চলমান আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার বিরোধী দল দমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৯ পিএম, ১২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
চলমান আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার বিরোধী দল দমনে ‘মরিয়া হয়ে উঠেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ফরিদপুর-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছু আগে বলতেন যে, আমরা নাকি রাস্তায় দাঁড়াতে পারি না, আমাদের নাকি কোমর নেই। এখন এতো অস্থির হয়ে গেছেন যে, সবরকম শক্তি নিয়োগ করেই আপনারা জনগণের ওপর অত্যাচার করছেন, নির্যাতন করছেন এই আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য। তার অর্থই হচ্ছে যে, সরকারের এখন পায়ের তলে মাটি নেই এবং সরকার প্রমাদ গুনছে, ভয় পেয়েছে, অত্যন্ত বেশি ভীত হয়েই তারা এসব আক্রমণ চালাচ্ছে। চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথারই আমরা জবাব দেই না। উনি কখন কী বলে জনগণ ঠিক বুঝতে পারে না কি লক্ষ্যে বলেন, কি কারণে বলেন। আমরা মনে করি যে, এগুলোর জবাব দেয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। কাজেই সেটা প্রমাণ হবে। যেদিন পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমপর্ণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তার আগের দিনই ইয়াহিয় খান বলেছিলেন, জং জারি রাহে গা। পতন যখন স্পষ্ট হয়, পতন যখন আঘাত করতে আসতে থাকে, পতন যখন দেখতে পায়, তখন এই ধরনের অসংলগ্ন কথা অনেক বেরিয়ে আসে।
গণঅবস্থান কর্মসূচিতে একদিনে শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই হামলা চালায়। পুলিশ সেখানে শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করেনি উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে, লাঠিচার্জ করেছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। গণঅবস্থানে একদিনে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় শতাধিক এবং আহত প্রায় আড়াইশ। ফরিদপুরে পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে মামলা করেছে। যুগপৎ আন্দোলনে গঠিত বিভিন্ন জোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথার উত্তর দেই না। কারণ আমার মতোই সারাদেশের মানুষও ওনার কথায় গুরুত্ব দেয় না। সেটার প্রমাণ আপনারা পান যে, ওনার এই যে স্মার্ট বাংলাদেশ বলার সঙ্গে সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে প্রতীকী ঘটনা।
১৬ জানুয়ারির কর্মসূচি সংশোধন : মির্জা ফখরুল জানান, আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে দেশব্যাপী সকল মহানগর ও সকল উপজেলায় সমাবেশ ও মিছিল হবে। গতকাল বোধ হয় আমরা জেলা বলেছিলাম, জেলাটা হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, অবৈধ সংসদ বাতিল, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্র বিরোধী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববাধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও রাজবন্দিদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সদরে তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা ও ফরিদপুরে গণ-অবস্থান কর্মসূচি ছিল। গণ-অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ফরিদপুর, ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই হামলা করে।
ফরিদপুর : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টায় ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে গণ-অবস্থান শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অম্বিকা ময়দান সংলগ্ন শহীদ সুফী ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করে ও উত্তেজনাকর সেøাগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা রাজবাড়ি, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের মিছিলে হামলা করে এবং অম্বিকা ময়দানে তারা হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ করে তান্ডব সৃষ্টি করে। শুধু অম্বিকা ময়দান এলাকায় নয় ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পুলিশ উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ, টিয়রিশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এ সময় হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেফতার না করে বিএনপির ১৫ জন নেতা-কর্মী গ্রেফতার করে। আহত হয় শতাধিক নেতা-কর্মী।
ময়মনসিংহ : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ময়মনসিংহ নগরীর হরি কিশোর রায় রোডে গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসার সময় ময়মনসিংহ মহানগরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলকারী নেতা-কর্মীদের ওপরে সশস্ত্র হামলা চালায়। অবস্থান কর্মসূচির সন্নিকটে গোলপুকুরপাড় এলাকায় গফরগাঁও উপজেলার নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ ও রড দিয়ে হামলা করে। এ সময় গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির ৩ কর্মীর মাথা ফেটে যায় এবং ১২ জন আহত হয়। নগরীর জুবলীঘাট এলাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে আগত নেতা-কর্মীদের বাস এবং জিরো পয়েন্ট এলাকায় হালুয়াঘাট থেকে আগত বাসে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এ সময় ২ নেতা-কর্মীর মাথায় সন্ত্রাসীরা রড ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তাদের মাথাও ফেটে যায় এবং তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সারা দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সামনেই মটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে আতংক সৃষ্টির জন্য ১০ জানুয়ারি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রোকনুজ্জামান সরকার রোকনকে গোয়েন্দা পুলিশ বিনা ওয়ারেণ্টে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারফ হোসেনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
ঢাকা : গণ-অবস্থানকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকা জেলার ধামরাই, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। ধামরাই থেকে গণ-অবস্থানে আগত নেতা-কর্মীদের বহণকারী যান বাহন পুলিশ পথিমধ্যে আটকিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ ২৬ নেতা-কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। সাভার থেকে ১০ জন এবং দোহারে ২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। কেরানীগঞ্জের শুভাড্ডা ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা গণ-অবস্থানে যোগদিতে আসার সময় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে হামলা করে এতে ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলা নেত্রীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপরেও হামলা করে। ১০ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ঢাকার গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার সময় মোহাম্মাদপুর থানা বিএনপির ৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতানুগতিকভাবে সরকার প্রশাসনকে দিয়ে বাধা, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ।