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতা, এই ক্ষমতাটাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা আমরা বলেছি। একজন ব্যক্তি ২ বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিও হতে পারবে না। আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। কাউকে আঘাত করছি না। কিন্তু আমাদের ওপর যদি আঘাত আসে, জনগণ তাদের শক্তি দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তা প্রতিরোধ করবে।
ইতিহাসের পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইয়ুব খান পাকিস্তান আমলে ১০ বছর শাসন করেছিল। অনেক বড় বড় ভবন করেছিল। উন্নয়ন উন্নয়ন করেছিল। তারপর দেখে উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে আইয়ুব খান নেই। এরশাদ সাহেব অনেক উন্নয়ন করার পরও সেই আমলের ছাত্ররা তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে আন্দোলন দমাতে চেষ্টা করছে, সেটা তারা দমাতে পারবে না। মানুষ জেগে উঠেছে, তারা তাদের অধিকার আদায় করবে।
কিছু বললেই তারা মামলা দিয়ে দেয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সরকার খারাপ এ কথাটা বললে তারা মামলা দিয়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যায় না। যদি কথা বলায় না যায়, তাহলে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম কেন। আমরা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে জুলুম করত। অথচ এখন তাদের মতোই শাসনব্যবস্থা কায়েম করছে এ সরকার। তবে তা আর করতে দেয়া হবে না।
বিএনপি নির্বাচন চায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তার আগে শেখ হাসিনার এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ এই সরকার থাকলে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। কারণ তারা কাউকে ভোট দিতে দেয় না। তাদের কথা হলো, আমার ভোট আমি দেবো, তোমার ভোটও আমি দেবো। আগামীতে আর এরকম নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। শান্তিপূর্ণভাবে এর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।