রক্ত পিপাসু আওয়ামী লীগ সরকার রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে : প্রিন্স
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৬ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রক্ত পিপাসু আওয়ামী লীগ সরকার রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। বলেছেন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার পর বেছে বেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।
আজ শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ দেশের সকল জেলা ও মহানগরে (ঢাকা ও রংপুর ব্যতীত) বিএনপির পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচিতে এলোপাতাড়ি মারধর ও গুলি করে হত্যা করেছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিনকে। স্থানীয় ওসির নির্দেশে পুলিশ বিএনপির মিছিলে গুলি করে হত্যা করে ও বেধড়ক লাঠিপেটা করে। পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বাবুসহ আরও অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। পুলিশ এখনও নিহত আরেফিনের লাশ ঘিরে রেখেছে। পরিবার ও নেতাকর্মীদের কাছে লাশ হস্তান্তর করছে না।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভীসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে গতকাল দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচি ছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে জনগণ অনুমান করেছিল বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলা করা হবে। জনগণের অনুমানই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পঞ্চগড়সহ অন্যান্য স্থানে হামলা, হত্যা, নির্যাতন পূর্ব পরিকল্পিত। দেশকে বিরোধীদলশূন্য করতে সরকারের নীলনকশার অংশ হিসেবেই পঞ্চগড়ের আব্দুর রশিদ আরেফিনকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার দায় সম্পূর্ণ সরকারের।
তিনি বলেন, নিশিরাতের সরকারের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি ও নিপীড়নে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। অবৈধ সরকারের লুটপাটের কারণে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে ফোকলা করে দেয়া হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, বিচার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। উন্নয়নের নামে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছেই। ব্যাংকে টাকা নেই, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নাই, পানি নেই, সবকিছুই যেন নেই আর নেই। এ অবস্থায় দেশের মানুষের বেঁচে থাকাই দায়। চারদিকে সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জনগণ। যেখানে বিএনপির কর্মসূচি সেখানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বিএনপির সমাবেশে মানুষের স্রোত দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকার। তাই পরিকল্পিতভাবে বিএনপির সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে সরকার। আমি পঞ্চগড়ে বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাচ্ছি সমবেদনা। আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করছি এবং অবিলম্বে হত্যার ঘটনার বিচার দাবি করছি এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেন, এছাড়াও আজ সকাল ১১টায় পিরোজপুরে কর্মসূচি পালন করতে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হতে থাকলে পুলিশ সরাসরি মিছিলে গুলি করে। পরে দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে। এ সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসা ছিলেন। তাকেও বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। পুলিশের গুলি ও হামলায় জেলা বিএনপির আহবায়কসহ ২০জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা করে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ও সাউন্ড গ্রেনেড চালায়। পুলিশের হামলায় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। আটক করে নিয়ে যায় ২৫/৩০ নেতা-কর্মীকে। নীলফামারী জেলা বিএনপির গণমিছিল দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। গতরাত থেকে মাগুরা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আহসান হাবীব কিশোরের বাসভবন পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। সেখান থেকে ২ জন বিএনপির কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। ফরিদপুরে গতরাতে ১২জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ পূর্ব নির্ধারিত গণমিছিলে পুলিশ ন্যক্কারজনকভাবে বাধা প্রদান করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নোয়াখালিতে গণমিছিলের প্রস্তুতি সভায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭জনকে আটক করে নিয়ে যায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সর্বস্তরের নেতারা প্রতিদিনই বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও বিষোদগার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। জনরোষ থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে এবং আন্দোলন থেকে জনগণকে দূরে রাখতে তাদের এ অপচেষ্টা সফল হবে না। আজও তারা নানা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অথচ জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা না দিয়ে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। ভোটচুরি, ডাকাতি এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে অনুগত প্রশাসন দিয়ে ব্যালটবাক্স ভর্তি করতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামী লীগের এখনকার শ্লোগান “আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব”। তারা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করার নামে আওয়ামীধীন করে ফেলেছে। ভোটের অধিকার হরণ করে দেশের মালিকানা কেড়ে নিয়ে গেছে। দেশকে দুর্নীতিবাজদের অভায়রণ্যে পরিণত করেছে। উন্নয়ন-মেগা প্রজেক্টের নামে জনগণের অর্থ লুপাট এবং বিদেশে পাচার করে দেশ-বিদেশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। গণতন্ত্র, মানবধিকার হরণ করে বিশ^বাসীর কাছে দেশের মর্যাদা বিনষ্ট করছে। বিদেশিরাই বলছে বাংলাদেশে তাদের নিরাপত্তা-সম্মান নেই। যে কারণে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কাবস্থা জারি করছে, তাদের রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্যদের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশকে সতর্ক করছে। এর জন্য বাংলাদেশের জনগণ নয়, ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারই দায়ী। দেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জনপ্রতিধিত্বশীল সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও নির্যাতন ও আওয়ামী নেতাদের মিথ্যাচার-বিষোদগারের তীব্র নিন্দা জানচ্ছি। পুলিশের গুলি, হামলা, বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির পূর্বঘোষিত গণমিছিল কমসূচি সফল করায় দেশবাসীসহ নেতা-কর্মীদের জানাচ্ছি অভিনন্দন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) মোঃ অবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ-সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ।