সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:১০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারকে হটানোর যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ''আপনারা জানেন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। তিন মিনিটে সেদিন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাংলাদেশের সংবাদপত্র, বাংলাদেশের ভোটাধিকার সব কিছু হরণ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিলো। সেই ২৫ তারিখ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তৈরি, দ্রব্যমূল্য ও মানুষকে বাঁচাবার লক্ষ্যে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লা্বের সামনে সকাল ১১টায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করবে।"
এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যুগপত আন্দোলনের ধারা আরো শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ব্যানারে '১৪ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপত আন্দোলন জোরদার করুন এবং সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন' লেখা ছিলো।
গণতন্ত্র মঞ্চের ৭ দলের কয়েক'শ নেতা-কর্মীরা এই সমাবশ ও গণমিছিলে অংশ নেন। কর্মীরা 'ভোট চোর সরকার, আর নাই দরকার', 'শেখ হাসিনার সরকার, আর নাই দরকার', 'আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও, ভোট চোরের আস্তানায়' ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ''এবছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ১০/১৫ বছরের রাজনীতি এই বছর ঠিক হবে। আমরা বলেছি গোটা দেশের দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সকল মানুষ যুগপতভাবে রাজপথে দাঁড়িয়ে আজকে আমি আমার দেশকে রক্ষা করব, গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করবো, ভোটাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবো। সেই লড়াই গণতন্ত্র মঞ্চ শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেবে। এই লড়াইয়ে আপনারা সকলে অংশ নেবেন এই প্রত্যাশা আমরা করি।"
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ''দেশটা কোথায় যাবে জানি না? আইএমএফের লোক আপনারা (সরকার) গ্রহন করছেন এই লোন ৪৫০ কোটি সেখানে মিলিয়ন ডলার শুধু মাত্র গত ১৪ বছরে যে দুর্নীতি হয়েছে, যে টাকা পাচার হয়েছে তার কিছু অংশ যদি উদ্ধার করা যায় আইএমএফের লোন নেবার দরকার হয় না। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দরকার হয় না, গ্যাসের দাম বাড়ানোর দরকার হয়, জ্বালানি তেলের কোনো মূল্য বৃদ্ধি করবার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। সরকার সেই পথে হাটছে না। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এই সরকার বিদায় নেবে কিন্তু আইএমএফের লোন মানুষের গলায় ফাঁস হিসেবে থেকে যাবে। দেশের জনগনকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।"
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ''এই সরকারের অধিনে কোনো ভোট হবে না। ১৪ বছরে এই সরকার এতো অপরাধ করেছে, এতো লুট করেছে ভোটের মুখিমুখি হবার সাহস তাদের নাই। জামানত হারানোর যুগে প্রবেশ করেছেন। মঞ্চ-টঞ্চ আজকাল ভেঙ্গে পড়ছে। কাজেই ক্ষমতার মসনটাও খুব দ্রুতই ভেঙ্গে পড়বে। কোনো আওয়াজ, আপনাদের দমনপীড়ন আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা এগুলো আপনাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না।"
তিনি বলেন, ''উনারা (সরকার) বলেন, অতি বাম, অতি ডান সব নাকী একসাথে হয়েছে। আমরা বলি, প্রধানমন্ত্রী আপনি ভোট চুরি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। ১৮ কোটি মানুষের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছেন। তারা এখন এক কাতারে আছে। ১৮ কোটি মানুষ আজকে এক সাথে লড়াই করছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মধ্যে কিভাবে বৃহত্তর ঐক্য তৈরি করা যায় এবং সেই ঐক্যে সরকার বিভ্রান্তির চেষ্টা করবে। তারা জামাত কার্ড খেলবে, তারা আন্দোলনের সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তারা ভয়-ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করবে। কিন্তু এসব মোকাবিলা করে সমস্ত মানুষকে রাজপথে আসতে হবে।"
সাকি বলেন, ''জনগনের মধ্যে নতুন স্বপ্ন সৃষ্টি করতে হবে। সেই স্বপ্ন হচ্ছে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সেই স্বপ্ন হচ্ছে নতুন রাষ্ট্রের গ্যারেন্টি একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। আর তার জন্য দেশের সংবিধান সংস্কার করতে এ সমস্ত দাবি আমরা তুলেছি। ইতিমধ্যে বিএনপি রাজপথে, অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে। আমরা যুগপত আন্দোলনের ধারায় আছি। আমরা অবিলম্বে একটা ন্যুনতম দফা-দাবিনামা তৈরি করে এই আন্দোলনকে আরো বৃহত্তর রুপ দেবো এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।"
জাতীয় সমাতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে
বাংলাদেশ ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মীর মোফাজ্জল হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, মোমিনুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির একেএম জামির প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের একই কর্মসূচি পালন করে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক কমরেড আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
পরে বিক্ষোভ মিছিল করে জোটের নেতা-কর্মীরা পুরানা পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে যায়।