গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল হবেই : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৪ পিএম, ৯ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৪২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন সফল হবেই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে কারাফটকের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানোর জন্য এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি। আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘জ্বালাও জ্বালাও আগুন জ্বালাও’ সেøাগান দিতে থাকে। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমানো যাবে না।
পরে নয়াপল্টনে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা মহান আল্লাহতাআলার ইচ্ছা ও আপনাদের আন্দোলের মাধ্যমে আমরা দুইজন মুক্তি পেয়েছি। আরও অনেকে এখনো কারাগারে আছেন। শুধু বন্দি নয়, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একটা সেলের মধ্যে ৫ থেকে ৭ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা গ্রেফতার করে ভোটের অধিকারের আন্দোলন বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। সারাদেশ আন্দোলনে প্রকম্পিত হচ্ছে। সরকার যত বেশি অত্যাচার করবে তত বেশি মানুষ ফুঁসে উঠবে। পিছু হটার পথ নেই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাব। তাই আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে। আসুন এ শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকার করি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
এ সময় ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ও গণমিছিল সফল করার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সমাবেশের জায়গা নিয়ে অস্থির অবস্থার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়। আমার অপরাধ ছিল আমি সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছি। কারাগারে থাকা অবস্থায় পরিবারের খোঁজ নেয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করা হবে।
সাদা পাজারো জিপে করে বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসনে। পাজারো গাড়ির ওপর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এরপরই ক্রিম কালারের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন মির্জা আব্বাস। তিনি গাড়ির ওপর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা বলতে গেছি, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যের কথা বলেছি, আমরা বাজারদরের কথা বলেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় করি নাই, কোনো পাপ করি নাই। এই সরকার আমাদের একে একে বেশ কয়েকবার জেলে নেয়, আমাদের সময় থেকে বঞ্চিত করেছে, আমার নেতাকর্মীদের কাছে থাকা থেকে বঞ্চিত করেছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আজকে আমাদের মুক্তিটা নিঃসন্দেহে আনন্দের। তবে জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে রয়ে গেছে বন্দি। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা আপনাদের আমি বর্ণনা করতে পারব না এই মুহূর্তে। ওই নেতাকর্মীরা কি অবস্থায় আছে এক আল্লাহ জানেন, মা’বুদ জানেন। আর আমরা দেখে এসেছি। আমরা এই সরকারের কাছে আশা করাটা খুব মুশকিল। তারপরেও বলব, আপনারা (সরকার) এই কারাবন্দিদের প্রতি দয়া করে একটু বিবেকবান হবেন, বিবেককে কাজে লাগান। একটু দেখে যান তারা কেমন আছে? একটা জেলখানার মধ্যে তারা কেমন করে থাকে, একটা পিঞ্জিরের মধ্যে এটা আমি বুঝাতে পারব না। তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে আহবান জানাব, সরকার বলেছে, আমি পত্রিকায় দেখেছি তারা মানবিকতার কথা বলেছে। আমরা সরকারকে বলব, এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হোন। এরা বন্দি নন, এরা চোর নয়, এরা ডাকাত নয়। এরা সব রাজনৈতিক কর্মী। ওরা দেশের মানুষের কথা বলে আজকে কারাগারে। কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজখবর নেয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই নেতা।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিকাল থেকে কারামুক্ত নেতাদের অপেক্ষায় ছিলেন। মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সেখানে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতা মুক্ত হন। গত রবিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখলে এই দুই নেতার মুক্তির পথ খুলে যায়। কেরানীগঞ্জের কারাগারে মুক্তির সময় মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
কারাফটকের বাইরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপি নেতা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, এস এম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, ইউনুস মৃধা, শায়রুল কবির খানসহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু মুহুর্মুহু করতালি স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। পরে দলের মহাসচিব সড়কপথে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিমুখে রওনা হন। সর্বশেষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৫ সালে প্রায় ৯ মাস কারাবাসের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে মির্জা আব্বাস আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে যান। তবে ১৮ দিন পর উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্ত হন। গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দীন খানের বেঞ্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ৬ মাসের জামিন দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি জানালে তা সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট হাইকোর্টের দেয়া আদেশই বহাল রাখে। কারাবন্দি হওয়ার পর বিএনপির এই দুই নেতা জামিন আবেদন তিন দফা ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাকচ হয়। পরে গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতেও সেই আবেদন নামঞ্জুর হয়। গত ৮ ডিসেম্বর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শাহজাহানপুর বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা দফতরে নিয়ে যায়। পরদিন নাশকতার একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে জামিন আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে পাঠানো হয় কারাগারে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও স্থান নির্ধারণ নিয়ে উতকন্ঠা-উত্তেজনার মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে জমায়েত হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে হাতবোমা ছোঁড়া হয়েছে অভিযোগ তুলে তখন ওই কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালায় পুলিশ, গ্রেফতার করা হয় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাসহ কয়েক শ নেতাকর্মীকে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয় সেসব মামলায়। তাদের মধ্যে ৭২৫ জনের নাম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, ওই তালিকায় মির্জা ফখরুল বা মির্জা আব্বাসের নাম ছিল না।